পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা এই লেখাটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। নবম শ্রেণীর জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য এই কোশ্চেনটি প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ এখান থেকে পুরো প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসতে পারে আবার কখনো কখনো ছোট ছোট প্রশ্ন হিসেবেও আসতে পারে আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল ছাড়া অর্থাৎ উত্তরে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পদদেশ থেকে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের উপকূল এবং পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র অংশই সমভূমি। স্থানীয় ভূমিরূপের পার্থক্য অনুসারে বিশাল সমভূমিও অঞ্চল কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- উত্তরবঙ্গের সমভূমি
- দক্ষিণবঙ্গের সমভূমি
- উত্তরবঙ্গের সমভূমি:
উত্তরে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পদদেশ থেকে দক্ষিণে গঙ্গা নদীর মধ্যবর্তী সমতল এলাকার নাম উত্তরবঙ্গের সমভূমি।এই অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- তরাই বা ডুয়ার্স সমভূমি এবং
- গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র দোয়াব বা উত্তরের সমভূমি।
1. তরাই বা ডুয়ার্স সমভূমি:
আলিপুরদুয়ার জেলার দক্ষিণাংশ, জলপাইগুড়ি জেলার অধিকাংশ এলাকা এবং দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহাকুমা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
তরাই ভূমি বলতে বোঝায় হিমালয়ের পাদদেশভূমি।এই অংশে হিমালয় পর্বত উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে সমভূমির সাথে মিশে যাওয়ায় প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয় এবং সেজন্য এখানে গভীর বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে আর ভূমি ভাগ স্যাঁতসেঁতে থাকে। এই অঞ্চলের নামই তরাই। এখানকার খরস্রোতা নদীগুলি নুরিবালি কাকর প্রভৃতি বয়ে এনে এই ভূমি সৃষ্টি করেছে এজন্য এখানে মাঝে মাঝে নুরি ও পাথরের স্তুপ ও জড়ভূমি দেখতে পাওয়া যায়। জলপাইগুড়ি জেলার তরাই অঞ্চলে অপর নাম দুয়ার বা ডুয়ার্স।
2. গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র দোয়া বা উত্তরের সমভূমি:
গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী ভূমি অর্থাৎ তরাই অঞ্চলের দক্ষিণ সীমানা থেকে দক্ষিনে গঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত সমতল ভূমি উত্তরের সমভূমি নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে এই অঞ্চলকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- তাল
- বরেন্দ্রভূমি এবং
- দিয়ারা
a. তাল:
‘তাল’ কথার অর্থ নিম্ন ভূমি বা হ্রদ। মালদহ জেলার কালিন্দী ও মহানন্দা নদীর মধ্যবর্তী এলাকা অর্থাৎ সমগ্র কোচবিহার জেলা, দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার দক্ষিণভাগ, উত্তর দিনাজপুর জেলার উত্তরভাগ এবং জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণাংশের কিছুটা ভূমি তাল নামে পরিচিত। এই এলাকায় প্রচুর বিল ও জলাভূমি তৈরি হয়েছে।
b. বরেন্দ্রভূমি:
দক্ষিণ দিনাজপুরের পূর্বাংশ, মালদা জেলার পূর্বাংশের ভূমি সামান্য উঁচু নীচু ও প্রাচীন পলি দিয়ে গঠিত। এই অঞ্চলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিলা দেখা যায়। এই অঞ্চলের নাম বারিন্দ্র বা বরেন্দ্রভূমি।
c. দিয়ারা:
মালদহ জেলার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে গঙ্গার কাছাকাছি এলাকার ভূমি নবীন পলি গঠিত, খুব উর্বর এবং ঘন জনবসতিপূর্ণ। এই এলাকাটির নাম দিয়ারা।
- দক্ষিণবঙ্গের সমভূমি:
এই সমভূমিকে তিনটিভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
- রাঢ় সমভূমি
- বদ্বীপ সমভূমি
- উপকূলের বালুকাময় সমভূমি।
1. রাঢ় সমভূমি:
- পূর্বে ভাগীরথী, হুগলি নদী ও পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে যে বিচ্ছিন্ন সমভূমি লক্ষ্য করা যায় তাকে রাঢ় সমভূমি বলে।
- পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান,বীরভূম প্রভৃতি জেলা রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত।
- এখানকার পশ্চিমাংশের উচ্চতা প্রায় ৭৫ মিটার এবং পূর্ব সীমানার উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার।
- এই অঞ্চলটি প্রাচীন পলি বিশিষ্ট।
- দামোদর, অজয়, ময়ূরাক্ষী প্রভৃতি নদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে রাঢ় সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
2. বদ্বীপ সমভূমি:
কলকাতা,নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার সমভূমি নিয়ে বদ্বীপ সমভূমি গঠিত। গঠনের তারতম্য অনুসারে এই অঞ্চলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- মৃতপ্রায় ব-দ্বীপ
- পরিণত বদ্বীপ এবং
- সক্রিয় বা নতুন বদ্বীপ
a. মৃতপ্রায় বদ্বীপ:
ব-দ্বীপ সমভূমির উত্তর অংশকে মৃতপ্রায় বদ্বীপ বলে। কারণ ব দ্বীপের উত্তরাংশে নদীগুলি আর নতুন করে পলিসনজিত করে না। এখানে দুই একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, বিল বা জলাভূমি দেখা যায়। এছাড়া এই অঞ্চল বাগড়ী নামেও পরিচিত।
b. পরিণত বদ্বীপ:
মৃতপ্রায় বদ্বীপের দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার মধ্য ও উত্তর অংশ, উত্তর 24 পরগনা জেলার মধ্যাংশ এবং সমগ্র কলকাতা পরিণত বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের নদীগুলি এখনো বন্যার সময় অল্প অল্প পলি সঞ্চয় করে। এই অঞ্চলেও জলাভূমি বা বিল দেখা যায়।
c. সক্রিয় বদ্বীপ:
পরিণত ব-দ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দক্ষিণ অংশে সক্রিয় ব-দ্বীপের অবস্থান। সুন্দরবন অঞ্চলের নদীগুলি এখনো প্রচুর পরিমাণে পলি সঞ্চয় করে ভূমি। গঠনের কাজ করে চলেছে। পলি সঞ্চয়ের ফলে নতুন নতুন ব-দ্বীপও সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন-পূর্বাশা, নিউ মুর ব-দ্বীপ ইত্যাদি।
3. উপকূলের বালুকাময় সমভূমি:
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বঙ্গোপসাগরীয় উপকূল সমতল হলেও বালিতে পূর্ণ।
এইসব বালি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণের সমুদ্রের উপর দিয়ে বয়ে আসা বাতাসের সঙ্গে একটু একটু করে এসে জমা হয়েছে। অনেক জায়গায় বালি জমা হতে হতে উঁচু ঢিবির মতো বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে দীঘা সৈকতভূমি। বালিকাময় এই উপকূল অঞ্চল উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু।