জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন(দ্বিতীয় ভাগ)।

জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এগুলি মূলত ছোট প্রশ্ন হিসেবেই পরীক্ষায় আসে। আশা করি এগুলি তোমাদের সাহায্য করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

খাদ্য জালক বা খাদ্যজাল কাকে বলে?

জীব গোষ্ঠীর মধ্যে অসম প্রকৃতির খাদ্য ও খাদকের সম্পর্কের ফলে একটি বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন খাদ্য শৃঙ্খল এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের দ্বারা যে জালকাকার গঠনের সৃষ্টি হয় তাকে খাদ্য জালক বলে।

 বৈশিষ্ট্য:

  • শক্তি ও পদার্থের পরিবহন আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত অনেকগুলি খাদ্য শৃঙ্খল এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
  •  পুষ্টির বিভিন্ন স্তরে আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত একাধিক খাদ্য ও খাদক থাকে।
  • পুষ্টিপদার্থ বা শক্তি প্রবাহের অনেক পথ আছে এবং তা জটিলভাবে স্থানান্তরিত বা প্রবাহিত হয়।
  •  অনেকগুলি প্রজাতির জীব একসঙ্গে বসবাস করে এবং প্রত্যেক প্রজাতির জীবের সংখ্যা নিয়ে প্রচুর থাকে। জীব-বৈচিত্র বেশি হয়।
  • শক্তির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলেও ছিন্ন খাদ্যজাল প্রকৃতিগত ভাবে দ্রুত মেরামত হয়ে যায় এবং দ্রুত ভারসাম্য লাভ করে।

বাস্তুতান্ত্রিক পিরামিড বা খাদ্য পিরামিড বলতে কী বোঝো?

একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুষ্টির গঠন ও খাদ্যের যোগান ব্যবস্থাকে পরস্পর ক্রমানুসারে সাজালে যে পিরামিড বা শিখর তৈরি হয় তাকে বাস্তুতান্ত্রিক পিরামিড বা খাদ্য পিরামিড বলে।

Read– জীবমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন(প্রথম ভাগ)

শ্রেণীবিভাগ:

খাদ্য পিরামিড কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  •  সংখ্যা পিরামিড, 
  • জীবভর পিরামিড ও 
  • শক্তি পিরামিড

সংখ্যার পিরামিড কাকে বলে?

কোন বাস্তুরীতিতে পুষ্টিস্তর অনুসারে শুধুমাত্র বিভিন্ন জীবের সংখ্যাকে ক্রমপর্যায় সাজালে যে পিরামিড বা শিখর গঠিত হয় তাকে সংখ্যা পিরামিড বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এক্ষেত্রে জীবের আয়তন এর পরিবর্তে জীবের প্রজাতি  সম্পর্কে বিবেচনা করা হয়।
  • এই প্রকার পিরামিড ঋজু অথবা ওল্টানো প্রকৃতির হয়।
  •  পিরামিডের ভূমির অবস্থান করা উৎপাদক এবং সর্বোচ্চ অবস্থান করে সর্বোচ্চ খাদক।
  • ভূমি থেকে শীর্ষের দিকে অর্থাৎ উৎপাদক থেকে সর্বোচ্চ খাদক এর দিকে জীব সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে।
  • সংখ্যা পিরামিডের গঠনের একক হল – 

              সংখ্যা/ বর্গমিটার/ বছর।

জীবভর পিরামিড কাকে বলে কাকে বলে?

জীব প্রজাতির সংখ্যার পরিবর্তে বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন পুষ্টি স্তরে থাকা বিভিন্ন জীবের জীবভরের পরিমাণকে অনুক্রম অনুযায়ী সাজালে যে পিরামিড বা শিখর গঠিত হয় তাকে জীবভর পিরামিড বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  •  এই পিরামিড দ্বারা জীবগোষ্ঠীর আয়তন জানা যায়।
  • খাদ্য শৃঙ্খলে জীবভরের পিরামিডে প্রত্যেক খাদ্যস্তরে জীবভরের পরিমাণ ভূমি থেকে শীর্ষের দিকে ক্রমশ কমতে থাকে।
  • জীবভর পিরামিড গঠনের একক হল –

                        hm/m²/year

শক্তি পিরামিড কাকে বলে?

বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন পুষ্টিস্তরের শক্তির পরিমাণকে ক্রমপর্যায়ে সাজালে যে বাস্তুতান্ত্রিক পিরামিড গঠিত হয় তাকে শক্তি পিরামিড বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই পিরামিড দ্বারা বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা জানা যায়।
  • পিরামিডে ভূমিতে অবস্থিত উৎপাদকের মধ্যে শক্তির সঞ্চয় বেশি এবং সর্বোচ্চ খাদক স্তরে শক্তির পরিমাণ কম।
  • লিন্ডেম্যানের ‘10% Law’ অনুসারে প্রত্যেক পুষ্টিস্তরে শক্তি হ্রাস করে।
  • শক্তি পিরামিড গঠনের একক হল –

            কিলোক্যালোরি/ বর্গমিটার/ বছর।

বায়োম কী?

উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ মাটি ও জলবায়ুর সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতান্ত্রিক একক গড়ে তোলে তাকে বায়োম বলে।
            
           বিজ্ঞানী সিমোন্স(১৯৮২ খ্রীঃ) তাঁর ‘Biogeography Process’ নামক গ্ৰন্থে বলেন- 
” বায়োম হল পরিবেশ প্রণালীর মধ্যে এক বৃহত্তম একক।”
       উদাহরণ- ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য বায়োম, তুন্দ্রা বায়োম।

ইকোটোন কাকে বলে?

পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বায়োমের সংযোগস্থলে অবস্থিত পরিবর্তনশীল অঞ্চল, যেখানে বিভিন্ন জীবসম্রদায় এর সংমিশ্রণ ঘটে তাকে ইকোটোন বলে।

বৈশিষ্ট্য: 

  • ইকোটোন অঞ্চলদুটি ভিন্নধর্মী বা বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবস্থা, মৃত্তিকা, জলবায়ু ইত্যাদির সংমিশ্রণ ঘটে।
  • ইকোটোন অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধি হয়। বাস্তুবিদরা একে ‘Edge Effect’ বলে।
  • ইকোটোন অঞ্চল ক্রমপরিবর্তনশীল ।
  • জীববৈচিত্র্য সর্বাধিক হয়।

Ecology বা বাস্তুবিদ্যা কী?

‘Ecology’ শব্দটি দুটি গ্ৰীক শব্দ ‘Oikos’ অর্থাৎ ‘বাসস্থান’ এবং ‘logos’ অর্থাৎ ‘ জ্ঞান’ থেকে এসেছে।তাই ‘Ecology’ বলতে বোঝায় বাসস্থান সম্পর্কে জ্ঞান।
                  
                  জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীব ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আলোচিত হয়, তাকে বাস্তুবিদ্যা বা ‘Ecology’ বলে।

✓আর্নেস্ট হেকেল সর্বপ্রথম Ecology শব্দটি ব্যবহার করেন।

   উদ্দেশ্য:

  •  ইকোলজি সম্পর্কে জানলে বিভিন্ন জীবের সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায়।
  •  জীবের জিন ও কোষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। জৈব সম্পদ সংরক্ষণ আরও বাস্তবমুখী হয়।
  •  ইকোলজি পাঠের মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

বাস্তুতন্ত্রের 10% Law কি?

 জীব বিজ্ঞানী রেমন্ড লিন্ডেম্যান ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বাস্তুতন্ত্রের শক্তি প্রবাহ বিশ্লেষণ করার জন্য ‘10% Law’ নামে একটি সূত্রের উদ্ভাবন করেন।

 মূল কথা:

 ট্রফিক পিরামিডে কোন শক্তিরই ১০০ ভাগ রূপান্তর সম্ভব নয়। সব সময়ই তাপ হিসেবে কিছু শক্তির ক্ষয় হয়। এর অর্থ হলো যখন কোন তৃণভোজী প্রাণী বৃদ্ধি ও শক্তির জন্য খাদ্য রূপে উদ্ভিদ ভক্ষণ করে, তখন উদ্ভিজ্জ পদার্থের মধ্যে সঞ্চিত সব খাদ্যশক্তিকে তাদের পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। উদ্ভিজ্জ পদার্থকে প্রাণীজ পদার্থে রূপান্তরের সময় কিছু শক্তি তা প্রভাবে হ্রাস পায়। যা বাস্তুতন্ত্র থেকে বেরিয়ে যায় এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাস বা রেজন ক্রিয়ার জন্য কিছু শক্তি তাপরূপে হ্রাস পায়,যা বাস্তুতন্ত্র থেকে বেরিয়ে যায়। সুতরাং ক্রমোচ্চ ট্রফিক স্তরে শক্তির স্থানান্তরের সঙ্গে শক্তির যোগানো কমতে থাকে।

সূত্র:

 এই তত্ত্ব অনুযায়ী কোন পুষ্টি স্তরের মোট শক্তির ৯০% ব্যবহৃত হয় এবং ১০% শক্তি ওই পুষ্টি স্তর থেকে পরবর্তী পুষ্টিস্তরে প্রবাহিত হয়।
  সৌর শক্তি > উৎপাদক(স্বভোজী 1000 kcl) > হরিণ(100kcl) > বাঘ(10 kcl)
         হরিণ যদি ১০০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে তাহলে ৯০% খাদ্য হরিণের দেহ গঠনের কাজে লাগে। আর ওই ১০% খাদ্যের ১০% খাদ্য অর্থাৎ ১০ গ্রাম খাদ্য বাঘের দেহ গঠনে কাজে লাগে।

বাস্তু তন্ত্রের শক্তি প্রবাহ কাকে বলে?

 বাস্তুতন্ত্রে রূপান্তরিত সৌর শক্তির এক জীব স্তর থেকে অন্য জীব স্তরে অর্থাৎ উৎপাদক থেকে বিভিন্ন খাদকের দেহে স্থানান্তরকরণকে শক্তি প্রবাহ বলে।
       
              খাদ্যশৃঙ্খল বা খাদ্য জলকের মাধ্যমে পুষ্টি স্তর অনুযায়ী শক্তি ধাপে ধাপে ছড়িয়ে যায়। যেমন-

  সৌরশক্তি > ঘাস > ফড়িং > ব্যাঙ > সাপ > ময়ূর ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!