গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা এই লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।এই প্রশ্নটি দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। প্রশ্নটি প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। প্রশ্নটি পড়ে নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি করো এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

            খাদ্যশস্য হিসেবে ভারতে ধানের পরেই গমের স্থান। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের ফসল হলেও ভারতে শীতকালে অতি আধুনিক পদ্ধতিতে গম চাষ করা হয়। গম উৎপাদনের জন্য নিম্নলিখিত অনুকূল অবস্থা গুলি আলোচনা করা হলো-

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

     1. জলবায়ু:

  • উষ্ণতা:

                 বার্ষিক গড় 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা গম চাষ এর জন্য আদর্শ। অঙ্কুরোদগম ও চারা বৃদ্ধি র সময় 15 ডিগ্রি থেকে 16 ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ফসল পাকার সময় 18 ডিগ্রি থেকে 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা প্রয়োজন।

  • বৃষ্টিপাত:

                     বার্ষিক গড় 50 থেকে 100 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত অর্থাৎ মাঝারি বৃষ্টিপাত গম চাষের জন্য আদর্শ ৫০ সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হলে জল সেচের মাধ্যমে গম চাষ করা হয় কিন্তু ১০০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

  • আদ্রতা:

                   বীজের অঙ্কুরোদগমের ও চারা বৃদ্ধির সময় শীতল ও আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন, যাতে অঙ্কুরোদগমের সংখ্যা বেশি হয়।গাছের শিষ বেরোনোর সময় শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন হয়। গমের দানার পুষ্টির জন্য সামান্য বৃষ্টিপাত প্রয়োজন এবং গম কাটার সময় উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন হয়।

  • তুহিন মুক্ত অবস্থা:

                          তুহিন গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই গম উৎপাদক অঞ্চলে কমপক্ষে 110 দশটি তুহিন মুক্ত দিন থাকা প্রয়োজন।

      2. মৃত্তিকা:

                   উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি ও ভারী কাঁদা মাটি গম চাষের পক্ষে উপযোগী। এছাড়া জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও পলল সমৃদ্ধ মৃত্তিকায় গম চাষ খুব ভালো হয়।

      3. ভূপ্রকৃতি:

                            ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত প্রায় সমতল ভূমি ও অল্প ঢালু জমিতে গম চাষ করা হয়। পাহাড়ের ঢালে ধাপ কেটে সাধারণত ধাপ চাষ করা হয় না।তবে চাষযোগ্য জমির অভাব হলে পাহাড়ের গায়ে চাষ করা হয়।

  • অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ

    1. সুলভ শ্রমিক:

                          জমি কর্ষণ, বীজ বপন,শস্য কর্তন এর অধিকাংশ কাজই বাণিজ্যিক গম চাষের যন্ত্রের সাহায্যে হয়।তাই শ্রমিকের প্রয়োজন কম।তবে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গম চাষের জন্য শ্রমিকের সাহায্য নেওয়া হয়।

     2. উন্নত বীজ:

                    গম চাষের উন্নতির জন্য উন্নত মানের বীজ ব্যবহার করা হয়।যেমন- পুসা তেজস (হাই 8759), করণ বন্দনা (DBW-187),করণ নরেন্দ্র (DBW-222), পুসা উজালা (হাই 1605), পুসা যশস্বী (HD-3226)।

      3. সার ও কীটনাশক:

                         জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য এবং গমের ফলন বৃদ্ধির জন্য জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা হয়। ফসলকে পোকামাকড়ের থেকে বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

      4. উন্নত যন্ত্রপাতি:

                      গম চাষের জন্য উন্নতির জন্য এবং ফসল বৃদ্ধির জন্য উন্নত মানের বিভিন্ন আধুনিক বাণিজ্যিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।যেমন-ট্রাক্টর,হ্যান্ড ট্রাক্টর প্রকৃতি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয় ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

     5. মূলধন:

                 বিস্তীর্ণ জমি সংগ্রহ, যন্ত্র ক্রয়,আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে জলসেচ, কীটনাশক ও সার, উন্নত বীজ প্রভৃতি ব্যবহার, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহন প্রভৃতিতে প্রাথমিকভাবে প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়।

      6. পরিবহন:

                     বাণিজ্যিক উৎপাদন হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্র থেকে গম কোল্ডস্টোর এবং রপ্তানির জন্য বন্দর শহরের সাথে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

     7. চাহিদা ও বাজার:

                             বাণিজ্যিক ফসল হওয়ায় উৎপাদক অঞ্চল বাদ রেখে অন্যত্র দেশে ও বিদেশে এই পণ্যের চাহিদা ও বাজার সৃষ্টি শস্য উৎপাদন কে উৎসাহিত করে।

গম উৎপাদনে ভারত কত তম স্থান অধিকার করেছে?

গম উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গম গবেষণা কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?

ভারতে দিল্লির পুসা শহরের কেন্দ্রীয় গম গবেষণা কেন্দ্রটি অবস্থিত।

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকারী রাজ্য কোনটি?

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকারী রাজ্য টি হল উত্তর প্রদেশ।

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য কোনটি?

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য টি হল পাঞ্জাব।

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য কোনটি?

ভারতের মধ্যে গম উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য টি হল হরিয়ানা।

কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল বীজের নাম লেখ।

কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল বীজের নাম হল-সোনালিকা, কল্যানসোনা, সোনা 227, সফেদ লারমা, ছোটি লারমা ইত্যাদি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!