অবস্থান:
উত্তরে হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এই সমভূমি ভারতের বৃহত্তম সমভূমি। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ওঅসম রাজ্যের মধ্যে এটি বিস্তৃত।
বিস্তার ও ক্ষেত্রমান:
পূর্ব-পশ্চিমে এই সমভূমির বিস্তার প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ ও উত্তর- দক্ষিণে 240-320 কিমি প্রশস্ত। সমগ্ৰ সমভূমির ক্ষেত্রমান প্রায় 6,52,000 বর্গকিমি।
ভূপ্রকৃতি:
উত্তরের এই সমভূমি ভূপ্রকৃতি একেবারেই সমতল। নদীবাহিত প্রস্তরখন্ড দ্বারা এই অঞ্চলটি আবৃত। এই অঞ্চল পাঞ্জাবে বাবর, অসম ও উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্স নামে পরিচিত। ভাবরের দক্ষিণে প্রায় 15-30 কিমি প্রশস্ত বিস্তীর্ণ জলাভূমি ‘তরাই অঞ্চল’ নামে পরিচিত।
স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে এই সুবিস্তৃত অঞ্চলকে চারটি উপ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা –
1. গাঙ্গেয় সমভূমি:
অবস্থান:
পশ্চিমে যমুনা নদী, দক্ষিণ-পূর্বদিকে গঙ্গার মোহনা, উত্তর হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমি – এর মধ্যবর্তী বিশাল সমতল অঞ্চলটির নাম গাঙ্গেয় সমভূমি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে এই সমভূমি টি বিস্তৃত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
- এই সমভূমি গঙ্গা ও তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট হয়েছে।
- এই সমভূমি অঞ্চলটিকে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যথা – উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল, মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ও নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল।
- এই সমভূমির কোথাও কোথাও নদী তীরবর্তী এলাকায় প্লাবন ভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।
- সমগ্ৰ এলাকাটি পশ্চিম থেকে পূর্বে বা দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু।
- এখানকার নতুন পলিগঠিত এলাকা সমূহকে বলা হয় খালার এবং পুরোনো পলিগঠিত এলাকা গুলিকে বলা হয় ভাঙ্গার।
- সমভূমির উত্তর প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি ও বালুপূর্ণ স্বচ্ছিদ্র অংশকে বাবর বলে।
- ভাবরের দক্ষিণে জলাভূমি পূর্ণ বন্যাপ্রবণ এবং জঙ্গলে ঢাকা যে সমতল ক্ষেত্রটি আছে তার নাম তরাই ভূমি।
- গঙ্গা সমভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গা ব-দ্বীপ গড়ে উঠেছে।
2. রাজস্থান সমভূমি:
অবস্থান:
পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণ দিক থেকে আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমাংশের বালু পূর্ণ মরুময় সমতল রূক্স ও শুষ্ক এলাকাটি রাজস্থান সমভূমি নামে পরিচিত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
- পরিপূর্ণ ভাবে বালুময় এই অঞ্চলটির উচ্চতা পূর্বে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে গড়ে 350 মি ও পশ্চিমে পাকিস্তান সীমানার 150 মি।
- সমান্তরাল বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অবনমিত বায়ুপ্রবাহের অপসারণ জনিত কারণে সৃষ্ট গহ্বরে প্লায়া নামক লবণাক্ত হ্রদ দেখা যায়।
- মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশ অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কম বালুময় তৃণভূমি বাগর নামে পরিচিত।
- বাগরের পূর্বাংশে আগত ছোটো ছোটো নদী তাদের দুপাশে পলি সঞ্চয় করে যে প্লাবনভূমি সৃষ্টি করেছে, সেগুলিকে রোহি বলে।
- মরুস্থলীর বালি ও প্রস্তরময় অঞ্চলের নাম হামাদা।
- এই অঞ্চলে অঞ্চলে অনেক চলমান বালিয়াড়ি দেখা যায় এগুলিকে ধ্রিয়ান বলে।
- এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদী হল লুনি।
- এখানে অনেক শুষ্ক হ্রদ দেখা যায় এগুলিকে ধান্দা বলে।
3. পাঞ্জাব সমভূমি:
অবস্থান:
রাজস্থান সমভূমির উত্তর-পূর্বে এবং যমুনা নদীর পশ্চিমে যে বিস্তৃত সমতল এলাকা আছে তাকে পাঞ্জাব সমভূমি বলা হয়। দিল্লি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
- সিন্ধুর উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, চন্দ্রভাগা ও ইরাবতী পলি সঞ্চয় করে এই সমভূমটি তৈরি করেছে।
- সমভূমিটির গড় উচ্চতা 200-240 মিটার।
- এখানকার নদীগুলির মধ্যবর্তী সমভূমি দোয়াব নামে পরিচিত। এখানকার কয়েকটি বিখ্যাত দোয়াব হল – বিস্ত-জলন্ধর দোয়াব, বারি দোয়াব, রেচনা দোয়াব, চাজ দোয়াব ইত্যাদি।
- পাঞ্জাব সমভূমির উঁচু পলিময় ঢিবিগুলিকে ধাওয়া বলে।
- এই সমভূমির উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ খোশ ও চোস নামে পরিচিত।
4. ব্রহ্মপুত্র সমভূমি:
অবস্থান:
640 কিমি দীর্ঘ ও 90-100 কিমি প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা পূর্বে সদিয়া থেকে পশ্চিমে ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় 56 হাজার বর্গকিমি। অসমের সমতলভূমি এর অন্তর্গত।
ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য:
- এই সমভূমিটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু।
- পূর্বদিকে সমভূমির উচ্চতা প্রায় 130 মিটার এবং পশ্চিমে প্রায় 30 মিটার।
- ব্রহ্মপুত্র ও তার উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি তৈরি হয়েছে।
- এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে অসংখ্য বালুচর ব-দ্বীপ গঠিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে মাজুলি ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ।