অবস্থান:
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দার্জিলিং জেলার চারটি মহকুমার মধ্যে তিনটি মহাকুমা, যথা – দার্জিলিং সদর, কালিম্পং ও শিলিগুড়ি মহকুমা এবং আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তরের কুমারগ্ৰাম ও কালচিনি থানা নিয়ে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল গঠিত। এটি ‘দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল’ নামে পরিচিত।
ভূ-প্রকৃতি:
তিস্তা নদী এই পার্বত্য অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। বাঁদিকের ভাগটি পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল ও ডান দিকের ভাগটি তিস্তার পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল নামে পরিচিত।
1. তিস্তার পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল:
এই অঞ্চলটির উচ্চতা অধিক এবং অনেক বেশি প্রসারিত। এটি পশ্চিমে নেপাল সীমান্ত থেকে পূর্বে তিস্তা নদী বিস্তৃত।
এই অঞ্চলের দুটি পর্বতশ্রেণী হল – সিঙ্গালিলা ও দার্জিলিং পর্বতশ্রেণী।
- সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণী নেপাল ও দার্জিলিং সীমান্তে অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণীর কয়েকটি উঁচু শৃঙ্গ হল সান্দাকফু (3630 মি), ফালুট(3596 মি), সবরগ্ৰাম(3543 মি) প্রভৃতি।
- দার্জিলিং পর্বতশ্রেণীটি দক্ষিণে তরাই অঞ্চলের উত্তর সীমা থেকে শুরু করে খাড়া হয়ে উত্তর দিকে প্রসারিত হয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ গুলি হল টাইগার হিল টাইগার হিল (2573 মি), সিঞ্চল(261৫ মি)। এই পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত ঘুম(2247 মি) ভারতের উচ্চতম রেলস্টেশন।
2. তিস্তার পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল:
এই অঞ্চলটি তুলনামূলকভাবে কম উচ্চতাযুক্ত ও কম প্রসারিত। এটি পশ্চিমের তিস্তা নদী থেকে পূর্বে বক্সা ও জয়ন্তী পাহাড় বিস্তৃত।
এখানকার দুটি পর্বতশ্রেণী হল – দেওলা ও দুরবিনদারা।
- পূর্ব অংশে দুরবিনদারার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ঝষিলা(3130 মি), ভুটান-সিকিম সীমান্তে অবস্থিত।
- আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তর সীমান্তের পার্বত্য শৃঙ্গের সিঞ্চল পর্বতের রেনিগাঙ্গো (188৫ মি) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এছাড়া ছোট সিঞ্চুলা(1726 মি) নামে একটি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে।
- রায়ডাক নদীর পশ্চিমে বক্সা জয়ন্তী পাহাড় আছে। ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে এর উচ্চতা কমে গেছে।
- এখানে অবস্থিত বক্সাদুয়ার গিরিপথ হল ভুটানের প্রবেশপথ।
ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
- দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পূর্ব হিমালয়ের অংশ।
- ভূগাঠনিক দিক থেকে এটি পশ্চিমবঙ্গের নবীনতম অঞ্চল।
- এই অঞ্চল উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু।
- এই অঞ্চলটি পাললিক ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত।
- পার্বত্য অঞ্চলের ঢাল খাড়া, বন্ধুর প্রকৃতির।
- সুগভীর খাতসহ নদী উপত্যকা এই অঞ্চলে দেখা যায়।