ভূমিকা:
ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে না পেরে ভূপৃষ্ঠের নীচেই ধীরে ধীরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে জমাট বেঁধে নানারকম ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আবরণী শিলা অপসারিত হলে ওইসব ভূমিরূপ গুলি ভূপৃষ্ঠে প্রকাশিত হয়। সাধারণত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট উদবেধী ভূমিরূপ ছয় ধরনের হয়। নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল –
1. ব্যাথোলিথ:
ভূগর্ভ থেকে উত্থিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে প্রকাশিত কয়েকশো বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গ্ৰানাইট শিলার বিশাল স্তূপকে ব্যাথোলিথ বলে। ব্যাথোলিথের কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে পড়লে আবহবিকার ও নগ্নীভবনের প্রভাবে বন্ধুর উচ্চভূমি বা টর গড়ে ওঠে।
যেমন – বিহার ও উড়িষ্যার সিংভূম গ্ৰানাইট উচ্চভূমি গঠন করেছে।
স্টক ও বস হল ব্যাথোলিথের ক্ষুদ্র রূপ। সাধারণত ম্যাগমা গহ্বরের অবশিষ্ট ম্যাগমা জমাট বেঁধে স্টকে পরিণত হয়। এটি অনেকটা প্লাগ গম্বুজের মত দেখতে হয়।
Read- নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা চিরহরিৎ অরণ্য সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন।
2. ফ্যাকোলিথ:
ভাঁজযুক্ত আঞ্চলিক শিলাস্তরে ঊর্ধ্বভঙ্গের শীর্ষে এবং অবতল আকারে অধোভঙ্গের নিম্নাংশে অবস্থিত সংগত আগ্নেয় উদবেধকে ফ্যাকোলিথ বলে। ফ্যাকোলিথের উত্তর অংশের উপর উচ্চভূমি গড়ে ওঠে।
যেমন – কর্ডন পর্বত (মন্টগোমারি)।
3. ল্যাকোলিথ:
ভাঁজহীন দুটি পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে উত্তল শীর্ষ ও প্রায় সমতল তলদেশ বিশিষ্ট আগ্নেয় উদবেধকে ল্যকোলিথ বলে। এটি সান্দ্র প্রকৃতির লাভা দ্বারা গঠিত হওয়ায় বেশি দূরে না ছড়িয়ে পড়ে একজায়গায় জমিটবদ্ধ হয়ে গম্বুজের আকারে সঞ্চিত হয়। ল্যাকোলিথের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে গম্বুজাকৃতি পাহাড় তৈরি হয়।
যেমন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি পর্বত।
খুব বেশি সান্দ্র লাভায় গঠিত ল্যাকোলিথের প্রান্তদেশ খুব খাড়া হয়। একে বিসমালিথ বলে।
Read- জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন(দ্বিতীয় ভাগ)।
4. লপোলিথ:
শিলার স্থানীয় গঠনের সমান্তরালে বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে অবস্থিত অগভীর সরার মতো অর্থাৎ অবতল প্রকৃতির আগ্নেয় উদবেধকে লপোলিথ বলে। লপোলিথের প্রভাবে অবনত ভূমির সৃষ্টি হয়। ল্যাকোলিথের তুলনায় লপোলিথগুলি প্রকান্ড আকারের হয়।
যেমন – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ডুলুথ, গ্যাব্রো ইত্যাদি।
5. সিল:
পাললিক শিলাস্তর বা অন্য কোনো গঠন তলের সমান্তরালে অবস্থিত পাত বা চাদরের মতো সংগত আগ্নেয় উদবেধকে সিল বলে। নগ্নীভবনের ফলে অনুভচমিক ভাবে অবস্থিত সিল ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে পড়লে এর উপরিভাগে ধাপ এবং প্রান্তে খাড়া ঢাল তৈরি হয়। এই ঢালের উপর জলপ্রপাত গঠিত হতে পারে।
Read- নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে মৎস্য ক্ষেত্র গুলির বিকাশ লাভ বা উন্নতির কারণ শেখ।
6. ডাইক:
শিলাস্তরের অসমান্তরালে অবস্থিত নল বা চোঙের মতো উল্লম্ব অথবা তির্যক আগ্নেয় উদবেধকে ডাইক বলে। যদি বাইকের ক্ষয় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে তাহলে ভূপৃষ্ঠে দীর্ঘ শৈলশিরার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ডাইক যদি দুর্বল হয়, সেক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠে দীর্ঘ খাতের সৃষ্টি হয়। সাধারণত ডলেরাইট ও ডায়োরাইট শিলায় ডাইক গঠিত হয়।
যেমন – রানিগঞ্জে কয়লা স্তরের মধ্যে ডাইক দেখা যায়।
এই ভাগ গুলি ছাড়াও আরও অনেকগুলো ভাগ আছে। তবে সেগুলি নিঃসারী ভূমিরূপের মধ্যে পড়ে। পরবর্তীতে আমরা সেই ভাগগুলি সম্পর্কেও আলোচনা করব।
This post was updated on 2023-02-22 17:58:14.