নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে? নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠশিল্পে অনুন্নত কেন?

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে এবং নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠশিল্পে অনুন্নত কেন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি সচরাচর পরীক্ষায় এসে থাকে। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।


নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে?

নিরক্ষীয় জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে অর্থাৎ নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 5° থেকে 10° অক্ষাংশের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পর্যাপ্ত উষ্ণতার প্রভাবে শক্ত কাঠের গাছপালা সমন্বিত যে ঘন অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে তাকে ক্রান্তীয় বা নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য বা চিরহরিৎ অরণ্য বলা হয়।

        নিরক্ষীয় অঞ্চলে এর অবস্থান বলে এবং সারাবছর সবুজ পাতা থাকে বলে এই অরণ্যকে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য বলা হয়।

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাষ্ঠশিল্পে অনুন্নত হওয়ার কারণ:

         নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যের কাঠ বাণিজ্যিক ভাবে খুব মূল্যবান হলেও এই অঞ্চলের কাঠের বাণিজ্যিক ব্যবহার অত্যন্ত কম। বিভিন্ন রকম প্রতিকূলতা এর জন্য দায়ী। নিরক্ষীয় অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠ শিল্পে অনুন্নত হওয়ার কারণগুলি হল –

1. দুর্গম অরণ্য:

          বিভিন্ন প্রকার লতাপাতা, গুল্ম, আগাছা, বনভূমির তলদেশে জন্মায় বলে অরণ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা অসুবিধাজনক।

2. বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমাবেশ:

            এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাশাপাশি সহাবস্থান করে বলে প্রয়োজনীয় বৃক্ষ খুঁজতে অনেক অসুবিধা হয় এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঠ সংগ্রহ করা অসুবিধা জনক।

3. পরিবহনগত সমস্যা:

            এই অরণ্যের মাটি সব সময় ভিজে থাকে বলে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যায় না। ফলে, বনের ভিতর থেকে কাঠ পরিবহনের জন্য বড়ো বড়ো ভারী যানবাহন ব্যবহার করা যায় না।

4. প্রযুক্তিগত সমস্যা:

            এই অরণ্যের গাছগুলি এত বড়ো এবং মোটা হয় যে সাধারণ করাত দিয়ে গাছ কাটা সম্ভব নয়। উন্নত যন্ত্রপাতির দরকার হয়, যা বনের ভিতরে বয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। 

5. পাশে থাকা গাছের ক্ষতি:

              গাছ কাটার পর তাকে আশেপাশে ফেলা কঠিন হয়। এছাড়া একটি বড়ো গাছের ডালপালার জন্য অনেক ছোটো ছোটো গাছ নষ্ট হয়ে যায়।

6. নরম মাটি:

              সারাবছর বৃষ্টি হওয়ার ফলে এই অরণ্যের মাটি নরম প্রকৃতির হয়। ফলে মাটির উপর দিয়ে সহজে বড়ো বড়ো গাছের কাঠ বয়ে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।

7. অত্যধিক ওজন:

              অধিকাংশ কাঠ শক্ত ও ভারী হওয়ায় জলপথে ভাসিয়ে আনা সম্ভব নয়। ফলে কাষ্ঠ আহরণে পরিবহন ব্যয় বেশি হয়।

8. প্রতিকূল পরিবেশ:

              ভিজে স্যাঁতসেঁতে ও উষ্ণ পরিবেশ এবং বিষাক্ত সাপ ও কীটনাশক ও বিপজ্জনক জন্তুদের জন্য শ্রমিকদের পক্ষে বনভূমিতে কাঠ কাটার খুবই বিপজ্জনক।

9. শ্রমিকের অভাব:

               বনভূমি খুবই বিপজ্জনক হওয়ায় বনভূমির সংলগ্ন এলাকায়ও জনবসতি কম হয় বলে শ্রমিক পাওয়া যায় না।

10. মূলধনের অভাব:

             নিরক্ষীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত নয় বলে কাষ্ঠশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন, উন্নত যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না। 

                   এছাড়া প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। এই কারণে, কাঠের চাহিদা ও ব্যবহার কম। পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বের কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে প্রতিকূলতাকে দূর করে বর্তমানে এই বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, এই সংগ্ৰহের পরিমাণ অন্যান্য বনাঞ্চল অপেক্ষা কম। 


This post was updated on 2023-02-22 17:57:41.

Leave a Comment

error: Content is protected !!