পশ্চিমবঙ্গের চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

পশ্চিমবঙ্গের চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বাগিচা ফসল হল চা। বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বাগিচা কৃষির ফসল হিসাবে চা উৎপন্ন হয়। পশ্চিমবঙ্গে চা উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ হল –

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:

1. জলবায়ু:

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের আর্দ্র মৌসুমী জলবায়ুতে চা চাষ ভালো হয়।

a) উষ্ণতা:

       তরাই, ডুয়ার্স ও পার্বত্য অঞ্চলের বার্ষিক গড় উষ্ণতা 20°C-27°C থাকে, যা চা চাষের পক্ষে আদর্শ।

b) বৃষ্টিপাত:

          সাধারণত বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 150cm-200cm হলে তা চা চাষের পক্ষে অনুকূল। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দার্জিলিং হিমালয়ে বাধা পেয়ে চা চাষের উপযোগী প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

c) তুষারপাত:

              অধিক তুষারপাত চা গাছের পক্ষে ক্ষতিকর। পশ্চিমবঙ্গের চা উৎপাদক অঞ্চলগুলিতে শীতে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়।

d) ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ:

          অতিরিক্ত সূর্যালোক চা গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই চা বাগিচার মাঝে মাঝে ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ রোপণ করা হয়।

2. ভূ-প্রকৃতি:

            জল নিকাশি ব্যবস্থা সম্পন্ন ঢালু বেশি, যেমন – পাহাড়ের ঢাল ও পাদদেশীয় অঞ্চল চা বাগিচার গড়ে তোলার পক্ষে উপযুক্ত। তবে এরকম ঢালু জমিতে ভূমিক্ষয়ের সম্ভাবনা থাকে, সেজন্য ক্ষেত্র বিশেষে চা গাছ রোপণের আগে জমিতে ধাপ কেটে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

3. মৃত্তিকা:

         জল নিকাশি বন্দোবস্ত যুক্ত, উর্বর, অম্লধর্মী, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত পডসল মৃত্তিকা চা চাষের উপযোগী। তবে মাটিতে অধিক ফসফরাস ও পটাস থাকলে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদিত হয়।

অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ:

1. মূলধন:

         বিশাল বাগিচার জমি ক্রয়, বাগিচার রক্ষণাবেক্ষণ, শ্রমিকদের মজুরি, সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যবস্থা ও পণ্য বাজারজাত করার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।

2. সুলভ শ্রমিক:

             চা বাগিচার গুলিতে দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকদের প্রয়োজন যথেষ্ট। বিশেষত চা পাতা আহরণ করার কাজে যথেষ্ট নিপুণতা থাকা দরকার। বিশেষ করে ‘দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি’ তোলার জন্য শিশু ও নারী শ্রমিকদের আধিপত্য রয়েছে। তাছাড়া সার প্রয়োগ, আগাছাসাফাই ও চা গাছ নিয়মিত ছেটে দেওয়া প্রভৃতি কাজে শ্রমিকদের প্রয়োজন হয়।

3. পরিবহন:

           উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা ছাড়া চা শিল্পের অগ্ৰগতি প্রায় অসম্ভব। চা বাগিচার গুলির মধ্যে যাতায়াত আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমে উৎপাদন ও বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো যায়।

4. চাহিদা ও বাজার:

               দেশে ও বিদেশে চা পিপাসু জনগণের চাহিদা বৃদ্ধি, পরিবর্ত পানীয়ের বাজার সংকোচন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রচারের সাহায্যে রপ্তানি বৃদ্ধি চা উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল।

5. সাংগাঠনিক ব্যবস্থা:

         চা বাগিচার ভেতরেই বাজারজাত করা হয়ে থাকে এজন্য চা গুঁড়ো করার যান্ত্রিক ব্যবস্থা, চায়ের পাতা শুকানো, গুণাগুণ অনুসারে পাতা বাছাই ও প্যাকিং এবং বাজারজাত করে বাজারে পাঠানো প্রভৃতি সব কাজই বাগিচাতে হওয়ার মতো সাংগাঠনিক ব্যবস্থা থাকা দরকার।

পশ্চিমবঙ্গের কোথায় চা-বোর্ড অবস্থিত?

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় চা-বোর্ড অবস্থিত।

চা উৎপাদনে ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান কত?

চা উৎপাদনে ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দ্বিতীয়।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:23.

Leave a Comment

error: Content is protected !!