ভূমিকা:
অগ্ন্যুৎপাতকে উৎপত্তি, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- ম্যাগমা ও লাভার অবস্থান অনুসারে
- অগ্ন্যুৎপাতের প্রণালী বা লাভা নির্গম পথের বৈশিষ্ট্য অনুসারে
ম্যাগমা ও লাভার অবস্থান অনুসারে:
ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বমুখী ম্যাগমার প্রবাহ ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয় অথবা ভূত্বকে আবদ্ধ হয়ে থাকে। আর ম্যাগমা ও লাভার এই অবস্থান অনুসারে এটি দুধরনের। যথা –
1. নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাত:
লাভা যখন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা শিলার ফাটল বা চ্যুতি বরাবর ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসে, তখন তাকে নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাত বলে। নিঃসারী অগ্নুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠে আগ্নেয় ভূমিরূপ তৈরি হয়।
2. উদবেধী ভূমিরূপ:
ঊর্ধ্বমুখী ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে নির্গত না হয়ে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি ভূগর্ভে যখন আবদ্ধ অবস্থায় থাকে, তখন তাকে উদবেধী অগ্ন্যুৎপাত বলে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূগর্ভে তপ্ত অঞ্চল বা Hotspot বলে।
অগ্ন্যুৎপাতের প্রণালী বা লাভা নির্গম পথের বৈশিষ্ট্য অনুসারে:
অগ্ন্যুৎপাতের প্রণালী বা লাভা নির্গম পথের বৈশিষ্ট্য অনুসারে অগ্ন্যুৎপাত তিন ধরনের। যথা –
A. কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত:
ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে ম্যাগমা যখন আগ্নেয়গিরর প্রধান জ্বালামুখ এবং একাধিক গৌণ জ্বালামুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত বলে। কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত 7 ধরনের। যথা –
1. হাওয়াই শ্রেণী:
এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ,আইস-ল্যান্ড, সামোয়া ইত্যাদি দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে লক্ষ্য করা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
- ব্যাসল্ট জাতীয় ক্ষারকীয় লাভা নির্গত হয়।
- উষ্ণ ও তরল লাভা নির্গত হয়।
- জ্বালামুখে লাভা হ্রদ সৃষ্টি হয়।
- বিস্ফোরণ ঘটে না। ধীরভাবে লাভা ও গ্যাস বুদবুদ সৃষ্টি করে বেরিয়ে আসে।
- গ্যাসের সঙ্গে নির্গত লাভা ঝড়ো হাওয়ার টানে সরু সুতোর মতো আকৃতি ধারণ করে, একে পিলির চুল বলে।
2. স্ট্রম্বলীয় শ্রেণী:
ভূমধ্যসাগরের লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বলি আগ্নেয়-গিরির নাম অনুসারে এই প্রকার অগ্ন্যুৎপাতের নামকরণ করা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- ক্ষারকীয় লাভা নির্গত হয়।
- অগ্ন্যুৎপাতের সময় বিস্ফোরণ হয়।
- একটানা অগ্ন্যুৎপাত হয় না। কিছুদিন অন্তর অন্তর বা কখনো কখনো 10 বা 15 মিনিট অন্তর অগ্ন্যুৎপাত হয়।
- লাভা সান্দ্রো ও কম সচল হয়।
- অগ্ন্যুৎপাতে লাভা ছাড়াও প্রচুর গ্যাস, পিউনিস, স্ফোরিয়া প্রভৃতি উৎক্ষিপ্ত হয়।
- অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত প্রজ্বলিত গ্যাস বহুদূর থেকে নিয়মিত দেখা যায় বলে একে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলে।
