ওশিয়ানিয়া মহাদেশের মারে-ডার্লিং অববাহিকা সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের মারে-ডার্লিং অববাহিকা সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের মারে-ডার্লিং অববাহিকা


মারে-ডার্লিং অববাহিকা কাকে বলে?

অস্ট্রেলিয়ার পূর্বে গ্ৰেট ডিভাইডিং রেঞ্জ আর পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত মধ্যভাগের সমভূমি। এই সমভূমির দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে মারে নদী ও তার প্রধান উপনদী ডার্লিং এবং অন্যান্য উপনদী যে সমভূমি গঠন করেছে তা মারে ডার্লিং অববাহিকা নামে পরিচিত।

মারে-ডার্লিং অববাহিকার অবস্থান ও সীমা লেখ।

 অবস্থান:

      অক্ষাংশ অনুসারে মারে ডার্লিং অববাহিকা প্রায় 24° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে 39° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমা অনুসারে এই অঞ্চলটি 138° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে 149° পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে বিস্তৃত। 

সীমা:

     অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশে মারে ডার্লিং অববাহিকা অবস্থিত। এই অববাহিকার উত্তর আর পূর্ব দিকে আছে গ্ৰেট ডিভাইডিং রেঞ্জ, পশ্চিমে রয়েছে লফটি রেঞ্জ, ব্যারিয়ার রেঞ্জ, গ্ৰে রেঞ্জ আর দক্ষিণে আছে গ্ৰেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমায় সেন্ট ভিনসেন্ট উপসাগর ও এনকাউন্টার উপসাগর অবস্থিত।

মারে ডার্লিং অববাহিকার ভূপ্রকৃতি ও নদ-নদী সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূপ্রকৃতি:

       মারে ডার্লিং অববাহিকার ভূমিরূপ সমতল এবং এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা প্রায় 100 থেকে 200 মিটারের কম। মারে ডার্লিং নদী দীর্ঘকাল ধরে পলি সঞ্চয় করে সমভূমি গঠন করেছে। এই অববাহিকা মধ্যভাগ থেকে ক্রমশ পশ্চিমে ও পূর্বে দিকে উঁচু হয়ে গেছে। নদীর গতিপথ দেখলে বোঝা যায় যে, এই অঞ্চলটি উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্রমশ ঢালু।

নদনদী:

  1. মারে ডার্লিং অববাহিকার প্রধান নদী হল মারে ডার্লিং। অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘতম নদী হল মারে (2508 কিমি) এবং ডার্লিং(1472 কিমি) হল মারের উপনদী। 
  2. মারের উৎপত্তি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান আল্পস পর্বত থেকে এবং ডার্লিং এর উৎপত্তি হয়েছে নিউইংল্যান্ড রেঞ্জ থেকে। 
  3. এই দুটি নদী ওয়েন্টওয়ার্থ শহরের কাছে পরস্পর মিলিত হয়েছে। এরপর এই মিলিত প্রবাহ দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে এনকাউন্টার উপসাগরে পড়েছে।
  4. মারে নদীটি অস্ট্রেলিয়ান আল্পস পর্বতের বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছরই জলে পূর্ণ থাকে। 
  5. ডার্লিং ছাড়াও মারের আরও একটি বড়ো উপনদী হল মারামবিজি। এছাড়া ডার্লিং নদীর কয়েকটি উপনদী আছে। যেমন – পারু, বারোন, ওয়ারেগো প্রভৃতি।

মারে ডার্লিং অববাহিকার জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে আলোচনা কর।

জলবায়ু:

  1. মারে ডার্লিং অববাহিকার জলবায়ু মূলত নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। 
  2. এখানকার গ্ৰীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 25°C এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 10°C। 
  3. গ্ৰেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিমে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম, বছরে মাত্র 50 থেকে 75 সেমি। 
  4. দক্ষিণের সমুদ্র উপকূলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায়। 
  5. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কারণে উপকূলবর্তী এলাকায় শীতকালে বৃষ্টিপাত লক্ষ করা যায়।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

