কয়লার উপজাত সামগ্রী এবং কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব লেখ।

কয়লার উপজাত সামগ্রী এবং কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ দিয়ে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
কয়লার উপজাত সামগ্রী এবং কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব

কয়লার উপজাত সামগ্রী:

কার্বোনাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে কয়লার অধিকাংশ উপজাত দ্রব্য আহরণ করা হয়। কোক, আলকাতরা, গ্যাস, স্যাকারিন, তেল, অ্যামোনিয়াম সালফেট ইত্যাদি কয়লার প্রধান উপজাত সামগ্রী।

         আলকাতরাকে পাতন ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশ্রুত করে আরো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করা হয়। যেমন – 

1. বেনজিন:

            D.D.T, গ্যামাক্সিন প্রভৃতি কীটনাশক দ্রব্য, জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়।

2. টলুইন:

          T.N.T বা বিস্ফোরক দ্রব্য, স্যাকারিন, বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড প্রভৃতি তৈরি করা হয়।

3. প্যারাজাইলিন:

           কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করা যায়।

4. ন্যাপথলিন:

           কীটনাশক সামগ্রী, বার্নিশ তৈরির কাঁচামাল, টেট্রালিন উৎপাদন করা যায়।

5. ফেনল, ক্রিয়োজোট, জাইলেনল:

             ওষুধ তৈরিতে, সাবান, অ্যান্টিসেপটিক প্রভৃতি উৎপাদন করা যায়।

6. পাইরিডিন:

              রং উৎপাদন ও রবার ভালকানাইজ করার কাজে লাগে।

7. অ্যানথ্রাসিন:

              রং উৎপাদনের কাজে লাগে, এছাড়াও অ্যামোনিয়াম সালফেট সার উৎপাদনে, হিমায়িত করার কাজে, বিস্ফোরক পদার্থ উৎপাদন প্রস্তুতি করতে ব্যবহৃত হয়।

কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

             কয়লা হল একপ্রকার ক্ষয়িষ্ণু, ওজন হ্রাসকারী অপুনর্ভব প্রকৃতির জ্বালানি সম্পদ। পৃথিবীর যাবতীয় শক্তি সম্পদের মধ্যে কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ব্যাবহার সর্বাধিক। কয়লার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যবহার গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল – 

1. তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে:

               তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঁচামাল হিসেবে কয়লার ব্যবহার সর্বাধিক। ভারতে উৎপাদিত মোট কয়লার প্রায় 75% তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

2. লৌহ ইস্পাত শিল্পে:

               কয়লা থেকে উৎপন্ন কোক কয়লা এর সাহায্যে লৌহ ইস্পাত শিল্পে আকরিক লোহা গলিয়ে লৌহপিন্ড বা Pig iron তৈরি করা হয়। এই ক্ষেত্রে প্রায় 5% কয়লা ব্যবহৃত হয়।

4. শিল্পের জ্বালানি ও পরিবহনে:

                  ভারতে প্রায় 17% কয়লা বিভিন্ন শিল্পে জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়। কয়লার সাহায্যে উৎপন্ন তাপ ও বাষ্পের সাহায্যে কারখানায় যন্ত্রপাতি, জাহাজ, রেল ইঞ্জিন চালানো হয়।

5. রাসায়নিক শিল্পে:

               কয়লার উপজাত দ্রব্যগুলি নানা প্রকার রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। যেমন – বেনজিন কীটনাশক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, অ্যামোনিয়া রাসায়নিক সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, বেনজল নানা প্রকার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি। এছাড়া সিবান, অ্যান্টিসেপটিক প্রভৃতি তৈরি করা হয়।

6. গৃহস্থালিতে:

             গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়, শীতের দেশে ঘর গরম রাখার জন্য ফায়ার প্লেসে জ্বালানি হিসেবে কয়লা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গৃহনির্মাণে বাঁশ ও কাঠের আয়ু বৃদ্ধি করার জন্য আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়।

7. উপজাত দ্রব্য প্রস্তুতিতে:

              উচ্চ (1000°) ও নিম্ন(500°) তাপমাত্রায় কার্বোনাইজেশন প্রক্রিয়ায় কোক কয়লা উৎপাদন করা হয়, যার থেকে আলকাতরা, স্যাকারিন, কোল গ্যাস, ন্যাপথলিন, টলুইন, বেনজল, পিচ প্রভৃতি উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত হয়।

8. অন্যান্য:

  • কয়লা বিভিন্ন কুটির শিল্পে জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়।
  • রাস্তা তৈরিতে পিচ ব্যবহৃত হয়।
  • সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামালরূপে ব্যবহৃত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার যুগে কয়লার এই সমস্ত নানাবিধ ব্যবহার ও উপযোগিতার জন্যেই কয়লাকে ‘কালো হিরে’।

           

This post was updated on 2023-02-22 17:58:12.

Leave a Comment

error: Content is protected !!