জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে লেখ।

জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্ব

ভূমিকা:

      আর্থসামাজিক পরিবর্তন ও জনসংখ্যার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী তত্ত্বকে জনসংখ্যা বিবর্তন তত্ত্ব বলে।

  1929 খ্রীঃ জনসংখ্যা তত্ত্ববিদ থমসন, 1945 খ্রীঃ NONTSTAIN জন্মহার ও মৃত্যুহার এর পর্যায়ক্রমে পরিবর্তনের ভিত্তিতে জনসংখ্যা বিবর্তন তত্ত্ব উপস্থাপন করে। যেমন – 

1ম পর্যায়:

   উচ্চ জন্মহার, উচ্চ মৃত্যুহার > কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি > সমাজ ও অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা ।

2য় পর্যায়:

  উচ্চ জন্মহার ও নিম্নমুখী মৃত্যুহার > দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি > শিল্প উন্নয়ন > উন্নয়নের শুরু।

3য় পর্যায়:

  নিম্নমুখী জন্ম ও মৃত্যুহার > শিল্প ও বানিজ্য ভিত্তিক অর্থনীতি এবং আধুনিক কৃষি > সমাজ ও অর্থনীতির সবল অবস্থা।

4র্থ পর্যায়:

  নিম্ন জন্মহার ও অতিনিম্ন মৃত্যুহার > জনসংখ্যার স্থিতাবস্থা > প্রয়োজনের তুলনায় জনসংখ্যা কম > সবল অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা।

  •  জনসংখ্যা বিবর্তন মডেলের চারটি পর্যায় এর বৈশিষ্ট্য নীচে আলোচনা করা হল – 

1ম পর্যায় বা প্রাক শিল্প পর্যায়:

        এই পর্যায়ে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের অবস্থান বোঝানো হয়।

বৈশিষ্ট্য:

  1. মৃত্যুহার ও জন্মহার উভয়ই বেশি।
  2. কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক সমাজ।
  3. অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান কম।
  4. অপুষ্টিজনিত রোগ, বেকারত্ব ও দারিদ্র নিত্য সঙ্গী।
  5. আর্থসামাজিক পরিকাঠামো দুর্বল এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত।

উদাহরণ – আফ্রিকার গ্যাবন, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সোয়াজিল্যান্ড প্রভৃতি।

2য় পর্যায় বা নবীন পাশ্চাত্য পর্যায়:

        শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে এই পর্যায় শুরু।

বৈশিষ্ট্য:

  1. জন্মহার বেশি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত।
  2. চিকিৎসার সুযোগ বাড়ায় মৃত্যুহার ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
  3. দেশীয় বা আঞ্চলিক আর্থসামাজিক পরিকাঠামো ধীরে ধীরে মজবুত হয়।
  4. অর্থনীতি প্রধানত মিশ্র প্রকৃতির, তবে সমাজ ও অর্থনীতির মূলভিত্তি হল কৃষিকাজ।
  5. শিক্ষা, শাস্ত্র ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকে।

উদাহরণ – ভারত, চিন, বাংলাদেশ, ইউরোপের রোমানিয়া ও গ্ৰীস।

3য় পর্যায় বা আধুনিক পাশ্চাত্য পর্যায়:

       এই পর্বে শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে।

বৈশিষ্ট্য:

  1. জন্মহার বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত।
  2. সম্প্রসারিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগে মৃত্যুহার আরও কম।
  3. উৎবৃত্ত জনসংখ্যার ক্রম হ্রাস।
  4. শিল্প নির্ভর অর্থনীতি এবং আলোকপ্রাপ্ত জনসমাজ।
  5. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

উদাহরণ – USA, জাপান, ফ্রান্স, UK ইত্যাদি।

4র্থ পর্যায়:

     এই পর্যায়ে শিল্প ও বানিজ্য ভিত্তিক আর্থসামাজিক অবস্থার বর্তমান।

বৈশিষ্ট্য:

  1. জন্মহার সুনিয়ন্ত্রিত। 
  2. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সুনিয়ন্ত্রিত।
  3. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়।
  4. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

উদাহরণ – অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড।

Leave a Comment

error: Content is protected !!