অর্থনৈতিক কার্যাবলী:
জীবনধারণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত থেকে সম্পদ উৎপাদন বন্টন বিনিময় ব্যবহার ও পরিষেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মানুষের বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপকে অর্থনৈতিক কার্যাবলী বলে।
যেমন – কৃষিকাজ মোটরগাড়ি নির্মাণ বীমা পরিষেবা প্রদান ইত্যাদি।
শ্রেণীবিভাগ:
অর্থনৈতিক কার্যাবলী কে প্রধানত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- প্রাথমিক স্তর বা Primary Sector
- দ্বিতীয় স্তর বা Secondary Sector
- তৃতীয় স্তর বা Tertiary Sector
- নব্য স্তর বা চতুর্থ স্তর বা Quaternary Sector
- অতিনব্য স্তর বা পঞ্চম স্তর বা Quinary স্তর
1. প্রাথমিক স্তর বা Primary Sector:
সাধারণত প্রাথমিক চাহিদা অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ যে কার্যাবলী গ্ৰহন করে তাকে প্রাথমিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী বলে।
উদাহরণ – কৃষিকাজ, পশুপালন, বনজ সম্পদ সংগ্রহ, মৎস্য চাষ, মৎস্য শিকার, খনিজ উত্তোলন প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:
- এর মাধ্যমে মানুষের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ হয়।
- এটি প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত।
- এটি প্রাচীনতম অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ।
- এটি মূলত গ্ৰামভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী।
- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জীবিকা এটি।।
- এই কাজে নিযুক্ত শ্রমিকগোষ্ঠীকে ‘লাল পোশাকের শ্রমিক’ বা ‘Red collar workers’ বলে।
2. দ্বিতীয় স্তর বা Secondary Sector:
যেসব কাজের দ্বারা প্রাথমিক ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত দ্রব্যের বা কাঁচামালের আকৃতিগত রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে অধিকতরক কার্যকরী, ব্যবহারযোগ্য ও মূল্যবান পণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে দ্বিতীয় স্তরের কার্যাবলী বলে।
উদাহরণ – শ্রমশিল্প, প্রক্রিয়াকরণ, দ্রব্যের রূপান্তর করণ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- এই ধরনের অর্থনৈতিক কাজে শ্রম শিল্পের মাধ্যমে দ্রব্যের রূপান্তর ঘটে।
- দ্রব্যের গুণগত মান ও ব্যবহারযোগ্যতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
- এই উপজীবিকা মূলত নগর ভিত্তিক।
- বহু ক্ষেত্রেই এই কার্যাবলী পরিবেশ দূষণ ঘটায়।
- এই কাজে দেশের অগ্রগতির দ্রুত বিকাশ লাভ করে।
- এই ধরনের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের ‘নীল পোশাকের শ্রমিক’ বা ‘Blue collar workers’ বলে।
3. তৃতীয় স্তর বা Tertiary Sector:
প্রাথমিক ও দ্বিতীয় স্তরের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে মানুষ যেসব কার্যকলাপের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শ্রমগত ও দক্ষতার পরিষেবা দেয়, তাদের পরিষেবামূলক বা তৃতীয় স্তরের বা Tertiary কার্যাবলী বলে।
উদাহরণ – ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ, নির্মাণ, বিপনন, পর্যটন ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- এই কাজ প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
- এই কাজ দ্বারা সাধারণ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিষেবা প্রদান করা হয়।
- খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতা, দর্জি, মুচি, রাজমিস্ত্রি, বিউটিশিয়ান, দোকানদার প্রভৃতি কর্মীর কার্যাবলী এই প্রকারের।
- এই স্তরের অর্থনৈতিক কার্যাবলীতে নিযুক্ত শ্রমিককে ‘Pink collar workers’ বলে।
4. চতুর্থ স্তর বা নব্য স্তর বা Quaternary Sector:
তৃতীয় শ্রেণীর অর্থনৈতিক কার্যাবলী যখন আরো উন্নত আকারের হয় তখন তাকে চতুর্থ স্তরের কার্যাবলী বলে।
উদাহরণ – তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, ব্যাংক ও বীমা, বিজ্ঞাপন ও প্রচার, বিনোদন ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- ইহা তথ্য আদান প্রদান, সংগ্রহ ও বিনিময় মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
- এটি উচ্চ পর্যায়ের কার্যাবলী।
- মননশীল কাজের প্রাধান্য বেশি।
- এই কাজে নিযুক্ত কর্মীদের ‘সাদা পোশাকের কর্মী’ বা ‘White collar workers’ বলে।
5. পঞ্চম স্তর বা অতীনব্য স্তর বা Quinary Sector:
বিশেষ মানবিক দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু কাজকর্মকে পঞ্চম স্তর বা অতিনব্য স্তর বা Quinary কার্যাবলী বলে।
উদাহরণ – অতি উচ্চ পদে আসীন পরিচালক, নির্বাহী আধিকারিক বা এক্সিকিউটিভ অফিসার, বৈজ্ঞানিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপগ্রহ পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং, জিআইএস সম্পর্কিত কাজ, পরামর্শদাতা, নীতি প্রণেতা ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- এই কাজ অতি উচ্চমানের এবং সম্প্রতিককালে বিকাশ লাভ করেছে।
- অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজ অপেক্ষা এই কাজে নিযুক্ত কর্মী সংখ্যা খুবই কম।
- এই স্তরের কাজে বেশি জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রয়োজন হয় বলে এই কাজে নিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধির ভান্ডার বা Think Tank নামে সুপরিচিত হয়।
- এই কাজে নিযুক্ত কর্মীরা ‘সোনালী পোশাকের কর্মী’ বা ‘Gold collar workers’ বলে।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:25.