  1. এই অববাহিকায় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ও কম বৃষ্টিপাতের জন্য এখানে ছোটো ছোটো ঘাসের তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে, যা ডাউনস নামে পরিচিত। 
  2. কয়েকটি স্থানে ওক, ম্যাপল, পপলার প্রভৃতি পর্ণমোচী গাছ দেখা যায়।
  3. অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অধ্যুষিত অঞ্চলে জারা, কারি প্রভৃতি চিরসবুজ গাছের বিক্ষিপ্ত বনভূমি আছে। 
  4. অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশে গ্ৰেট ডিভাইডিং রেঞ্জের উচ্চ অংশে সরলবর্গীয় বৃক্ষের কিছু বনভূমি দেখা যায়।

মারে ডার্লিং অববাহিকার কৃষি ও পশুপালন সম্পর্কে আলোচনা কর।

কৃষি:

      মারে ডার্লিং অববাহিকা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানে উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে অনেক ফসল উৎপাদন করা হয়। এখানকার প্রধান ফসল গম। এছাড়া যব, ভুট্টা, ওট, রাই উৎপাদন করা।

          দক্ষিণের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে আঙুল, লেবু, পিচ, আপেল, অ্যাপ্রিকট, নাসপাতি প্রভৃতি নানাপ্রকার ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

পশুপালন:

  • মারে ডার্লিং অববাহিকার বাউন্স তৃণভূমি অঞ্চল পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত। এখানে মেরিনো, লিঙ্কন, মার্স প্রভৃতি ভালো জাতের ভেড়া পালন করা হয়, তাই এখানে প্রচুর পরিমাণে উৎকৃষ্ট মানের পশম ও মাংস উৎপাদিত হয়।
  • উত্তরর কুইন্সল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্বে নিউ সাউথ ওয়েলসে মাংস প্রদায়ী ও দুগ্ধ প্রদায়ী গবাদিপশু পালন করা হয়। 
  • গোমাংস উৎপাদনে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করে। মেষপালনে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং পশম উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে।

মারে ডার্লিং অববাহিকার খনিজ সম্পদ ও শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর।

খনিজ সম্পদ:

  1. মারে ডার্লিং অববাহিকায় সেভাবে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় না। তবে অববাহিকার প্রান্তর্বর্তী অঞ্চলে সোনা, তামা, রূপা, সিসা, টিন প্রভৃতি পাওয়া যায়। 
  2. পশ্চিম সীমায় অবস্থিত ব্রোকেনহিল রূপা উত্তোলনে বিখ্যাত। তাই ব্রোকেনহিলকে ‘রূপার শহর’ বলা হয়। 
  3. এছাড়া কোবারে তামা উত্তোলিত হয়। অ্যাডিলেড অঞ্চলে সামান্য কয়লা পাওয়া যায়।
  4.  ম্যাকিনটায়ার ও নামোই নামে ডার্লিং নদীর যে দুটি উপনদী আছে তাদের অববাহিকায় স্বাভাবিক গ্যাস ও খনিজ তেল পাওয়া যায়।

শিল্প:

  • মারে ডার্লিং অববাহিকা অঞ্চল কৃষিকাজ ও পশুপালনে উন্নত হলেও শিল্পের সেভাবে বিকাশ ঘটেনি। কৃষি ও পশুসম্পদের উপর নির্ভর করে পশম, বস্ত্রবয়ন, ডেয়ারি, ময়দা, বেকারি, মাংস শিল্প গড়ে উঠেছে। 
  • এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, রাসায়নিক শিল্প,সুরা শিল্প প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। 
  • অ্যাডিলেড, ব্রোকেনহিল, মিলডুরা, গ্ৰিফিথ, বেনডিগো, কোবার প্রভৃতি একাকার প্রধান শিল্প কেন্দ্র।

মারে ডার্লিং অববাহিকার কৃষিকাজে উন্নতির কারণ লেখ।

মারে ডার্লিং অববাহিকা কৃষিকাজে যথেষ্ট উন্নত। এখানে কৃষিকাজে উন্নতির কারণগুলি হল –

  • এই অববাহিকায় বিস্তীর্ণ সমতলভূমির অবস্থান রয়েছে।
  • নদী দ্বারা বাহিত এবং সঞ্চিত উর্বর ও গভীর পলিমাটি।
  • নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করায় কৃষিকাজ খুবই উন্নত।
  • জলসেচের সুব্যবস্থা রয়েছে।
  • কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে চাষের সুবিধা আছে।
  • প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ।
  • জাপান ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে কৃষিজ ফসল বিশেষত গম রপ্তানির সুবিধা।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:39.

Leave a Comment

error: Content is protected !!