জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন(প্রথম ভাগ)।

 জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর জন্য এই প্রশ্ন গুলো 2 মার্কসের জন্য আবার কখনো কখনো বড়ো প্রশ্নের সাথে পার্ট প্রশ্ন হিসেবেও আসে। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। এগুলো তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

জীবমণ্ডল কাকে বলে?

 পৃথিবীর শিলামন্ডলের উপরিভাগ, বায়ুমণ্ডলের নিম্নাংশ এবং সমগ্র বারিমন্ডল মিলিতভাবে একটি পরিবর্তনশীল অঞ্চল তৈরি করে। এই অঞ্চলটি হল জীবের ধারক ও বাহক।পৃথিবীর জীবন সম্মিলিত এই অঞ্চলটিকে জীবমন্ডল বলে।

 বিজ্ঞানী J.Tivy 1982 সালে তাঁর ‘Biogeography’ নামক গ্রন্থে জীবমন্ডলের সংজ্ঞা দিয়েছেন-

 “জীবমন্ডল একটি সামগ্রিক এলাকা।পৃথিবীর জল,মাটি, বাতাস যেখানেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে তা জীবমন্ডলের অন্তর্গত।”

 বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে?

 বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন-

  •  বিজ্ঞানী হেকেল 1886 সালে বলেন

                    ” প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিচালনা সম্পর্কে জৈব ও অজৈব উপাদানের সাথে প্রাণের পারস্পরিক সম্পর্কের সম্মিলিত অনুসরণ।”

  •  বিজ্ঞানী E.P. Odum বলেন

                     “একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী জৈব ও অজৈব বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন জিনিসের বিনিময়ে ঘটানো।”

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলির ভিত্তিতে বাস্তুতন্ত্রের একটি স্বাভাবিক সংজ্ঞা দেওয়া যায়-

                   যে প্রণালী বা নিয়মের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবসম্প্রদায় এবং ওই পরিবেশের অজৈব উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ায় উদ্ভূত নির্দিষ্ট উপাদান সমূহের বিনিময় ঘটে, তাকে বাস্তুতন্ত্র বা Ecosystem বলে।

✓১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী A.G. Tanslay সর্বপ্রথম ‘বাস্তুতন্ত্র’ কথাটির ব্যবহার করেন।

বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লেখ।

  •  বাস্তুতন্ত্রের তিনটি উপাদান বর্তমান। যথা-

                   (a) জৈব উপাদান 
                   (b)অজৈব উপাদান 
                   (c)ভৌত উপাদান

  •  একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গঠিত হয়।
  •  বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত সজীব ও অজৈব উপাদান গুলির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সম্পর্কে বর্তমান।
  • বাস্তুতন্ত্র একটি উন্মুক্ত প্রণালী এখানে ইনপুট আউটপুট বর্তমান।
  •  বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট গঠন থাকে।
  •  একটি বাস্তুতন্ত্রের অনেকগুলি খাদ্য প্রণালীতে খাদ্য শক্তি উৎপাদক থেকে ক্রমপর্যায়ে আরো উন্নত উপায়ে আরো উন্নত উপায়ে জীবগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবাহিত হয়।শক্তি প্রবাহের সেই ক্রমিক পর্যায়কে খাদ্যশৃঙ্খল বলে। যেমন-শিকারি খাদ্যশৃঙ্খল।

           ঘাস > ফড়িং >ব্যাঙ > সাপ > বাজপাখি ।

বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব লেখ।

  • স্থলজ-জলজ বাস্তুতন্ত্রের অধ্যায়নের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের জীব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। 
  • পরিবেশের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতার উপর নির্ভরশীল। 
  • আদর্শ বাস্তুতন্ত্র বজায় থাকলে খরা ও বন্যার প্রকোপ থেকে জীবমন্ডলকে রক্ষা করা যায়।
  •  বাস্তুবিদ্যা অধ্যায়নের মাধ্যমে পরিবেশে দূষণ সম্পর্কে জ্ঞান জন্মায়।

খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে?

