পর্বত:
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1000 মিটারের বেশি উচ্চতা সম্পন্ন বহুদূর বিস্তৃত শিলাময় ভূমিরূপ, যার ভূ-প্রকৃতি বন্ধুর অর্থাৎ আপেক্ষিক উচ্চতা বেশি, ঢাল বেশ খাড়া এবং অসংখ্য শৃঙ্গ ও গিরিখাত বর্তমান, তাকে পর্বত বলে।
যেমন – হিমালয়, আল্পস, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি।
পর্বতের শ্রেণিবিভাগ:
উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে পর্বতকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
1. ভঙ্গিল পর্বত:
‘ভঙ্গিল’ শব্দের অর্থ হল ‘ভাঁজ’। প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্ট অনুভূমিক পার্শ্বচাপের প্রভাবে কোনো বিস্তৃত অঞ্চলে কোমল পাললিক শিলা স্তর ধীরে ধীরে উত্থিত হয়ে ও বিভিন্ন প্রকার ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে যে পর্বতের উৎপত্তি হয়, তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।
যেমন – এশিয়ার হিমালয় পর্বত, ইউরোপের আল্পস, উত্তর আমেরিকার রকি এবং দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ (সবথেকে দীর্ঘতম) ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
ভঙ্গিল পর্বতের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- প্রধানত পাললিক শিলাস্তর দ্বারা এই পর্বত গঠিত হয়।
- পাললিক শিলাস্তর থেকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ঘটে বলে এই পর্বতে জীবাশ্ম লক্ষ করা যায়।
- প্রবল পার্শ্বচাপে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি ঘটে বলে এই পর্বতের পাললিক শিলা অনেক স্থানে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।
- প্রায় সকল ভঙ্গিল পর্বতেই প্রবল চাপের কারণে বিভিন্ন প্রকার ভাঁজ ও চ্যুতি দেখা যায়।
- ভঙ্গিল পর্বতের বিস্তার ও উচ্চতা খুব বেশি হয় এবং এখানে অসংখ্য গিরিশৃঙ্গ এবং গিরিখাত দেখা যায়।
- ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূ-পৃষ্ঠের দুর্বল অংশে অবস্থিত হওয়ায় খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে থাকে।
2. স্তূপ পর্বত:
প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্ট প্রায় সমান্তরাল দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ ধীরে ধীরে উঠে আসার ফলে কিংবা চ্যুতি দুটির মধ্যবর্তী অংশ বসে গেলে, অপর অংশ খাড়া থেকে যে পর্বত গঠন করে, তাকে স্তূপ পর্বত বলে।
যেমন – ভারতের সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বত, জার্মানির ব্ল্যাকফরেস্ট, ফ্রান্সের ভোজ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
স্তূপ পর্বতের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- স্তূপ পর্বতের উপরিভাগ চ্যাপটা বা প্রায় সমতল অর্থাৎ বন্ধুরতা কম।
- স্তূপ পর্বতের উচ্চতা অপেক্ষাকৃত কম।
- এই পর্বতের পার্শ্বস্থ অংশ বেশ খাড়া।
- স্তূপ পর্বতের পার্শ্বস্থ ঢাল বা চ্যুতি তল কঠিন রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত।
- স্তূপ পর্বতের পাশে গ্ৰস্ত উপত্যকার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
- স্তূপ পর্বত সাধারণত শৃঙ্গ বিহীন।
3. আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত:
পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপের তারতম্য, মহাদেশীয় বা মহাসাগরীয় পাতের সরণ প্রভৃতি কারণে ভূ-গর্ভের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা ভূ-ত্বকের কোনো গভীর ফাটল বা ছিদ্রমুখ দিয়ে অথবা দুটি পাতের সংযোগ সীমানা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে নির্গমন মুখের চারিদিকে লাভারূপে সঞ্চিত হয়ে পর্বতের আকার ধারণ করে, একেই আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে।
যেমন – ভারতের ব্যারেন ও নারকোন্ডাম, জাপানের ফুজিয়ামা, ইতালির ভিসুভিয়াস ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
- ভূ-পৃষ্ঠের দুর্বল অংশ বা পাতসীমানা বরাবর আগ্নেয় পর্বত দেখা যায়।
- আগ্নেয় পার্বত্য অঞ্চল ভূমিরূপ প্রবণ।
- আগ্নেয় পর্বতে এক বা একাধিক জ্বালামুখ থাকে।
- পর্বতের আকৃতি শঙ্কু বা ত্রিভুজের মতো।
- আগ্নেয় শিলা, ভস্ম, সিন্ডার চারিদিকে সঞ্চিত হয়।
4. ক্ষয়জাত বা অবশিষ্ট পর্বত:
ভূ-পৃষ্ঠের উপর বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন – নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি দ্বারা কোনো বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি বা পর্বত দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার পর যে অবশিষ্ট অংশ পর্বতরূপে দাঁড়িয়ে থাকে, তাকে ক্ষয়জাত বা অবশিষ্ট পর্বত বলে।
যেমন – ভারতের আরাবল্লী ও নীলগিরি, ইউরোপের সিয়েরানেভেদা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপেলেশিয়ান প্রভৃতি।
- বিভিন্ন প্রকার মালভূমি বা পর্বত ক্ষয় হয়ে ক্ষয়জাত পর্বতের সৃষ্টি হয়।
- ভঙ্গিল পর্বতের ন্যায় এই পর্বত দেখতে গম্বুজের মতো।
- পর্বতের উচ্চতা কম হয়।
- পর্বতের উপরিভাগ তেমন ঊঁচু-নীচু বা এবড়ো খেবড়ো হয় না।
- পর্বতের ঢাল কম হয়।
- প্রধানত রূপান্তরিত বা আগ্নেয় শিলা দ্বারা এই পর্বত গঠিত হয়।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:48.