3. ভলক্যানীয় শ্রেণী:
বৈশিষ্ট্য:
- এক্ষেত্রে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ও পাইরোক্লাস্ট সহযোগে অগ্ন্যুৎপাত হয়।
- লাভা ক্ষারকীয়, অধিক সান্দ্র প্রকৃতির ও দ্রুত জমাট বাঁধে। বেশিদূর প্রবাহিত হতে পারে না।
- আগ্নেয়গিরি থেকে অনেক দিন বাদে বাদে অগ্ন্যুৎপাত হয়।
- অগ্ন্যুৎপাতের সময় প্রচুর ভস্ম, গ্যাস, বাষ্প প্রভৃতি একসাথে নির্গত হয়ে ফুলকপির মতো গাঢ় কালো মেঘ সৃষ্টি হয়।
4. ভিসুভিয়াস ও এটনা শ্রেণী:
ইটালির এটনা, ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি থেকে এ ধরনের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
বৈশিষ্ট্য:
- লাভা অতি সান্দ্রো ও দ্রুত জমাট বাঁধে।
- লাভার উষ্ণতা 800°C-1000°C হয়।
- প্রবল বিস্ফোরণ বা বরাবর ভূকম্পনের সময় শীর্ষদেশ টি চূর্ণবিচূর্ণ হয়।
- আগ্নেয়গিরি থেকে কয়েক দশক অন্তর অন্তর অগ্ন্যুৎপাত হয়।
- ল্যাপিলি, পিউনিস, গ্যাস , ভস্ম প্রভৃতি নির্গত হয়ে ওক গাছের মতো মেঘ সৃষ্টি হয়।
5. প্লিনি শ্রেণী:
বৈশিষ্ট্য:
- প্রচন্ড বিস্ফোরণসহ বিধ্বংসী অগ্ন্যুৎপাত হয়।
- গ্যাস ও পাইরোক্লাস্ট পদার্থ জ্বালামুখ থেকে আকাশে বহুদূর উঠে যায়।
- লাভা কম পরিমাণে নির্গত হয়।
- প্রচন্ড পরিমানে বিস্ফোরণ গ্যাস নির্গত হয়, ভস্মের পরিমাণ কম থাকে।
6. পিলি শ্রেণী:
বৈশিষ্ট্য:
- ভয়াবহ ও বিধ্বংসী অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
- লাভা অতিমাত্রায় সান্দ্র, জ্বালামুখে এলে সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায় ও সমস্ত ছিদ্রপথ বন্ধ করে দেয়।
- প্রচন্ড বিস্ফোরণে প্রচুর পরিমাণে উত্তপ্ত গ্যাস, বাষ্প, জ্বলন্ত ভস্ম ও শিলাচূর্ণ প্রভৃতি আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নেমে আসে, একে ন্যুয়ে আর্দেন্তি বলে।
- নির্গত লাভা রায়োলাইট, অ্যান্ডসাইট প্রকৃতির হয়।
7. ক্রাকাতোয়া শ্রেণী:
বৈশিষ্ট্য:
- অগ্ন্যুৎপাতের সময় অতি ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়।
- লাভা খুব কম নির্গত হয়।
- প্রচুর গ্যাস ও ভস্ম মিশ্রিত উত্তপ্ত রাঙা মেঘ তৈরি হয়।
- বিস্ফোরণ জ্বালামুখ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়ে ক্যালডেরায় পরিণত হয়।
B. বিদার অগ্ন্যুৎপাত:
ভূপৃষ্ঠের কোনো দুর্বল স্থান, যথা – ফাটল, চ্যুতি দিয়ে ভূঅভ্যন্তরের লাভা যখন নিঃশব্দে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এসে ভূপৃষ্ঠকে ঢেকে দেয়, তখন তাকে বিদার অগ্ন্যুৎপাত বলে।
উদাহরণ – ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, পূর্ব আফ্রিকার গ্ৰস্ত উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চলে এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
C. মিশ্র অগ্ন্যুৎপাত:
লাভা এবং বাষ্প মিশ্রিত অগ্ন্যুৎপাতকে মিশ্র অগ্ন্যুৎপাত বলে। উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসার আগে ভূগর্ভে কোনো জলস্তর বা অ্যাকুইফার এর সংস্পর্শে আসে। ভূগর্ভস্থ জল বাষ্পে পরিণত হয়, ফলে ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে আসার জন্য ভূত্বকে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে এবং লাভা, বাষ্প ও পাইরোক্লাস্ট সহ একত্রে বেড়িয়ে আসে।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:27.