জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইটের শ্রেণীবিভাগ কর এবং এদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লেখ।

জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইটের শ্রেণীবিভাগ  এবং এদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। 2019 সালে এই প্রশ্নটি এসেছিল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইটের শ্রেণীবিভাগ এবং  অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট:

              যেসব উদ্ভিদ শুষ্ক অর্থাৎ জলের পরিমাণ কম, এমন অঞ্চলের মাটিতে জন্মায় তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট বলে। 

      ওপেনহেমার -এর মতে যেসব উদ্ভিদ পরিবেশের জলের অভাবকে সাফল্যের সঙ্গে আয়ত্ত করার জন্য নিজেদের দেহের অঙ্গস্থানগত, শারীরস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে বসবাস করে, তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট বলে।

Read-উপযুক্ত চিত্রসহ নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র ব্যাখ্যা কর।

জাঙ্গল উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ:

          জাঙ্গল উদ্ভিদকে অভিযোজনের প্রকৃতি অনুযায়ী মোট চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্ন মাইগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

1. খরা বর্জনকারী:

               শুষ্ক অঞ্চলের কিছু ক্ষুদ্রাকৃতির উদ্ভিদ জলের অভাবকে এড়িয়ে চলার জন্য সংক্ষিপ্ত বর্ষা ঋতুর শুরুতে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটায়, তারপর দ্রুত উদ্ভিদ বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটায় এবং মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই বীজ উৎপন্ন করে অর্থাৎ অতি সীমিত মধ্যে নিজেদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে। এদের করা বর্জনকারী উদ্ভিদ বলে। এসব উদ্ভিদ বায়ুমন্ডলীয় চরম শুষ্কতাকে সহ্য করতে পারে না।

  যেমন – করবী, পাথরকুচি, লবঙ্গ প্রভৃতি।

  ✓ এদের ক্ষণস্থায়ী বর্ষজীবী উদ্ভিদও বলে। 

2. খরা মোচনকারী:

             খরা বর্জনকারী উদ্ভিদের মতোই এরা ক্ষুদ্রাকার এবং এদের বিটপ(কান্ড) অঞ্চল মূলজ অঞ্চল অপেক্ষা বড়ো হয়। খরার সময়ে বা প্রতিকূল পরিবেশে এদের মাটির উপরের অংশ শুকিয়ে যায়, কিন্তু বাকি অংশ মাটির মধ্যে সুপ্ত বা ঘুমন্ত অবস্থায় থেকে যায়। বৃষ্টিতে মাটি সরস হয়ে উঠলে ওই অংশ থেকে পুনরায় নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। 

যেমন – শিয়ালকাঁটা, বননীল, ক্যাসিয়াস প্রভৃতি।

✓ অনেক একবর্ষজীবী ও কতিপয় দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

3. খরা প্রতিরোধকারী:

                   শুষ্ক ও মরুভূমি অঞ্চলে যেসব উদ্ভিদ সময় অনুসারে নিজেদের অঙ্গস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় হ্রাস বৃদ্ধি ঘটিয়ে সারা বছর খরাকে প্রতিরোধ করে বেঁচে থাকে তাদের খরা প্রতিরোধকারী উদ্ভিদ বলে। 

            এইসব উদ্ভিদ বর্ষা ঋতুতে কলা ও কোশের বৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল, কান্ড, পাতায় প্রচুর পরিমাণে জল সঞ্চয় করে রাখে। পরবর্তীতে বৃষ্টিহীন ঋতুতে ও চরম করার সময় ঐ সঞ্চিত জল ব্যবহার করে এরা বেঁচে থাকে। অত্যধিক করার মধ্যেই এরা দীর্ঘদিন ধরে বেঁচে থাকে এবং ফুল ও ফল উৎপন্ন করে।

যেমন – ফনীমনসা, ক্যাকটাস, ঘৃতকুমারী, শতমূলী প্রভৃতি।

4. খরা সহ্যকারী:

                  শুষ্ক ও মরুভূমিৎঅঞ্চলে যেসব উদ্ভিদ দীর্ঘসময় ধরে জলের অভাব বা স্থায়ীভাবে মাটির শুষ্কতা সহ্য করতে পারে তাদের খরা সহ্যকারী উদ্ভিদ বলে।

          বাষ্পীভবন ফলে যাতে এদের দেহ থেকে সব জল বেড়িয়ে না যায় সেইজন্য এদের পাতা কাঁটায় পরিণত হয়। মাটির আর্দ্রতা অত্যাধিক কমে গেলে গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং জলীয় অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত নতুন কোনো পাতা জন্মায় না।

যেমন – বাবলা, আকন্দ প্রভৃতি।

জাঙ্গল উদ্ভিদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য:

জাঙ্গল উদ্ভিদের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. মূল:

  • মাটিতে জলের অভাবের জন্য জাঙ্গল উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে জল সংগ্রহ করে। জল সংগ্রহের জন্য মূলগুলি প্রচুর শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট হয়।
  • এই শ্রেণীর উদ্ভিদের মূলরোম ও মূলত্রান খুবই সুগঠিত হয়।

2. কান্ড:

  • জাঙ্গল উদ্ভিদের কান্ড শক্ত, কাঠ জাতীয় এবং বেঁটে বা খর্বাকার হয়।
  • ফনীমনসা জাতীয় জাঙ্গল উদ্ভিদের কান্ড রসালো ও চ্যাপ্টা হয়। সবুজ রং এর এই কান্ডকে পর্ণকান্ড বলে। এইসব উদ্ভিদের কান্ডে পাতার পরিবর্তে ছোটো ছোটো কাঁটা থাকে।
  • কোন কোন জাঙ্গল উদ্ভিদের কান্ডগুলি পুরু ছালযুক্ত ও কিউটিকল যুক্ত হয়, এগুলি সাধারণত রসালো হয় না।
  • কিছু কিছু উদ্ভিদের কান্ড রোম ও মোম দিয়ে আবৃত থাকে।

3. পাতা:

  • অধিকাংশ জাঙ্গল উদ্ভিদের পাতা পুরু, রসালো ও শক্ত হয়ে থাকে। 
  • কোনো কোনো জাঙ্গল উদ্ভিদের পাতা খুব সরু হয়। যেমন – ক্যাসুরিনা।
  • এ জাতীয় উদ্ভেদের পত্ররন্ধ্রগুলি‌ পাতার নিম্নত্বকে অবস্থান করে।
  • দিনে পত্ররন্ধ্র বন্ধ রাখে ও রাতে উন্মুক্ত রাখে।
  • দিনের বেলায় কিংবা চরম খরার সময়ে প্রস্বেদন ক্রিয়া কমিয়ে দেয়।

4. ফুল,ফল ও বীজ:

  • অধিকাংশ জাঙ্গল উদ্ভিদের ফুল ফোটে।
  • এইসব উদ্ভিদের ফুল তীব্র গন্ধযুক্ত এবং উজ্জ্বল রঙের হয়।
  • প্রখর উষ্ণতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছের ফল ও বীজ গুলি শক্ত খোসায় আবৃত থাকে।

Read-U.S.D.A. অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ লেখ।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:52.

Leave a Comment

error: Content is protected !!