পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের সমস্যা আলোচনা করো।

পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত এই লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এর অন্তর্গত নবম শ্রেণী এর জন্য এই প্রশ্নটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর এখানে পেয়ে যাবে। লেখা টি মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং নিজের উত্তর তৈরি করো। নিজের বন্ধুদেরকে জানাও যাতে তারাও পরীক্ষায় সুন্দরভাবে গুছিয়ে উত্তর লিখতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের সমস্যা

ভূমিকা:

বর্তমানে বিভিন্ন কারণে পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্প বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।নিম্ন সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

1. কাঁচা পাটের অভাব:

                         দেশভাগের ফলে ছোটো আঁশ ও অধিকাংশ দীর্ঘ আঁশ যুক্ত পাট উৎপাদক উর্বর কৃষিজমি বাংলাদেশে চলে যায়। ফলে উৎপাদন কিছুটা হলেও কমে যায়। এছাড়া বর্তমানে পাট চাষ সেরকম লাভজনক না হওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে পাটকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা পাটের যোগান হ্রাস পেয়েছে।

2. বিকল্প দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি:

                          বর্তমানে পাটজাত দ্রব্যের বিকল্প হিসেবে নাইলন, পলিথিন,কাপড় ও কাগজের দলে প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমেছে। ফলে পাটের বাজার অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে।

3. পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার:

                          এখনও অধিকাংশ পাটকলের পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণে উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্যের গুণগত মান নিম্ন প্রকৃতির হয়। ফলে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় বেশি এবং উৎপাদন হারও কম হয়।

4. অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ:

                             হুগলি শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে মাঝে মাঝে বিঘ্ন ঘটে। ফলে উৎপাদন প্রায়শই ব্যাহত হয়।

5. আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা:


                         এক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে এই রাজ্যের পাটজাত দ্রব্যের একচেটিয়া অধিকার ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে,থাইল্যান্ড,নেপাল প্রভৃতি দেশ উন্নত মানের পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন করছে। ফলে ভারতীয় পাটজাত দ্রব্য বিশ্ববাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।

6. অধিক রপ্তানি শুল্ক:

                     পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি শুল্ক বেশি হওয়ায় এই রাজ্যের পাটজাত দ্রব্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি হয়।

7. শ্রমিক অসন্তোষ:

                       ধর্মঘট, লকআউট, ছাটায়,ইউনিয়নের দাপট প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গের পাটকল গুলির নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।তাই শ্রমিক অসন্তোষ এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়,পাটকল গুলি বন্ধ হয়ে যায়।

8. অন্যান্য সমস্যা:

এছাড়া-

  • মূলধন বিনিয়োগে অনীহা
  •  হুগলি নদীর নাব্যতা হ্রাস
  •  কারখানাগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা 
  • জমির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি 

প্রকৃতি কারণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্প সমস্যায় জর্জরিত।

পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্পের সম্ভাবনা গুলি আলোচনা করো।

পাট শিল্পের সমস্যা গুলি ওপর গুরুত্ব দিলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জল পাটশিল্পের উন্নতি করতে হলে নিম্নোক্ত কারণগুলি হল-

  • পাটের বিকল্প হিসেবে অধিকাংশ দ্রব্য, যেমন-নাইলন,পলিথিন প্রভৃতি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব নয়।কিন্তু পাটজাত দ্রব্য পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সহায়ক হওয়ায় ভবিষ্যতে পরিবেশ সচেতন মানুষের কাছে পাটজাত দ্রব্যের বিশেষ কদর আছে।
  • পটশিল্পের উন্নতির জন্য রাজ্যের চালু পাটকলগুলো আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন।
  • পাট থেকে চট,থলে, দড়ি প্রভৃতি চিরাচরিত সামগ্রীর উৎপাদনের পাশাপাশি বেশি করে নিত্য নতুন সামগ্রী, যেমন- ঘর সাজানোর উপকরণ, কাগজ, বস্ত্র প্রভৃতি উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে।
  • কৃত্রিম তন্তুজাত প্যাকিং দ্রব্যের মূল্য অধিক, তাই পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি শুল্কহ্রাস করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করা পুনরায় সম্ভবপর হবে।

সুতরাং উন্নত মানের পাট উৎপাদন করে পাটের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করে এবং সর্বোপরি পাটজাত দ্রব্যের মধ্যে বৈচিত্র এনে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ অবশ্যই উজ্জ্বল।

Leave a Comment

error: Content is protected !!