দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস অঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।

দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস অঞ্চল সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

পম্পাস অঞ্চল কাকে বলে?

স্পেনীয় শব্দ ‘পম্পাস’ এর অর্থ বিস্তীর্ণ প্রান্তর বা সমতল ক্ষেত্র। আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে লা-প্লাটা নদীর অববাহিকা অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত যে নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি দেখা যায় তাকে পম্পাস বলে। এর আকৃতি অনেকটা অর্ধেক চাঁদের মতো। এর আয়তন প্রায় 7.5 লক্ষ বর্গকিলোমিটার।

পম্পাস অঞ্চলের অবস্থান ও সীমা লেখ।

অবস্থান:

       আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের প্রায় সমগ্ৰ অংশ নিয়ে এই তৃণভূমি অঞ্চল গঠিত। ব্রাজিলের দক্ষিণের সামান্য অংশ এর অন্তর্গত। এই তৃণভূমি অঞ্চল 30° দক্ষিণ থেকে 38° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং 54° পশ্চিম থেকে 65° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।

সীমা:

        এই তৃণভূমির উত্তরে গ্ৰানচাকো সমভূমি ও ব্রাজিল উচ্চভূমি, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি ও পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল অবস্থিত।

পম্পাস অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি ও নদনদী সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূ-প্রকৃতি:

  1. ‘পম্পা’ শব্দের অর্থ’স্থান’ বা ‘,এলাকা’। পারানা-উরগুয়ে নদীবেষ্টিত হওয়ায় পম্পাস অঞ্চলের ভূমিরূপ সাধারণভাবে সমতল।
  2. পম্পাস তৃণভূমি অঞ্চল প্রধানত নদীবাহিত পলি, বালি ও কাঁদা এবং বায়ুবাহিত লোয়েস মৃত্তিকা দিয়ে গঠিত হয়েছে। 
  3. এই অঞ্চল সমভূমি হলেও মাঝে মাঝে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড় বা শৈলশিরা থাকায় এখানকার ভূমি কিছুটা তরঙ্গায়িত।
  4. পম্পাস অঞ্চলের পশ্চিম ভাগ অর্থাৎ আন্দিজ পর্বতের উচ্চতা অপেক্ষাকৃত বেশি এবং পূর্ব ভাগ অর্থাৎ আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে উচ্চতা বেশ কম, তাই ভূমির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে।
  5. এখানকার কোনো কোনো জায়গায় ছোটো ছোটো জলাভূমি দেখা যায়, যাদের এসটেরো বলে।

নদনদী:

            এই অঞ্চলের প্রধান দুটি নদীর নাম পারানা ও প্যারাগুয়ে। এই দুটি নদী আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ার্স শহরের কাছে উরুগুয়ের সাথে মিলিত হয়ে লা-প্লাটা নামে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে। এখানকার আরও কয়েকটি নদী আছে, যেমন – সালাডো, কুয়ার্তো, টারসেরো, কলোরাডো প্রভৃতি।

পম্পাস অঞ্চলের জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে আলোচনা কর।

জলবায়ু:

  1. এখানকার জলবায়ু উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। এই অঞ্চল সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার জলবায়ু বেশ আরামদায়ক। তবে এখানে গ্ৰীষ্মের থেকে শীত দীর্ঘস্থায়ী।
  2. জানুয়ারি মাসে অর্থাৎ গ্ৰীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা 20°C থেকে 24°C এবং জুলাই মাসে অর্থাৎ শীতকালীন গড় তাপমাত্রা 8°C থেকে 10°C হয়।
  3. এখানে সারাবছরই বৃষ্টিপাত হয়, তবে পরিমাণে কম। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 50cm থেকে 100cm। এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পূর্বাংশে বেশি তাই পূর্বাংশের নাম আর্দ্র পম্পাস এবং পশ্চিমাংশে কম তাই পশ্চিমাংশের নাম শুষ্ক পম্পাস। 
  4. এই অঞ্চলের প্রবাহিত স্থানীয় বায়ুর নাম ‘ পম্পেরো’।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

               নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ও কম বৃষ্টিপাতের জন্য এখানে তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বাংশে অপেক্ষাকৃত বৃষ্টিপাত বেশি হয় বলে এখানে ঘাসগুলি কিছুটা বড়ো (প্রায় 1 মিটারের মতো দীর্ঘ)। এছাড়া মধ্য-পূর্বাংশের পাহাড়ি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নাতিশীতোষ্ণ মিশ্র গাছ দেখা যায়। যেমন – পপলার, ইউক্যালিপটাস, লুসার্ন, আলফালফা প্রভৃতি। পম্পাস তৃণভূমির উত্তরে পারানা-প্যারাগুয়ে নদী উপত্যকার ঝোপঝাড় ও পাতাঝরা গাছসহ যে তৃণভূমি আছে, তাকে গ্ৰানচাকো বলে।

