অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট নিঃসারী ভূমিরূপের চিত্রসহ বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
ভূমিকা:
অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ লাভা, ছাই, ভস্ম ইত্যাদি বেড়িয়ে এসে শীতলীভবনের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে জমাট বেঁধে বিভিন্ন রকম ভূমিরূপ গঠন করে। এই ভূমিরূপ গুলিকে নিঃসারী ভূমিরূপ বলে।
এই বেড়িয়ে আসার প্রকৃতিভেদে এই জাতীয় ভূমিরূপকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
A. উন্নীত ভূমিরূপ:
এরা ভূপৃষ্ঠের আপেক্ষিক উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়, তাই এদের ধনাত্মক ভূমিরূপ বলে। এরা বিভিন্ন আকৃতির আগ্নেয়গিরি গঠন করে। নীচে আলোচনা করা হল –
1. সিন্ডার বা ভস্ম শঙ্কুবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি:
জ্বালামুখের চারপাশে পাইরোক্লাস্ট, আগ্নেয় ভস্ম ও ধূলিকণা সঞ্চিত হয়ে শঙ্কুবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- এই জাতীয় শঙ্কু স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট এবং শঙ্কুর ঢাল 30° থেকে 40° এর বেশি হয় না।
- জ্বালামুখের চারপাশে পাইরোক্লাস্ট, ভস্ম, স্থূল ও সূক্ষ্ম পদার্থ সমূহ ক্রমশ জমাট বেঁধে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা বাড়ায়।
- স্থূল পদার্থে গঠিত শঙ্কুর ঢাল সূক্ষ্ম পদার্থে গঠিত শঙ্কুর ঢাল অপেক্ষা বেশি হয়।
2. শিল্ড বা ক্ষারকীয় লাভা গঠিত আগ্নেয়গিরি:
ভূপৃষ্ঠের ছিদ্রপথে সাধারণত কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে তরল লাভা ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসে এবং ছিদ্রপথের চারিদিকে ওই লাভা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ও সঞ্চিত হয়ে লাভাগঠিত আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে। এই লাভা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হলে ভূমিরূপ চ্যাপ্টা ও কম খাড়াই হয় এটি ঢালের মতো দেখতে হয় বলে একে শিল্ড আগ্নেয়গিরি বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এই লাভা গঠিত আগ্নেয়গিরি চ্যাপ্টা ও কম খাড়াই হয়।
- এদের ঢাল 10° এর কম থাকে।
- এর উপরিভাগ মসৃণ উত্তল পার্শ্বচিত্রের ন্যায় হয়।
- কোনো রকম ট্যালাস বা পাইরোক্লাস্ট জাতীয় পদার্থ থাকে না।
3. আম্লিক লাভায় গঠিত গম্বুজাকৃতি আগ্নেয়গিরি:
বৈশিষ্ট্য:
- এই ভূমিরূপের ঢাল খুবই খাড়া প্রকৃতির হয়।
- লাভাগম্বুজ সরার মতো উল্টানো ও স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট হলে তাকে কিউমুলো গম্বুজ বলে।
- স্তম্ভের আকারে জমাট লাভা ভূমি থেকে উঁচুতে অবস্থান করলে তাকে প্লাগ গম্বুজ বলে।
4. স্তর আগ্নেয়গিরি ও বিমিশ্র শঙ্কুবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি:
বহুদিন ধরে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নিক্ষিপ্ত লাভা, ভস্ম, পাইরোক্লাস্ট, প্রস্তরখন্ড প্রভৃতি জ্বালামুখের চারপাশে জমা হয় ও পরে লাভাপ্রবাহ এসে এদের উপর পড়ে পর্যায়ক্রমে স্তর গঠনের মাধ্যমে যে জ্বালামুখ বিশিষ্ট শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয় তাকে স্তর আগ্নেয়গিরি বলে।
স্তর আগ্নেয়গিরিতে একাধিক শঙ্কু চিহ্ন বর্তমান থাকলে তাকে বিমিশ্র শঙ্কু বলে।
যেমন – জাপানের ফুজিয়ামা।
5. লাভা মালভূমি:
বিদার অগ্ন্যুৎপাতে অতি তরল ব্যাসল্ট লাভা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে প্রবাহিত হয় ও জমাট বেঁধে লাভা মালভূমি গঠন করে।
যেমন – ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
6. বিস্ফোরণ ছিদ্রপথ বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি:
আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণের ফলে প্রথমে একটি ছিদ্রপথের সৃষ্টি হয় এবং একটি নীচু জ্বালামুখ তৈরী হয়।পরে ওই জ্বালামুখের চারিদিকে খন্ডিত শিলা সঞ্চিত হয়ে খুবই কম উচ্চতা বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি তৈরী হয়।
এই আগ্নেয়গিরিতে একটিমাত্র নীচু জ্বালামুখ থাকে। তরল লাভা নির্গত হয়ে জ্বালামুখের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
যেমন – আইসল্যান্ডের ক্রাফলা।
7. প্লাগডোম ও থোলয়ড:
জ্বালামুখের মধ্যে লাভা জমাট বেঁধে যে কঠিন স্তম্ভ তৈরি করে তাকে প্লাগডোম বলে।
প্লাগডোমের মাথা চওড়া ছাতার মতো হলে তাকে থোলয়েড বলে।
যেমন – মাউন্ট ফিলি আগ্নেয়গিরিতে এগুলি দেখা যায়।
8. হর্নিটো:
লাভা অত্যধিক ঠান্ডা হয়ে জমাট বাঁধার পর যে খাড়া পার্শ্বঢালের শঙ্কু গড়ে ওঠে, তাকে হর্নিটো বলে।
9. লাভাক্ষেত্র:
লাভায় ঢেকে যাওয়া বিস্তীর্ণ এলাকাকে লাভাক্ষেত্র বলে।
পা হো হো ধরনের লাভার দ্বারা সৃষ্ট লাভাক্ষেত্রের উপরিভাগ প্রায় মসৃণ হয়।
কিন্তু আ আ ধরনের লাভা সঞ্চিত হয়ে এবড়োখেবড়ো লাভাক্ষেত্র তৈরি করে।
B. অবনত ভূমিরূপ:
1. জ্বালামুখ বা ক্রেটার:
আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গম নলের বাইরের যে খোলামুখ দিয়ে লাভা, গ্যাস, বাষ্প প্রভৃতি বেড়িয়ে আসে সেই মুখকে জ্বালামুখ বা ক্রেটার বলে। এটি ফানেলের মতো দেখতে হয়, মুখটি খাড়া দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকে। এর ব্যাস কয়েক মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। জ্বলামুখের আকৃতি বলয়ের মতো।
জ্বালামুখ তিন ধরনের হয়। যথা –
a. কিনারা বা কানা উঁচু জ্বালামুখ:
b. বিস্ফোরিত জ্বালামুখ:
c. নিমোজ্জিত বা ধস জ্বালামুখ:
2. ক্যালডেরা:
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় তীব্র বিস্ফোরণ বা ধসের ফলে আগ্নেয় শঙ্কুর মস্তক বা ঊর্ধ্বাংশ অপসারিত হয়ে যে অগভীর, অবনমিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়, তাকে ক্যালডেরা বলে।
সাধারণত ক্যালডেরার ব্যাস 15 থেকে 25 কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। এর আকৃতি বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার হয়।
যেমন – ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির চূড়ায় ক্যালডেরা দেখা যায়।
This post was updated on 2023-02-22 17:58:07.