আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল।ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এগুলি তোমাদের সাহায্য করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী


আবহাওয়া বলতে কী বোঝায়?

কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘাচ্ছন্নতা প্রভৃতি অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

জলবায়ু কাকে বলে?

কোনো অঞ্চলের প্রায় 30 থেকে 35 বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা কে ওই অঞ্চলের জলবায়ু বলে।

      কোনো অঞ্চলের জলবায়ু বছরের পর বছর প্রায় একই থাকে। যেমন- পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখ।

  • আবহাওয়া কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উপাদানের অবস্থা।

                          আবার জলবায়ু হল কোনো অঞ্চলের 30-35 বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা।

  • আবহাওয়া প্রতিদিন এমন কী প্রতি মুহূর্তে বদলায়।

                     আবার,   জলবায়ু প্রতিদিন বদলায় না।

  • আবহাওয়া স্বল্প পরিসরে পরিবর্তিত হয়।

                        আবার জলবায়ু বিস্তৃত অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রধান উপাদান কি কি?

আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রধান উপাদান হল –

  •   বায়ুর উষ্ণতা
  • বায়ুর আর্দ্রতা
  • বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ
  •  মেঘাচ্ছন্নতা 
  • অধঃক্ষেপণ

বায়ুর উষ্ণতা:

            সূর্য রশ্মির ২০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ মাত্র পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। একে বলা হয় ‘ Insolation'( Incoming Solar Radiation) বা ‘আগত সৌর বিকিরণ’। 

আগত সৌর বিকিরণের ১০০ শতাংশ ধরলে, তার মাত্র ৫১ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। তাই একে বলে ‘কার্যকরী সৌর বিকিরণ’। 

 বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ মহাশূন্যে ফিরে যায়। একে বলে ‘ অ্যালবেডো’

বাকি ১৪ শতাংশ বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাস, জলীয়বাষ্প, ধুলিকণা দ্বারা শোষিত হয়। যে ৫১ শতাংশ তাপ পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়, তার প্রায় পুরোটাই বিকিরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। একে ‘পার্থিব বিকিরণ’ বলে।

বায়ুমন্ডল কতরকম ভাবে উত্তপ্ত হয়?

  বায়ুমন্ডল তিন রকম পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। যথা-

  • বিকিরণ পদ্ধতি
  • পরিবহন পদ্ধতি
  • পরিচলন পদ্ধতি   

 দৈনিক উষ্ণতার প্রসর বা পার্থক্য কাকে বলে?   

কোনো স্থানের এক দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হল সেই স্থানের দৈনিক উষ্ণতার প্রসর বা পার্থক্য।

 কোনো স্থানের শীতলতম ও উষ্ণতম মাসের তাপমাত্রার পার্থক্য হল গড় বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর।

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা মাপার যন্ত্রের নাম কি?

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা মাপার যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।

দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কি?

দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম হল সিক্স-এর থার্মোমিটার।

বায়ুর আর্দ্রতা কাকে বলে?

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে ঐ বায়ুর আর্দ্রতা বলে।

বায়ুর আর্দ্রতা মাপক যন্ত্রের নাম কি?

বায়ুর আর্দ্রতা মাপক যন্ত্রের নাম হাইগ্ৰোমিটার।

বায়ুর চাপ মাপক যন্ত্রের নাম কি?

বায়ুর চাপ মাপক যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার।

বায়ুপ্রবাহের দিক মাপা হয় কোন যন্ত্রের সাহায্যে?

বায়ুপ্রবাহের দিক মাপা হয় বাতপতাকার সাহায্যে।

বায়ুর গতিবেগ মাপক যন্ত্রের নাম কি?

বায়ুর গতিবেগ মাপক যন্ত্রের নাম অ্যানিমোমিটার।

✓ আকাশে মেঘের পরিমাণের পরিমাপই হল মেঘাচ্ছন্নতা।

ঘনীভবন কাকে বলে?

জলীয়বাষ্প যুক্ত বাতাস হালকা বলে ওপরের দিকে উঠে যায়। ওপরের বায়ুর উষ্ণতা ও চাপ দুটি কম থাকায় জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে ছোটো ছোটো জলকণায় পরিণত হয়। একে ঘনীভবন বলে।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপার যন্ত্রের নাম কি?

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপার যন্ত্রের নাম রেনগজ।

সমোষ্ণরেখা কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।

পৃথিবীর মানচিত্রে সমান গড় উষ্ণতা যুক্ত স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • দুটি জায়গার মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য বেশি হলে সমোষ্ণরেখাগুলি কাছাকাছি ও উষ্ণতার পার্থক্য কম হলে সমোষ্ণরেখাগুলি দূরে দূরে অবস্থান করে।
  • উত্তর গোলার্ধের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় এই গোলার্ধে সমোষ্ণরেখাগুলি দূরে অবস্থান করে।
  • সমোষ্ণরেখা কাছাকাছি অবস্থান করলেও কখনো পরস্পরকে ছেদ করে না।

পৃথিবীর তাপমন্ডল বা তাপ অঞ্চলকে কটি ভাগে ভাগ করা যায়?

পৃথিবীর তাপমন্ডল বা তাপ অঞ্চলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – 

1. উষ্ণমণ্ডল:

              নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মাঝের অঞ্চল হল উষ্ণমণ্ডল। সূর্য রশ্মি সারা বছর লম্বভাবে পড়ে। পৃথিবী পৃষ্ঠ সবথেকে বেশি উত্তপ্ত হয়।

2. নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল:

                কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে সুমেরু বৃত্ত রেখা এবং মকরক্রান্তি  রেখা থেকে কুমেরু বৃত্ত রেখার মাঝের অঞ্চল হল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল। এখানে সূর্য রশ্মি তির্যকভাবে পড়ায় এই অঞ্চল উষ্ণমণ্ডলের তুলনায় কম উত্তপ্ত হয়।

3. হিমমন্ডল:

              সুমেরু বৃত্ত থেকে উত্তর মেরু এবং কুমেরু বৃত্ত থেকে দক্ষিন মেরুর মাঝের অঞ্চল হল হিমমন্ডল। সূর্য রশ্মি সারাবছর বেশি তির্যকভাবে পড়ায় এই অঞ্চল সবচেয়ে কম উত্তপ্ত হয়। সারাবছর ধরে বেশ ঠাণ্ডা থাকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!