পম্পাস অঞ্চলের কৃষিকাজ সম্পর্কে আলোচনা কর।

কৃষিব্যবস্থা:

              কৃষিকাজে দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস অঞ্চল বেশ উন্নত। এখানকার নদী গঠিত উর্বর পলি মৃত্তিকা, পরিমিত বৃষ্টিপাত, তরঙ্গায়িত সমভূমি কৃষিকাজের পক্ষে অনুকূল। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উন্নত প্রথায় এখানে কৃষিকাজ করায় উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। এজন্য পম্পাস পৃথিবীর অন্যতম কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এখানে উন্নত খামার পদ্ধতিতে বা ব্যাপক কৃষি পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়।

উৎপন্ন ফসল:

           এখানে প্রচুর পরিমাণে গম উৎপন্ন হয়। মোট গম উৎপাদনের শতকরা 60 ভাগ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এই অঞ্চলকে দক্ষিণ আমেরিকার গমের ঝুড়ি বলা হয়। গম ছাড়াও এখানে ভুট্টা, বার্লি, আখ, তুলা, নানারকম ফল, শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

পম্পাস অঞ্চলের পশুপালন সম্পর্কে আলোচনা কর।

পশুপালন ব্যবস্থা:

             পম্পাস অঞ্চলের বিস্তৃত তৃণভূমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন করা হয়। এখানকার পশুপালন ব্যবস্থা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এখানকার পশুচারণভূমিকে এস্টেনশিয়া বলা হয়। পূর্ব ও মধ্য ভাগের বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ঘাসগুলি বড়ো হয় বলে বেশি সংখ্যায় গবাদিপশু এবং পশ্চিম ও দক্ষিণাংশের স্বল্প বৃষ্টিপাত যুক্ত ঠান্ডা জলবায়ুতে বেশি সংখ্যায় মেষ প্রতিপালন করা হয়। আন্দিজ পর্বতের পাদদেশে করডোবা অঞ্চল দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রধানত দুগ্ধ প্রদানকারী গোরু প্রতিপালন করা হয়। বুয়েনস এয়ার্স প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশই পম্পাস অঞ্চলের প্রধান পশুপালন কেন্দ্র। আর্জেন্টিনার প্রায় 40% ভেড়াই বুয়েনস এয়ার্স প্রদেশে প্রতিপালন করা হয়। গবাদিপশু প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে উর্বর তৃণক্ষেত্রগুলিতে প্রচুর ঘাস লাগানো হয়। যেমন – আলফালফা, হে ক্লোভার প্রভৃতি।

উৎপন্ন পশুজাত দ্রব্য:

              পশুপালন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে মাংস, পশম, চামড়া, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ( ঘি, মাখন, চিজ, পনির, ক্রিম প্রভৃতি) উৎপন্ন হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মাংস রপ্তানিতে আর্জেন্টিনা বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে। 

Read-দক্ষিণ আমেরিকা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী।

পম্পাস অঞ্চলের খনিজ সম্পদ ও শিল্প সম্পর্কে আলোচনা কর।

খনিজ সম্পদ:

প্রধানত পলিগঠিত সমতলভূমি হওয়ার কারণে এখানে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা কম। এখানে খুব অল্প পরিমাণে আকরিক তামা, টাংস্টেন, কয়লা, টিন, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি পাওয়া যায়।

শিল্প:

পশুপালনে উন্নতির জন্য এখানে পশুজাত কাঁচামাল ভিত্তিক কয়েকটি শিল্পের উন্নতি হয়েছে। যেমন – 

  • দুগ্ধ শিল্প( দুধ থেকে মাখন, চিজ, পনির, গুঁড়ো দুধ প্রভৃতি উৎপাদন)
  • মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প
  • খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প
  • চামড়া শিল্প
  • পশম শিল্প প্রভৃতি।

এইসব শিল্পের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি হল – বুয়েনস এয়ার্স, লা-প্লাটা, করডোবা, রোজারিও প্রভৃতি।

        এছাড়া কৃষিজাত কাঁচামালকে কেন্দ্র করে এখানে ময়দা, চিনি, বেকারি প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেছে।

উপরোক্ত কেন্দ্রগুলিতে অন্যান্য যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে  তার মধ্যে – 

  • ইঞ্জিনিয়ারিং
  • রাসায়নিক
  • বস্ত্রবয়ন
  • খনিজতেল শোধন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।


This post was updated on 2023-02-22 17:58:00.

Leave a Comment

error: Content is protected !!