ভূমিকা:
সমগ্ৰ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার খুব বেশি, তাই পৃথিবীর প্রায় সব ধরনের জলবায়ু এই মহাদেশে দেখা যায়। কোনো দেশ বা মহাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকে। জলবায়ুর উপর নির্ভর করে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য।
এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুকে কত ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি। জলবায়ুর উপর নির্ভর করে স্বাভাবিক উদ্ভিদের নাম লেখ।
এশিয়া মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে সাধারণত সাতটি ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে আলোচনা করা হল –
1. নিরক্ষীয় জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
- সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় সারাবছর অধিক উষ্ণতা থাকে।
- বার্ষিক গড় উষ্ণতা 25°C থেকে 30°C এর মধ্যে থাকে।
- প্রতিদিন বিকেলে ঠিক 4টের দিকে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়, একে 4’O Clock rain বলে।
- বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 থেকে 250 cm থাকে।
অবস্থান:
নিরক্ষরেখার কাছাকাছি 10° উত্তর অক্ষরেখা থেকে 10° দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
নিরক্ষীয় অঞ্চলে বেশি উষ্ণতা ও বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য ঘন চিরহরিৎ বা চিরসবুজ গাছ দেখা যায়। যেমন – মেহগনি, রোজউড, আয়রন উড, সেগুন, আবলুস, রবার, কোকো, সিঙ্কোনা প্রভৃতি।
2. মৌসুমী জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
- মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বছরের ছমাস উত্তর-পূর্ব এবং পরের ছমাস দক্ষিণ-পূর্ব দিকে থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
- গ্ৰীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে 20°C থেকে 28°C এবং শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা থাকে 15°C থেকে 20°C।
- গ্ৰীষ্মকালীন গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে 100 থেকে 200 সেমি।
অবস্থান:
10° উত্তর অক্ষরেখা থেকে 30° উত্তর অক্ষরেখা রং মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
আর্দ্র গ্ৰীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল হয় বলে এখানে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ এবং পর্ণমোচী বা পাতাঝরা দুই ধরনের গাছি জন্মায়। যেমন – আম, জাম, মেহগনি, আবলুস, শাল, সেগুন, বট, শিশু, অশ্বত্থ প্রভৃতি।
Read- ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।
3. চিন দেশীয় জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
- এখানে গ্ৰীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 30°C এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 4°C থেকে 12°C।
- গ্ৰীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে গড়ে 100 cm বৃষ্টিপাত হয়।
অবস্থান:
চিনের উত্তরাংশ ও মধ্যভাগ, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কিছু অংশে এই জলবায়ু দেখা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
পর্ণমোচী উদ্ভিদ, যেমন – সেগুন, ফার, বিচ, পাম, লরেল এবং চিরহরিৎ উদ্ভিদ, যেমন – মেহগনি, চেস্টনাট, ওক প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
4. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
- এখানে গ্ৰীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 21°C থেকে 27°C।
- এখানে শীতকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 5°C থেকে 10°C।
- পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে এখানে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। এখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 30-50 সেমি।
অবস্থান:
ভূমধ্যসাগরের তীরে সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, ইজরায়েল, জর্ডন প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
প্রচুর ফলের গাছ, যেমন – জলপাই, আঙ্গুর, কমলালেবু, পিচ প্রভৃতি এছাড়া অন্যান্য গাছ, যেমন – কর্ক, ওক, অলিভ এবং কয়েকটি ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ জন্মায়। যেমন – লরেল, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি প্রভৃতি।
5. উষ্ণমরু জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
- গ্ৰীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 30°C থেকে 35°C।
- শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 15°C থেকে 25°C।
- এখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র 10-15 cm।
অবস্থান:
আরবের মরুভূমি, ভারত ও পাকিস্তানের থর মরুভূমি, ইরাক, ইরান, কুয়েত এইসব দেশগুলির উষ্ণতা খুব বেশি ও বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। এশিয়া মহাদেশের উষ্ণতম স্থান জেকোবাবাদ( উষ্ণতা 52°C) এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
এই মরুভূমি অঞ্চলে সাধারণত কাঁটাজাতীয় গাছ জন্মায়, যেমন – বাবলা, ফনীমনসা, খেজুর প্রভৃতি। বৃষ্টিপাত কম হবার জন্য গাছগুলির কান্ড ও পাতা মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে, যাতে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় গাছের জল বেরিয়ে না যায়।
6. সাইবেরীয় জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
এখানে অতিশীতল ও দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল। বছরের 7 থেকে 8 মাস বরফ পড়ে। উষ্ণতা থাকে হিমাঙ্কের নীচে। গ্ৰীষ্মকালে উষ্ণতা থাকে গড়ে 15°C।
অবস্থান:
রাশিয়ার সাইবেরিয়া এবং সাখালিন দ্বীপপুঞ্জে এই জলবায়ু দেখা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
গাছগুলি শঙ্কু আকৃতির হয় এবং গাছের পাতাগুলি সুঁচালো হয়। পাইন, ফার, বার্চ, লার্চ, সিডার, উইলো প্রভৃতি গাছ জন্মায়। রাশিয়ার সরলবর্গীয় গাছের তৈগা বনভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনভূমি।
7. তুন্দ্রা জলবায়ু:
বৈশিষ্ট্য:
তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে। শীতকালে প্রবল তুষারপাত হয়।
অবস্থান:
সাইবেরীয় অঞ্চলের আরও উত্তরে এই জলবায়ু বিরাজ করে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ:
তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে মস, লাইকেন, শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
Read- ইউরোপ মহাদেশের লন্ডন অববাহিকা সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:36.