বিজ্ঞানী ওডাম 1966 খ্রিস্টাব্দে খাদ্যশৃঙ্খলের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা হলো-

 “খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে খাদ্য শক্তি উৎপাদক থেকে ক্রমপর্যায়ে আরো উন্নত জীবগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবাহিত হয়। শক্তি প্রবাহের সেই ক্রমিক পর্যায়কে খাদ্যশৃঙ্খল বলে।”

ঘাস > ফড়িং > ব্যাঙ > সাপ > ময়ূর ।

খাদ্যশৃঙ্খলের বৈশিষ্ট্য লেখ।

  •   উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদ হল খাদ্য শৃঙ্খলের প্রাথমিক ভিত্তি।
  • খাদ্যশৃঙ্খলের নিম্নস্তর থেকে ঊর্ধ্বস্তর পর্যন্ত প্রাণীদের সংখ্যা ও শক্তির পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে। 
  • দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া খাদ্যশৃঙ্খলে তিন থেকে পাঁচটি স্তর থাকে।
  •  খাদ্যশৃঙ্খলের প্রকৃতি সরল।
  •  জীবের সংখ্যানুসারে পরপর সাজালে খাদ্যশৃঙ্খল পিরামিডের আকার ধারণ করে, ইহা ইকোলজিক্যাল পিরামিড নামেও পরিচিত।
  • খাদ্যশৃঙ্খলে নীচের পুষ্টিস্তর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিস্তর পর্যন্ত শক্তির প্রবাহ একমুখী হয়।

 খাদ্যশৃঙ্খল কয় প্রকার ও কি কি?

 খাদ্যশৃঙ্খল প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

  •  শক্তির স্থানান্তর অনুসারে এবং 
  • খাদ্য খাদক সম্পর্কে অনুসারে

 শক্তির স্থানান্তর অনুসারে খাদ্য শৃঙ্খলের শ্রেণীবিভাগ করো।

  শক্তির স্থানান্তর অনুসারে খাদ্য শৃঙ্খল দুই প্রকার। যথা-

1. গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল:

           যে খাদ্য শৃঙ্খলে শক্তি উৎপাদক স্তর থেকে ধাপে ধাপে তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রাণীর দেহে সঞ্চারিত হয় তাকে গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল বলে। উদাহরণ-

              ঘাস > খরগোশ > শৃগাল।

 2. ডেটরিটাস খাদ্য শৃঙ্খল:

                    যে খাদ্যশৃঙ্খলে বিয়োজক স্তর থেকে শক্তি ধাপে ধাপে বৃহৎ খাদক স্তরে প্রবাহিত হয় তাকে ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল বলে। উদাহরণ-বিয়োজকের মাধ্যমে।

         পচা পাতা > লার্ভা > ছোট মাছ > বড় মাছ। 

খাদ্য খাদক সম্পর্ক অনুসারে খাদ্যশৃঙ্খলের শ্রেণীবিভাগ লেখ।

 খাদ্য খাদক সম্পর্ক অনুসারে খাদ্যশৃঙ্খল তিন প্রকার।যথা-

1. শিকারি খাদ্যশৃঙ্খল:

             যে খাদ্য শৃঙ্খলে তৃণভোজী বা শাকাহারী প্রাণীদের থেকে খাদ্য স্তর শুরু হয় এবং খাদ্য খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে বৃহৎ মাংসাশী প্রাণীস্তরে শেষ হয় তাকে শিকারী খাদ্যশৃঙ্খল বলে।

 যেমন- ঘাস > ফড়িং > সাপ > বাজপাখি।

2. পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল:

           যে খাদ্যশৃঙ্খলে খাদ্য খাদক সম্পর্ক বৃহৎ প্রাণী বা জীব থেকে শুরু হয় এবং পরজীবী ক্ষুদ্র প্রাণীতে শেষ হয় তাকে পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল বলে।

উদা- কুকুর > কৃমি > বিয়োজক ।

3. মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল:

                  যে খাদ্য শৃঙ্খলে মৃত বা গলিত জীব থেকে ক্রমান্বয়ে জীবাণুর দিকে শক্তি প্রবাহিত হয় এবং শক্তি মৃতজীবী ও বিয়োজকের মধ্যে আবদ্ধ থাকে তাকে মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল বলে।

উদাহরণ-    মৃত উদ্ভিদ > ছত্রাক > ব্যাকটেরিয়া।

Leave a Comment

error: Content is protected !!