অতিরিক্ত জলসেচের অসুবিধাগুলি লেখ।

অতিরিক্ত জলসেচের অসুবিধাগুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। 

অতিরিক্ত জলসেচের অসুবিধাগুলি

ভূমিকা:

কখনো কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত জলসেচ শস্যের বিপদ ডেকে আনে। জলের পরিমাণ বেশি হলে মাটির ছিদ্রগুলি পূর্ণ হয়ে মাটি সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে। এরফলে মাটির মধ্যে বায়ু চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং অবশেষে মাটির উপরে জল দাঁড়িয়ে যায়। এইজন্য অতিরিক্ত জলসেচের কতগুলি কুপ্রভাব দেখা যায়। যথা –

A. প্রত্যক্ষ অসুবিধা:

1. বায়ু চলাচলের অভাব:

                মাটির ভিতরে অনেক বায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা জটিল নাইট্রোজেন জাতীয় যৌগকে ভেঙে সরল যৌগে পরিণত করে গাছের পুষ্টির যোগান দেয়। তাই এদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন দরকার। কিন্তু মাটিতে জল জমে থাকলে বায়ু চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়া মারা পড়ে। গাছ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না ফলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়।

2. আগাছা ও জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি:

               মাটিতে জল জমে থাকলে কৃষি ক্ষেত্র জলা-ভূমিতে পরিণত হয়। এই ধরনের জলাভূমিতে আগাছা জলজ উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এরা মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে ফলে শস্যের খাদ্যের অভাব হয়। শস্য নষ্ট হয়ে যায়।

3. মাটির তাপমাত্রা হ্রাস:

          জল জমে থাকায় মাটির ভিতরে উষ্ণতা কমে যায় ফলে কম উষ্ণতায় উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কাজকর্ম ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে যায়। ফলস্বরূপ উদ্ভিদ পরিমাণ মতো খাদ্য ঠিক সময়ে পায়না।

4. রোগগ্রস্ততা:

 কম তাপমাত্রা ও দুর্বল বায়ু চলাচলের জন্য উদ্ভিদ সহযয়েই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এর ফলে শস্য হানি ঘটে।

5. শিকড়ের সীমিত বৃদ্ধি:

                জল সংগ্রহের জন্য গাছের শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে কিন্তু জলস্তর উপরে উঠে এলে শিকড়ের বৃদ্ধি কেবলমাত্র মাটির উপরিস্তরেই আবদ্ধ থাকে। ফলে গাছ ঠিকমতো পুষ্টি পায় না।

6. চাষবাসের অসুবিধা:

             জমিতে জল জমে থাকলে মাটিকে উপর নিচ করা, লাঙ্গল চালানো ইত্যাদি কাজ করা কষ্টকর হয়। 

7. জল দূষণ:

             মাটিতে জল সেচের মাধ্যমে বেশি জল দিলে কীটনাশক, সার ইত্যাদি জলের সঙ্গে ধুঁয়ে কাছাকাছি অবস্থিত খাল, বিল, নদী, পুকুর ইত্যাদিকে দূষিত করে।

8. উপকারী প্রাণীর বিনাশ:

         মাটিতে অতিরিক্ত জল দিলে কেঁচো, ব্যাকটেরিয়ার মত যে প্রাণীগুলি গাছের উপকার করে তাদের মৃত্যু হয়।

9. মাটিতে নাইট্রেট এর পরিবর্তন:

              অতিরিক্ত জলসেচের প্রভাবে মাটির নাইট্রেট নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড ও নাইট্রোজেন গ্যাস তৈরি হয়। এগুলি উদ্ভিদ কাজে লাগাতে পারে না। ফলে উদ্ভিদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয় অসুবিধা।

B. পরোক্ষ অসুবিধা:

1. লবণ সঞ্চয়:

             মাটিতে জল জমা হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার দ্রবীভূত লবণ (সোডিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট ইত্যাদি) বাষ্পীভবনের সাথে সাথে মাটির উপরে চলে আসে এবং সঞ্চিত হয়। অতিরিক্ত লবণ জমা হলে তা মাটিকে ক্ষারকীয় করে দেয়। এতে উদ্ভিদের ফলন হ্রাস পায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

2. ভৌমজলের ঘাটতি:

               মাটি থেকে জল তুলে সেচ কাজ বেশি করলে ভৌম জলের স্তর কমে যায়। ফলে পানীয় জলের সংকট দেখা যায়। 

3. উদ্ভিদের মৃত্যু:

             অতিরিক্ত জল সেচের ফলে উদ্ভিদের শিকড় জল পায় না ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধির হার কমে যায় ও গাছের অপমৃত্যু হয়।

 4. আর্সেনিক দূষণের আশঙ্কা:

           পাললিক শিলাগঠিত অঞ্চলে ১০০ মিটার বা তার চেয়ে কম গভীর এলাকায় অবস্থিত ভৌমজলে দ্রবীভূত আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকে। আর্সেনিক দূষণের প্রভাবে মানুষের ত্বক, নখ, চুলে আর্সেনিক সঞ্চিত হয়ে চর্মরোগ হয়, ক্যান্সার হয়, যকৃৎ ও ফুসফুসের রোগ হয়। হাত ও পায়ের পাতায় কালো কালো ঘা হয়, ডাক্তারি পরিভাষায় একে ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ বলে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!