ইউরোপ মহাদেশের রূঢ় শিল্পাঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

 ইউরোপ মহাদেশের রূঢ় শিল্পাঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ইউরোপ মহাদেশের রূঢ় শিল্পাঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

রূঢ় শিল্পাঞ্চল কাকে বলে? 

ইউরোপ মহাদেশের উত্তর-মধ্য অংশে পশ্চিম জার্মানির রাইন ও তার দুই উপনদী রূঢ় ও লিপের সংযোগস্থলে কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চল, ‘রূঢ় শিল্পাঞ্চল’।

✓ এই শিল্পাঞ্চলটির আয়তন 4600 বর্গকিলোমিটার।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলের সীমানা লেখ।

এই শিল্পাঞ্চলের উত্তরে লিপে নদী, দক্ষিণে রূঢ় ও পশ্চিমে রাইন নদীর প্রবাহিত হয়েছে। আর পূর্ব সীমানায় রয়েছে সায়ারল্যান্ড উচ্চভূমি।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ আলোচনা কর।

1. ভূ-প্রকৃতি:

              হিমবাহ ও নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে রূঢ় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার ভূপ্রকৃতি সামান্য ঢেউখেলানো। এই অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে ছোটো ছোটো টিলা দেখা যায়। সমগ্ৰ অঞ্চলটির গড় উচ্চতা প্রায় 240 মিটার।

2. নদনদী:

              রূঢ় অঞ্চলের প্রধান নদী রাইন নদী। এই নদীটি দক্ষিণে কোলন শহরের কাছে রূঢ় অঞ্চলে প্রবেশ করে পশ্চিম সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়েছে। রূঢ় ও লিপে নদী দুটি এই অঞ্চলের পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে এসে রাইন নদীতে মিশেছে।

3. জলবায়ু:

              রূঢ় অঞ্চলের জলবায়ু শীতল নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। গ্ৰীষ্মকালে উষ্ণতা মাঝারি এবং শীতকাল বেশ শীতল। পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এখানে সারাবছরই বৃষ্টিপাত হয়। যদিও  পরিমাণে তার কম। গ্ৰীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 15° থেকে 20°C এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 2° থেকে 5°C এবং গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 থেকে 70 সেমি।

4. স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

              রূঢ় শিল্পাঞ্চলে শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। সরলবর্গীয় বৃক্ষের মধ্যে পাইন, ওক, এলম, ফার, বার্চ, বিচ প্রভৃতি বৃক্ষ উল্লেখযোগ্য।

5. মৃত্তিকা:

           রূঢ় শিল্পাঞ্চলে নদী পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে উর্বর পলিমাটি দেখা যায়। দক্ষিণে চার্নোজেম ও উত্তরে পডসল মাটি দেখা যায়।

Read- ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলের খনিজ সম্পদের বিবরণ দাও।

          রূঢ় শিল্পাঞ্চলের প্রধান খনিজ সম্পদ হল কয়লা। এই অঞ্চল কয়লা উত্তোলনে ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। রাইন, রূঢ় ও লিপে নদীর মাঝের অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে অ্যানথ্রাসাইট ও বিটুমিনাস জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের কয়লা পাওয়া যায়। যা এই অঞ্চলের শিল্পায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের প্রধান কয়লা খনির নাম ‘ওয়েস্ট ফ্যানিয়া’। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় আকরিক লোহা, খনিজ তেল স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলের কৃষি পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে।

             রূঢ় শিল্পাঞ্চলের মৃত্তিকা কৃষি অনুপযোগী। এই অঞ্চল প্রধানত শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে কৃষির পরিমাণ ও গুরুত্ব দুটোই কম। এখানে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের উর্বর পলিমাটিতে গম, যব, ভূট্টা, বীট, আলু প্রভৃতি চাষ করা হয়। রূঢ় অঞ্চলে শহরের পাশাপাশি খামার গুলিতে মিশ্র কৃষি পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য, ফল, ফুল চাষের সঙ্গে পশুপালন এবং দুধ, মাংস প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলে শিল্পোন্নতির কারণগুলি লেখ।

               রূঢ় শিল্পাঞ্চল ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চল। এখানে শিল্পোন্নতির কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল –

1. জলপ্রাপ্তির সুবিধা:

             রূঢ় ও লিপে নদীর সংযোগস্থলে রূঢ় শিল্পাঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় শিল্পকেন্দ্রগুলির প্রয়োজনীয় জল এই নদী মারফত সংগৃহীত হয়।

2. কাঁচামাল প্রাপ্তির সুবিধা:

          এই অঞ্চলে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাপ্তির সুবিধা যথেষ্ট আছে। স্থানীয় কয়লা, খনিজ তেল এবং সুইডেন, স্পেন, ভেনেজুয়েলা প্রভৃতি দেশ থেকে জলপথে লৌহ আকরিক আমদানি করা হয়, যা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

3. পরিবহন: 

            রূঢ় শিল্পাঞ্চলে পরিবহন ব্যবস্থা খুবই উন্নত। এই অঞ্চলে পরিবহন ব্যবস্থা জলপথ, সড়কপথ ও রেলপথ দ্বারা সুরক্ষিত। বিশেষ করে জলপথ এখানকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য দেশে ও বিদেশে রপ্তানি এই পথে করা হয়। রূঢ় অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত হামবুর্গ বন্দর এই অঞ্চলের শিল্পোন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

4. শ্রমিকের প্রাচুর্য:

                  শিল্প ও পরিবহনের উন্নতির কারণে সমগ্ৰ অঞ্চলটি বেশ ঘনজনবসতিপূর্ণ। আর এই ঘনজনবসতিপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রচুর সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।

5. চাহিদা:

               এই অঞ্চলের নিকটবর্তী শহর এবং বাইরেও এখানে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা এই অঞ্চলের শিল্পোন্নতির অন্যতম কারণ।

Read- এশিয়া মহাদেশ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী।

রূঢ় শিল্পাঞ্চলের শিল্প ও শিল্পকেন্দ্রগুলি সম্পর্কে লেখ।

1. লৌহ ইস্পাত শিল্প:

                ডুইসবারগ, মুলহাইম, এসেন, ডর্টমুন্ড, বখুম, গেলসিনকিরখেন, হ্যাম, হ্যাটিনজেন।

2. ইঞ্জিনিয়ারিং, রেলইঞ্জিন, মোটরগাড়ি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি:

                ডর্টমুন্ড, বখুম, এসেন, ডুইসবারগ, গেলসিনকিরখেন, হ্যাম, হ্যাগেন, গ্লাডবাক।

3. রাসায়নিক:

              ডুইসবারগ, হ্যাম, বট্রপ, রেকলিং, হার্ডজেন, গ্লাডবাক।

4. সিমেন্ট শিল্প:

              এসেন, গেলসিনকিরখেন।

5. বস্ত্রবয়ন শিল্প:

               এসেন, মোঁচেন, গ্লাডবাক, আচেন, ডুইসবারগ, বট্রপ।

6. বৈদ্যুতিক শিল্প:

                বখুম, আচেন, ডর্টমুন্ড।

7. কাঁচ শিল্প:

              গেলসিনকিরখেন।

8. খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ:

               ডুসেলডরফ, ডুইসবারগ।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:53.

Leave a Comment

error: Content is protected !!