পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা

ভূমিকা:

           পশ্চিমবঙ্গের প্রধান কৃষিজ ফসল তথা খাদ্যশস্য হল ধান। পশ্চিমবঙ্গে মোট যে পরিমাণ জমিতে চাষ হয়, তার মধ্যে শতকরা প্রায় 95 ভাগে ধান উৎপাদিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল –

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:

1.জলবায়ু:

            ধান ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। প্রধানত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে ভারতে ধানচাষ করা হয় বলে ধান মৌসুমী ফসল নামে পরিচিত।

   a. উষ্ণতা:

             উষ্ণ পরিবেশ ধানচাষের উপযোগী। তবে, অত্যাধিক উষ্ণতায় ধানচাষের ফলন ব্যাহত হয়।  গড়ে 22° থেকে 30° সেলসিয়াস উষ্ণতা ধান চাষের পক্ষে অনুকূল। পশ্চিমবঙ্গের সব জেলার গড় উষ্ণতা এর মধ্যে থাকে।

   b. বৃষ্টিপাত:

                 মূলত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষ করা হয়। আর্দ্র জলবায়ু ধান উৎপাদনের জন্য উপযোগী বলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 150 থেকে 250 সেন্টিমিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। 150 সেমি -এর কম বৃষ্টিপাতে জলসেচের প্রয়োজন হতে পারে। ধানের চারা বৃদ্ধির সময় 200 সেমি বৃষ্টিপাত হওয়া প্রয়োজন। পরিপক্ক ধান কাটার পর শুকোবার জন্য কয়েকদিন জমিতে ফেলে রাখা হয় এসময় শুষ্ক জলবায়ুর প্রয়োজন হয়।

Read- পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা দাও।

2. মৃত্তিকা:

               ধান চাষের জন্য নদীর পলিগঠিত মৃত্তিকা উপযোগী। আদর্শ নবীন পলি মাটিতে খুব ভালো ধান হয় বলে নদী উপত্যকা নিম্নভূমিতে এবং ব-দ্বীপ অঞ্চলে সর্বাপেক্ষা ভালো ধান জন্মায়। উপরে সামান্য পলির আস্তরণ থাকলে যেকোনো ধরনের দোঁয়াশ মৃত্তিকায় ধান চাষ হয়। তবে ধান গাছের গোড়ায় চারা অবস্থায় জল ধরে রাখতে হয় বলে মাটির নীচে কাঁদার স্তর থাকা দরকার।

3. ভূমির প্রকৃতি:

                  বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি ধান উৎপাদনের জন্য আদর্শ। তাই, পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ সমভূমিতে প্রচুর ধান চাষ করা হয়। আবার পার্বত্য অঞ্চলে, মালভূমিতে ধাপ কেটে ধান চাষ করা হয়।

অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ:

1. শ্রমিক:

            শ্রম প্রগাঢ় ও শ্রম নিবিড় কৃষি প্রধান ফসল হল ধান। জমি তৈরি, বীজ তোলা, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, ধান কাটা, ঝাড়া প্রভৃতি কাজে প্রচুর সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত জনবহুল রাজ্য হওয়ায় এবং এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ হওয়ায় সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব হয় না।

2. মূলধন:

           নিবিড় ধান চাষের মাধ্যমে অধিক ফলনের জন্য উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি কিনতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। 

3. আধুনিকীকরণ:

               পশ্চিমবঙ্গের বর্তমানে হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, ট্র্যাক্টর, রিপার প্রভৃতি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ(IR-8, জয়া, রত্না, পঙ্কজ প্রভৃতি) ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

4. পরিবহন:

           ধান চাষকে লাভজনক করার জন্য কৃষিক্ষেত্র ও বাজারের মধ্যে উন্নত পরিবহন ও উৎপাদিত ধানের সুষ্ট বন্টনের প্রয়োজন।

Read- পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের সমস্যা আলোচনা করো।

5. চাহিদা ও বাজার:

                খাদ্যশস্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ধানের চাহিদা সর্বাধিক। যেখানে ধানের চাহিদা বেশি, সেখানে ধান উৎপাদন অগ্ৰাধিকার পায়।

     উপোরক্ত কারণগুলি পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষে উন্নতিতে সহায়তা করে।

পশ্চিমবঙ্গে কোন জেলা ধান উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে?

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা ধান উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে।

This post was updated on 2023-02-22 17:58:04.

Leave a Comment

error: Content is protected !!