পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাস লেখ।

 পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাস সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এখান থেকে পুরো প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসতে পারে আবার কখনো কখনো ছোট ছোট প্রশ্ন হিসেবেও আসতে পারে। আশা করি এগুলি তোমাদের সাহায্য করবে। তোমার নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে কোনো দেশ বা অঞ্চলের নিম্নস্তর থেকে একেবারে উচ্চস্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন স্তরে পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাস হল-

A. বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল:

                বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে যখন জাতীয় স্তরে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তোলা হয় তখন তাকে বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল বলে। জাতীয় পরিকল্পনা পদ্ধতিকে নির্দেশ করে বলে এই পরিকল্পনা কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা নামেও পরিচিত।

উদ্দেশ্য: 

  • সমগ্ৰ জাতির সার্বিক উন্নতি।
  • কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন।
  • জাতীয় ও মাথাপিছু আয় সহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
  • দেশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ।
  • দেশব্যাপী ডাক,রেল, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি।

বৈশিষ্ট্য:

  • পরিকল্পিত অঞ্চলের ক্রম অনুযায়ী এটি প্রথম ক্রমের অন্তর্গত।
  • এই পরিকল্পনা অঞ্চল বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে গড়ে তোলা হয়।
  • দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।
  • জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য রূপায়িত হয়।
  • শক্তি ও অন্যান্য সুপ্ত সম্পদে পরিপূর্ণ থাকে।
  • সমস্ত প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দফতর ও জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।

উপবিভাগ:

           বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল সময়ের ভিত্তিতে তিন ধরনের পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।যথা-

• স্বল্প মেয়াদী: 2 থেকে 5 বছরের জন্য পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।

• মধ্য মেয়াদী: 5 থেকে 15 বছরের জন্য পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।

• দীর্ঘ মেয়াদী: 15 বছরের বেশি সময়ের জন্য পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।

Read– দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।

B. মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চল:

                সম্পদকে যথাযথভাবে আহরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যখন বৃহদাকার অঞ্চলকে কতকগুলি প্রধান অর্থনৈতিক এককে ভাগ করা হয় তখন তাকে মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চল বলা হয়।

উদ্দেশ্য:

  • রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।
  • জাতীয়, রাজ্য ও স্থানীয় স্তরের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন।
  • রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি দ্বিতীয় শ্রেণীর পরিকল্পনা অঞ্চল।
  • অঞ্চলগুলি সাধারণত প্রশাসনিক সীমানা দিয়ে নির্দিষ্ট করা হয়।
  • এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একক হিসেবে গণ্য।
  • অঞ্চলের গুরুত্ব অনুযায়ী পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।
  • সমস্ত ভৌগোলিক পরিবেশের একই ধরনের বৈশিষ্ট্য ঘটে থাকে।

C. ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল:

               বৃহদাকার বা পূর্ণাঙ্গ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত সহযোগী অঞ্চলরূপে একটিমাত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন স্বল্প বিস্তৃত ভৌগোলিক স্থানকে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল বলা হয়।

উদ্দেশ্য:

  • বিভিন্ন স্তরে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার সঠিক পথ খুঁজে বের করা।
  • বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ।
  • স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্ৰহণ।
  • স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার,অপচয় রোধ করে সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা গ্ৰহণ।
  • স্থানীয় পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা উন্নত করা।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি আঞ্চলিকীকরণের তৃতীয় স্তর।
  • উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা প্রাধান্য পায়।
  • এটি হল সমস্যা সংকুল বা অনগ্ৰসর ক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট করা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষুদ্রতম একক।
  • স্থানীয় জনসাধারণ দ্বারা পরিকল্পনা রচনা ও রূপায়ণ হয় বলে একে ব্যক্তিগত পরিকল্পনাও বলে।

উপবিভাগ:

       ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

1. জেলাস্তর পরিকল্পনা:

             এই স্তরে জেলাকে একক ধরে পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। বিভিন্ন জেলার মধ্যে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে স্থানীয় পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে এই ধরনের পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়। এই স্তরের পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ করতে District Planning and Development Council গঠন করা হয় (DPDC)। জলসেচ, কৃষির অগ্ৰগতি, পশুপালন, জনস্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ এই পরিকল্পনায় অগ্ৰাধিকার পায়।

2. ব্লকস্তরের পরিকল্পনা:

               এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলাকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা হয়।এই স্তরের মুখ্য আধিকারিক হলেন Block Development Officer( BDO)।এই স্তরের পরিকল্পনার বিষয়গুলি হল – 

  • জলসেচের উন্নতি।
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অগ্ৰগতি।
  • পানীয় জল সরবরাহ।
  • স্বাস্থ্য পরিষেবা।
  • মৎস্যচাষ।
  • মৃত্তিকা সংরক্ষণ।

3. পঞ্চায়েত স্তরের পরিকল্পনা:

           এই স্তরে গ্ৰাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিকল্পনার রূপায়ণ করে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। যেমন-

গ্ৰাম ও শহরের সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ।

জনকল্যাণ মূলক কর্মসূচি গ্ৰহণ করা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!