
জেট বায়ুপ্রবাহ:
ইংরেজি জেট কথাটির আভিধানিক অর্থ সংকীর্ণ পথ দিয়ে প্রবল বেগে বের হওয়া আর আবহাওয়াবিদ্যায় ঊর্ধ্ব ট্রপোশিয়ারের অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন একপ্রকার বায়ুপ্রবাহের নাম জেট বায়ু প্রবাহ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় অর্থাৎ ট্রপোপজের সামান্য নীচে একটি সংকীর্ণ পথ দিয়ে আঁকাবাঁকা বা সর্পিলাকারে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত প্রবল গতিবেগ সম্পন্ন এক অতি শীতল বায়ু স্রোতকে জেট বায়ুপ্রবাহ বলে।
মৌসুমী বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক:
1973 সালে ভারত রুশ যৌথ অনুসন্ধান MONEX (Monsoon Experiment) থেকে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় এপ্রিল মে মাসে দু ধরনের জেট বায়ুপ্রবাহ মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি ঘটায়।
1. উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট:
এটি হলো উত্তর ভারতে 20° থেকে 24° উত্তর অক্ষাংশে 9 থেকে 12 কিলোমিটার উচ্চতায় 150 থেকে 300 মিলিবার চাপ সমতলে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত দ্রুতগতির তরঙ্গাকার বায়ুপ্রবাহ। এই জেট প্রবাহ মে মাসের শেষভাগে তিব্বত মালভূমির তাপীয় প্রভাবে বাঁধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হিমালয়ের উত্তরে 40° উত্তর অক্ষাংশে সরে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
পশ্চিমা জেট দুর্বল হওয়ায় ভারত মহাসাগরের বাষ্পপূর্ণ সামুদ্রিক বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু রূপে প্রবাহিত হতে থাকে। অক্টোবর মাসে তিব্বত মালভূমির উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারের প্রতীপ ঘূর্ণবাত অবলুপ্ত হলে পশ্চিমা জেট পুনরায় উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওই মৌসুমী বায়ুকে পশ্চাদপসরণে বাধ্য করে।
2. ক্রান্তীয় পুবালি জেট:
এটি হলো দক্ষিণ ভারতে 15° উত্তর অক্ষাংশে 9 থেকে 12 km উচ্চতায় 250 থেকে 300 মিলিমার চাপ সমতলে অবস্থিত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত দ্রুতগতির তরঙ্গাকার বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহের শক্তির উৎস হল তিব্বত মালভূমির তাপ সঞ্চালন ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের লীনতাপ। মে মাসে পশ্চিমা জেট হিমালয়ের উত্তরে সরে গেলে এটি দক্ষিণ ভারতে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ে নেমে এসে মালয়েশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
পুবালি জেট জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সক্রিয় থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ বজায় রাখে। কয়েক দিন একটানা বৃষ্টিপাতের লীনতাপে এই জেটের গতিশক্তি বেড়ে গিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মৌসুমী বায়ুর শক্তি বৃদ্ধি করে। এই জেট দুর্বল হয়ে পড়লে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ছেদ ঘটে। সেপ্টেম্বর মাসে এটি ভারত থেকে সরে গেলে মৌসুমী বায়ু দুর্বল হতে শুরু করে। এই পুবালি জেটটি পশ্চিম দিকে বিস্তৃত হয়ে আফ্রিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে মৌসুমী বায়ুকে সক্রিয় করে তোলে।