মালভূমি কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় ৩০০ মিটার এর অধিক উঁচু, বহুদূর বিস্তৃত, চারিদিক খাড়া ঢাল যুক্ত, যার উপরিভাগ তরঙ্গায়িত বা ঢেউ খেলানো অর্থাৎ আপেক্ষিক উচ্চতা মধ্যম প্রকার তাকে মালভূমি বলে।
যেমন – পামীর মালভূমি।
বৈশিষ্ট্য:
- মালভূমির গড় উচ্চতা 300 মিটার থেকে 600 মিটার। তবে কোনো কোনো মালভূমির উচ্চতা 4000 মিটার এর বেশি হয়।
- মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত প্রকৃতির হয়।
- মালভূমির চারিদিকের ঢাল বেশ খাড়া, অর্থাৎ মালভূমি দেখতে কিছুটা টেবিলের মতো।
- প্রাচীন মালভূমি গুলি ঢাল বা বর্মের মতো অত্যন্ত কঠিন ও ভূভাগ হিসাবে অবস্থান করে। তাই এগুলিকে শিল্ড নামে অভিহিত করা হয়।
চিত্রসহ মালভূমির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
মালভূমিকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- পর্বতবেষ্টিত মালভূমি
- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি
- লাভা মালভূমি
- মহাদেশীয় মালভূমি
1. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি:
ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরী হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণীর মাঝখানের জায়গাগুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি হয়। এই মালভূমির চারিদিকে পর্বত থাকে বলে একে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে।
উদাহরণ – তিব্বতের মালভূমি (বৃহত্তম পর্বতবেষ্টিত মালভূমি), উত্তর আমেরিকার কলম্বিয়া মালভূমি ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয়।
- এগুলি অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।
- মালভূমমিগুলি পাললিক শিলায় গঠিত হয় এবং এতে জীবাশ্ম থাকতে পারে।
- চারিদিকে পর্বতবেষ্টিত হয় বলে পরিবেশ শুষ্ক হয়।
2. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি:
কোনো উচ্চ মালভূমি কঠিন ও নরম শিলা দ্বারা গঠিত হলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন – নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নরম শিলা স্তরে নদী উপত্যকার সৃষ্টি করে ও কঠিন শিলা কম ক্ষয়ের ফলে উচ্চভাবে অবস্থান করে। নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে উঁচুঅংশগুলি যে মালভূমি সৃষ্টি করে, তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে।
উদাহরণ – ছোটোনাগপুর মালভূমি, মালনাদ মালভূমি।
বৈশিষ্ট্য:
- মালভূমিগুলি প্রাচীন শিলাগঠিত ও খনিজ সমৃদ্ধ।
- ক্ষয়কার্যের ফলে এই মালভূমির উচ্চতা ক্রমহ্রাসমান।
- কঠিন শিলাগঠিত অংশগুলির উচ্চতা প্রায় সমান হয়।
- মালভূমির অভ্যন্তরের নদী উপত্যকা গুলি যথেষ্ট চওড়া হয়।
3. লাভা মালভূমি:
ভূত্বকের চ্যুতি, ফাটল, জোড় বা ছিদ্র পথ দিয়ে ভূ-আভ্যন্তরীণ ম্যাগমা কোনো বিস্ফোরণ ছাড়াই বিদার অগ্ন্যুদগমের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে বেড়িয়ে এসে বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ শীতল হয়ে যে মালভূমি গড়ে ওঠে, তাকে লাভা মালভূমি বলে।
উদাহরণ – দক্ষিণ ভারতের ডেকানট্রাপ মালভূমি, পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ার মালভূমি ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- সাধারণত মহাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
- এই মালভূমির উপরিতল চ্যাপ্টা আকৃতির হয়।
- আবহবিকার ও ক্ষয়কার্যের দ্বারা সিঁড়ির মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
- প্রধানত ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত।
4. মহাদেশীয় মালভূমি:
পাত সংস্থান মতবাদ অনুসারে সঞ্চারণশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত দুটি প্রাচীন ভূখন্ড ভূ-আলোড়নের ফলে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন বিশাল আয়তন জুড়ে মালভূমি রূপে অবস্থান করে তখন তাদের মহাদেশীয় মালভূমি বলে।
প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত এইসব মহাদেশীয় মালভূমিগুলি শিল্ড নামে পরিচিত।
উদাহরণ – ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, রাশিয়ার সাইবেরিয়ার উচ্চভূমি, আরবের মালভূমি ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- এগুলি বিশালাকার প্রকৃতির হয়।
- অধিকাংশই প্রাচীন গ্ৰ্যানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।
- মালভূমির পৃষ্ঠদেশ বা উপরিভাগ তরঙ্গায়িত প্রকৃতির হয়।
- মহাদেশীয় মালভূমি বিখন্ডিত প্রাচীন ভূখন্ডের অংশ।
- এই মালভূমি নানাপ্রকার মূল্যবান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
This post was updated on 2023-02-22 17:58:22.