ওশিয়ানিয়া মহাদেশের জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে।

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের জলবায়ু:

        ওশিয়ানিয়া উত্তরে উত্তর দ্বীপ থেকে দক্ষিণে স্টুয়ার্ট দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর পার্থক্য দেখা যায়। ছোটো ছোটো দ্বীপগুলির জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাব দেখা যায়। আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো বড়ো স্থলভাগের ভেতরে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়। এই পার্থক্যের জন্য মহাদেশকে 6 টি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয় –

1. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল:

                  মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জগুলিতে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এখানে সারাবছর উচ্চ তাপমাত্রা থাকে (প্রায় 28°C)।
  • সারাবছর পরিচলন পদ্ধতিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় (প্রায় 200 সেমি)।

2. ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল:

                      অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এখানে গ্ৰীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক ও শীতল প্রকৃতির।
  • এই অঞ্চলে গ্ৰীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 150 সেমি।

3. নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল:

                 অস্ট্রেলিয়ার মারে ডার্লিং অববাহিকা ও পূর্ব উপকূলে ব্রিসবেনে এই জলবায়ু লক্ষ করা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এখানকার গ্ৰীষ্মকাল মৃদু উষ্ণ ও শীতকাল মৃদু শীতল প্রকৃতির।
  • এখানকার উপকূল অঞ্চলে গ্ৰীষ্মকালে আয়ন বায়ু ও শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 50-70 সেমি।

4. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল:

                 অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশে ও পশ্চিমাংশের উপকূল বরাবর অ্যাডিলেড ও পারথ অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এখানে গ্ৰীষ্মকাল উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকাল আর্দ্র ও শীতল।
  • পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 75 সেমি।

5. ক্রান্তীয় মরু ও মরুপ্রায় জলবায়ু অঞ্চল:

                 অস্ট্রেলিয়ার মধ্য ও পশ্চিমে মরু অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এখানে গ্ৰীষ্মকাল বেশ উষ্ণ ও শীতকাল শীতল হয়।
  • বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 25 সেমির কম।

6. ব্রিটিশ জলবায়ু অঞ্চল:

                         দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউজিল্যান্ডে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • গ্ৰীষ্মকাল হালকা উষ্ণ(15°C) এবং শীতকালে বেশ শীত(5°C)।
  • পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এখানে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় (প্রায় 200 সেমি)।

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অংশে জলবায়ু ও ভূমিরূপের পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায়। ওশিয়ানিয়া মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে 7 ভাগে ভাগ করা যায় –

1. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য:

                 মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া ও মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জগুলিতে এই অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ঘন চিরহরিৎ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। 
  • এই অরণ্যে সব ঋতুতেই গাছে পাতা থাকে বলে একে চিরহরিৎ অরণ্য বলে।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

      মেহগনি, পাম, এবনি প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য:

               অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে পর্ণমোচী জাতীয় বনভূমি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

     বছরের একটি নির্দিষ্ট ঝতুতে এই অরণ্যের সব গাছে পাতা ঝরে যায়।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

      পাম, বার্চ, সিডার, বাঁশ প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

3. নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য:

                পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া ও নিউজিল্যান্ডে নাতিশীতোষ্ণ পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই অরণ্যের উদ্ভিদ দীর্ঘাকৃতি হয়, বৃহৎ পাতা যুক্ত হয় এবং এদের কাঠ যথেষ্ট শক্ত হয়।
  • এই অরণ্যের উদ্ভিদগুলি শীতের আগে পাতা ঝরিয়ে দেয়।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

     ওক, ম্যাপল, পপলার, এলম, অ্যাস, বার্চ প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

4. ক্রান্তীয় তৃণভূমি:

          অস্ট্রেলিয়ার মধ্য উত্তরাংশে, বিশেষত মকরক্রান্তি রেখার উত্তরে  এই অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

      অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলের কম বৃষ্টিপাত হয় বলে বড়ো বড়ো ঘাস জন্মায়। এই অঞ্চলকে পার্কল্যান্ড সাভানা বলে।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

       এই তৃণভূমিতে অধিক দৈর্ঘ্যের তৃণ ইউক্যালিপটাস, জুয়া প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

5. নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি:

গ্ৰেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিমদিকে মারে ডার্লিং অববাহিকায় এই তৃণভূমি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

   এই তৃণভূমিতে ছোটো ছোটো ঘাস জন্মায়, এই তৃণভূমি ‘ডাউনস’ নামে পরিচিত।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

        স্বল্প দৈর্ঘ্যের তৃণ।

6. মরু অরণ্য:

    অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমের মরুভূমি অঞ্চলে এই অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

     এই অঞ্চলে উষ্ণ মরু প্রকৃতির জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে কাঁটাগাছ ও ঝোপঝাড় ছাড়া বড়ো কোনো উদ্ভিদ জন্মায় না।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

    ক্যাকটাস, মালাগার, লবণাম্বু ঝোপঝাড় প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

7. ভূমধ্যসাগরীয় অরণ্য:

        অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাংশে বিক্ষিপ্তভাবে এই বনভূমি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

    এই অঞ্চল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভেদের বিক্ষিপ্ত বনভূমি গড়ে উঠেছে।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

     জারা, কারি, ব্লু-গাম প্রভৃতি উদ্ভিদগুলি দেখা যায়।

Read- দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস অঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:29.

Leave a Comment

error: Content is protected !!