নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। এটি 2019 সালে পরীক্ষায় এসেছিল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

            উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ঢাল খুব বেশি হওয়ায় নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় এবং নদী বাহিত পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় নদীর ক্ষয়সাধন প্রক্রিয়া এবং ক্ষয়িত পদার্থের বহন কার্যকর থাকে। উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর সঞ্চয় কাজ প্রায় করে না বললেই চলে। পার্বত্য প্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলি হল – 

1. ‘I’ আকৃতির উপত্যকা:

                পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। নদীবাহিত ক্ষয়ীভূত প্রস্তরখন্ড জলস্রোতের দ্বারা বয়ে যাওয়ার সময় ক্রমাগত নদীর তলদেশে আঘাত করে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে। এই সময় নদীর নিম্ন ক্ষয় খুব বেশি কিন্তু পার্শ্ব ক্ষয় খুব কম হয়। ফলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ‘I’ এর মতো দেখতে হয়, তাই একে ‘I’ আকৃতির উপত্যকা বলে।          শুষ্ক ও প্রায়শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে এই উপত্যকার সৃষ্টি হয়।

আকৃতির উপত্যকা

2. ‘V’ আকৃতির উপত্যকা:

              আর্দ্র ও আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নদীর পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল অধিক থাকায় নদীগুলি প্রবলভাবে নিম্নক্ষয় করে। এই নিম্নক্ষয়ের ফলে যেমন নদী উপত্যকাগুলি গভীর হয় তেমনি বৃষ্টিপাত, আবহবিকার, ধস, তুষারপাত প্রভৃতি ক্ষয়কার্যের ফলে উপত্যকার পার্শ্বক্ষয়ও হয়। ফলে নদী উপত্যকা আরও চওড়া হয়ে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়।

        কঠিন শিলায় গঠিত পার্বত্য অঞ্চলের ‘V’ আকৃতির উপত্যকা বেশ খাড়া ও সংকীর্ণ হয়। কিন্তু কোমল শিলায় গঠিত উপত্যকা অনেক চওড়া ও উন্মুক্ত হয়। 

3. গিরিখাত ও ক্যানিয়ন:

                  নদীর পার্বত্য প্রবাহে তীব্র ঢালের জন্য স্রোত বেশি হওয়ায় জলস্রোতের ফলে নিম্নক্ষয়ের পাশাপাশি পার্শ্বক্ষয়ও হয়। ফলে নদীবক্ষে শিলা খন্ডের ঘর্ষণে যে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো অতিগভীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়, তাকে গিরিখাত বলে। যেমন – পেরুর এল-ক্যানন-দ্য-কলকা(3223 মিটার), পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত হল মধ্য নেপালের কালীগন্ডকী(5571 মিটার)।

                শুষ্ক মরু পার্বত্য অঞ্চলে বা মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অভাবে পার্শ্বক্ষয় একেবারেই হয় না। এই অঞ্চলে কোমল শিলায় ওপর দিয়ে খরস্রোতা নদী বয়ে গেলে নিম্ন ক্ষয়ের ফলে খাড়া পাড় বিশিষ্ট যে সংকীর্ণ সুগভীর খাতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্যানিয়ন বলে। যেমন – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্ৰান্ড ক্যানিয়ন, পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যানিয়ন (1.6 km গভীর, 6-8 km চওড়া এবং 415 km দীর্ঘ)।

4. জলপ্রপাত:

              পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলার সন্ধিস্থল উন্মুক্ত হয় এবং উপরের কঠিন শিলাস্তর ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচের নরম শিলাস্তর বেড়িয়ে আসে। নরম শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার কারণে নদী স্রোত হঠাৎ খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে প্রবলবেগে নীচে পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে। যেমন – ভেনেজুয়েলার সাল্টো অ্যাঞ্জেল (986 মিটার) পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।


✓ মালভূমির খাড়া ঢাল বেয়ে কোনো নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। এগুলি স্কার্প প্রপাত নামে পরিচিত। যেমন – আফ্রিকার মালভূমিতে কঙ্গো নদীর উপর লিভিংস্টোন প্রপাত (275 মিটার)।

5. পটহোল বা মন্থকূপ:

                নদীর গতিপথে কোমল শিলা অবস্থান করলে, নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত বড়ো বড়ো প্রস্তরখন্ড এর সাথে নদীখাতের সংঘর্ষের ফলে অধিকাংশ উচ্চপ্রবাহযুক্ত নদীতে মাঝে মাঝে যে ছোটো ছোটো গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে পটহোল বা মন্থকূপ বলে।  

      এই গর্তগুলির আয়তন ও গভীরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্থ অপেক্ষা মন্থকূপের গভীরতা বেশি হয়। 

          যেমন – ঝাড়খণ্ডের সড়াই কেল্লার নিকট খরকাই নদীর গর্ভে অসংখ্য পটহোল বা মন্থকূপ দেখা যায়।

পটহোল বা মন্থকূপ


6. শৃঙ্খলিত শৈলশিরা:

                  পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সময় নদীর গতিপথে কঠিন শিলাগঠিত শৈলশিরা বা পাহাড় অবস্থান করলে, তার এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নদী শৈলশিরিগুলির পাদদেশ ক্ষয় করে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে ওই শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয়, শৈলশিরাগুলি উপত্যকার মাঝে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে অবস্থান করছে। একে শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলে।

শৃঙ্খলিত শৈলশিরা

7. খরস্রোত বা Rapid:

                    এটি জলপ্রপাতের ক্ষুদ্র রূপ। পর্যায়ক্রমিক কঠিন ও কোমল শিলার অনুভূমিক স্তর যখন অপেক্ষাকৃত ছোটো ও কম দৈর্ঘ্যের জলপ্রপাত গড়ে তোলে তখন তাকে খরস্রোত বা Rapid বলে। 

         যেমন – রাঁচিতে ভুসুর নদীতে হিন্দু ব্রিজের পশ্চিমে খরস্রোত দেখা যায় (300 মিটার)।

8. প্লাঞ্জপুল বা প্রপাতকূপ:

            নীচের দিকে জলপ্রপাতের গতিবেগ ও শক্তি খুব বেশি থাকে। ফলে, প্রপাতের ঠিক নীচের অংশটিতে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়ে বিশাল গর্ত তৈরি হয়। অনেকটা হাঁড়ির মতো দেখতে এই গর্ত প্রপাতকূপ নামে পরিচিত। 

             যেমন – মধ্যপ্রদেশের পাচমারিতে লিটিল ফলের নীচে প্রপাতকূপ দেখা যায়।




This post was updated on 2023-02-22 17:57:59.

Leave a Comment

error: Content is protected !!