সংজ্ঞা:
নিরক্ষরেখা র উভয়দিকে 35° থেকে 65° অক্ষাংশের মধ্যে মেরু অঞ্চল থেকে আসা শীতল ও শুষ্ক বায়ুপুঞ্জের সাথে ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আসা উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষ যখন তীব্র হয়, সংঘর্ষ স্থান বা সীমান্ত ক্রমশ সংকুচিত হতে হতে শীতল বায়ু ভারী বলে নীচের দিকে নেমে উষ্ণ বায়ুর স্থান দখল করে। ফলে উষ্ণ বায়ু বক্রাকারে শীতল বায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে এবং প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যায়, একে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতগুলি পশ্চিমা বায়ুর পথ ধরে পশ্চিম থেকে পূর্বে ক্রমশ উচ্চ অক্ষাংশের দিকে অগ্ৰসর হয় এবং অগ্রসর হওয়াকালীন বিভিন্ন পর্যায়ের সৃষ্টি হয়। এই পর্যায়গুলিকে ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র বলা হয়। নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র নিম্নরূপ –
1. প্রথম পর্যায়:
এটি ঘূর্ণবাতের প্রারম্ভিক পর্যায়। এই অবস্থায় মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক মেরু বায়ুপুঞ্জ এবং ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র উপক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উপস্থিত হওয়ার পর পরস্পরের বিপরীতে সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হয়। এই দুই বায়ুপুঞ্জ খুব কাছাকাছি এলে মাঝখানে একটি সীমান্তের সৃষ্টি হয়। এই পর্যায়ে কোনো বায়ুপুঞ্জের উল্লম্ব বিচ্যুতি ঘটে না। এই অবস্থায় সীমান্তকে বলা হয় সাম্য সীমান্ত (Equilibrium front)।
Read-U.S.D.A. অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ লেখ।
2. দ্বিতীয় পর্যায়:
এই পর্যায়ে সীমান্তপৃষ্ঠে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের তুলনায় শীতল বায়ুপুঞ্জ অধিক ভারী ও গতিশীল হওয়ায় শীতল বায়ুপুঞ্জ তরঙ্গের আকারে স্ফীত হয়ে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের মধ্যে ঢুকে সাম্য সীমান্তকে ভেঙে ফেলে। এই পর্যায়ে তাই উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের সৃষ্টি হয় এবং দুই সীমান্তের মিলনস্থলে এক উত্তর আকার বিশিষ্ট তরঙ্গশীর্ষ সৃষ্টি হয়। এই পর্যায়েই প্রকৃত ঘূর্ণবাত শুরু হয়। প্রথম ঘূর্ণবাত শুরু হওয়াকে সাইক্লোজেনেসিস বলে।
3. তৃতীয় পর্যায়:
এই পর্যায়কে পরিণত পর্যায় বলে। এই পর্যায়ে সীমান্ত বরাবর তীব্র আলোড়ন শুরু হয়। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিস্তার ও বক্রতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়। এসময়ে উষ্ণ ক্ষেত্র থেকে শীতল ক্ষেত্রের দিকে বাতাসের প্রবাহ শুরু হয়। ভারী শীতল বাতাস মাটি ঘেঁষে হালকা উষ্ণ বাতাসকে দ্রুত সরাতে থাকে, কিন্তু উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসকে ঠেলে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে না। ফলে, তখন উষ্ণ বাতাস উষ্ণ সীমান্ত বরাবর উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং ধীরে ধীরে শীতল বায়ুপুঞ্জকে সরাতে থাকে। এই সময় ঘূর্ণবাত পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়।
4. চতুর্থ পর্যায়:
এই অবস্থায় ঘূর্ণবাত উষ্ণ ও শীতল এই দুটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত থাকে। এই পর্যায়ে উষ্ণ বায়ু তাড়াতাড়ি ওপরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। উষ্ণ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই অবস্থায় উষ্ণ বাঢয়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জের ওপরে উঠে পড়ে এবং মিলিত স্থানে অন্তর্ধৃত সীমান্ত (Occluded front) সৃষ্টি করে।
5. পঞ্চম পর্যায়:
অন্তর্ধৃত সীমান্ত অঞ্চলে, এখন উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের একটি অংশ শীতল বায়ুপুঞ্জের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে মূল বায়ুপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বিচ্ছিন্ন অংশটি নিম্নচাপ কেন্দ্ররূপে অল্প কিছুক্ষন স্থায়ী হতে পারে কারণ শক্তির জোগান অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়, ফলে শীতল ও উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য থাকে না। অচিরেই ঘূর্ণবাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।
6. অন্তিম পর্যায়:
এই পর্যায়ে অক্লুডেড সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জটি শীতল বায়ুপুঞ্জের দ্বারা পরিবৃত হওয়ার ফলে মূল বায়ুপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের অস্তিত্ব ক্রমশ হারিয়ে গেলে ঘূর্ণবাতটি একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং বায়ুমণ্ডলে একটি সাম্যভাব গঠিত হয়।
Read-পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাস লেখ।
This post was updated on 2023-02-22 17:58:01.