পৃথিবীর অন্দরমহল সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন।

 পৃথিবীর অন্দরমহল সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ দিয়ে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূকম্পীয় তরঙ্গ কাকে বলে?

শিলাস্তরের পীড়নের ফলে উৎপন্ন শক্তি তরঙ্গ ঢেউয়ের মতো ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। শক্তির এই তরঙ্গকে ভূমিকম্পের তরঙ্গ বলে।

ভূমিকম্পের তীব্রতা কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

রিখটার স্কেলের সাহায্যে ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্ণয় করা হয়।

সিসমোগ্রাফ বা ভূমিকম্পের উৎস নির্ণয়কারী যন্ত্রের ওপর এই স্কেল বসানো থাকে এবং এতে তীব্রতা পরিমাপের জন্য এক থেকে দশটি ভাগে ভাগ করা থাকে।

✓ আবিষ্কারক হলেন ভূকম্প বিজ্ঞানী সি.এফ.রিখটার।

ভূকম্পীয় তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?

ভূকম্পীয় তরঙ্গ প্রধানত তিন প্রকার।যথা-

  •  P তরঙ্গ বা প্রাথমিক তরঙ্গ
  • S তরঙ্গ বা গৌণ তরঙ্গ 
  • L তরঙ্গ বা পৃষ্ঠ তরঙ্গ

P তরঙ্গ কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।

যে তরঙ্গ সরাসরি কেন্দ্রমন্ডল ভেদ করতে সক্ষম থাকে তাকে P তরঙ্গ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই তরঙ্গ কে মুখ্য বা প্রধান বা প্রাথমিক তরঙ্গ বলে।
  •  গতিবেগ সর্বাধিক (প্রায় সেকেন্ডে 5 থেকে 14 কিলোমিটার) ভূপৃষ্ঠে সবার প্রথমে এসে পৌঁছায়।
  • এটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
  •  কঠিন ও তরল উভয় মাধ্যম অতিক্রম করতে পারে। 
  • P তরঙ্গ শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে তুলনীয়।

S তরঙ্গ কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।

যে তরঙ্গ কেবলমাত্র ভূপৃষ্ঠের কঠিন অংশেই চলাচলে সক্ষম তাকে S তরঙ্গ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটিকে গৌণ তরঙ্গ বা সেকেন্ডারি তরঙ্গ বলে।
  •  গতিবেগ P তরঙ্গের চেয়ে কম (প্রায় সেকেন্ডে 3 থেকে 7 কিলোমিটার) ভূপৃষ্ঠে পরে এসে পৌঁছায়।
  •  এটি অনুপ্রস্থ অথবা তির্যক ধরনের তরঙ্গ।
  •  কেবল কঠিন মাধ্যমে অতিক্রম করতে পারে।
  •  S তরঙ্গ আলোক তরঙ্গের সঙ্গে তুলনীয়।

L তরঙ্গ বলতে কী বোঝায়? বৈশিষ্ট্য লেখ।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে যে তরঙ্গ প্রবাহিত হয় তাকে L তরঙ্গ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই তরঙ্গ কে পৃষ্ঠ তরঙ্গ বা পার্শ্ব তরঙ্গ বা লং তরঙ্গ বলে।
  • এই তরঙ্গ মন্থর গতিবেগ সম্পন্ন হয় (প্রায় সেকেন্ডে 3.5 থেকে 5 কিলোমিটার)।
  • এটি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে দীর্ঘতম পথ অতিক্রম করায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
  • এটি ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়।

ভূমিকম্প ছায়া বলয় কাকে বলে?

ভূকম্পের কেন্দ্র থেকে উপকেন্দ্রের মধ্যে সংযোগকারী সরলরেখার সাপেক্ষে কেন্দ্রে উৎপন্ন ১০৫° কৌণিক দূরত্বের বাইরে S তরঙ্গ এবং ১০৫° থেকে ১৪২° কৌণিক দূরত্বের মধ্যে P তরঙ্গ সিসমোগ্রাফে ধরা পড়ে না। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের বিপরীতে এই দুই প্রকার তরঙ্গহীন অঞ্চল কে ভূমিকম্পের ছায়া বলয় বলা হয়।

ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে?

ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক উপরে সোজাসুজি ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুতে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবথেকে বেশি অনুভূত হয় সেই স্থলকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে।

অ্যাসথেনোস্ফিয়ার  কাকে বলে?

শিলামন্ডলের নীচে গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 250 কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত ঊর্ধ্ব গুরুমন্ডলের উপরিভাগে স্বল্প ঘনত্বের গলিত শিলা বলয়কে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার বলা হয়।

‘অ্যাসথেনোস্ফিয়ার’ একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ ‘দুর্বল স্তর’। এই স্তরে পদার্থ গলিত ও নরম প্রকৃতির হয়।অত্যাধিক তাপে ও চাপে এখানকার শিলা সান্দ্র প্রকৃতির হয়।

ম্যাগমা কাকে বলে?

ভূগর্ভে অবস্থানরত পদার্থ সমূহ যা প্রচন্ড চাপ ও তাপে গ্যাস, বাষ্প মিশ্রিত হয়ে সান্দ্র বা থকথকে অবস্থায় থাকে তাকে ম্যাগমা বলে।

ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে যেখানে সঞ্চিত হয় সেই অঞ্চলকে ম্যাগমা চেম্বার বলে।

লাভা কাকে বলে?

ভূ-গর্ভের গলিত উত্তপ্ত অর্ধ তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের দুর্বল ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলে তাকে লাভা বলে।

জ্বালামুখ কাকে বলে?

আগ্নেয়গিরির সবচেয়ে উপরের অংশে যেখান থেকে লাভা নির্গত হয় সেই অংশটিকে জ্বালামুখ বলে।

জ্বালামুখ সাধারণত দুই প্রকার হয়। যথা- 

  • প্রধান জ্বালামুখ ও 
  • গৌণ জ্বালামুখ।

বিযুক্ত রেখা কাকে বলে?

 ভূপৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যেখানে যেখানে ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবেগ পরিবর্তিত হয় এবং যে কাল্পনিক সীমারেখা দ্বারা ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তর গুলি পৃথক করা যায় তাকে বিযুক্তি রেখা বলে।

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।যথা-
  • ভূত্বক।
  •  গুরুমন্ডল।
  •  কেন্দ্রমন্ডল। 

ভূত্বক কাকে বলে?

গুরুমন্ডলের উপরিভাগে যে কম ঘনত্ব যুক্ত, কঠিন, হালকা ও পাতলা শিলা স্তরটি পৃথিবীতক বেষ্ঠন করে আছে তাকে ভূত্বক বলে।

ভূত্বককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যথা-

  • মহাদেশীয় ভূত্বক ও 
  • মহাসাগরীয় ভূত্বক।

ভূত্বকের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।

ভূত্বকের বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

  • ভূত্বকের গভীরতা সব জায়গায় সমান নয়।এটি মহাসাগরের নিচে 5 থেকে 10 কিলোমিটার এবং মহাদেশের নিচে 30 থেকে 40 কিলোমিটার বিস্তৃত হয়।
  •  মহাসাগরীয় ভূত্বকে সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম এই দুটি মৌলিক উপাদানের প্রাধান্য থাকায় একে সিমা বলা হয়।
  •  মহাদেশীয় ভূত্বকে সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামের প্রাধান্যের জন্য একে সিয়াল বলা হয়।
  • আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত এই তিন প্রকার শিলা দ্বারা ভূত্বক গঠিত হয়।

সিয়াল ও সিমা কাকে বলে?

সিয়াল:

       মহাদেশের নীচে তুলনামূলক হালকা পদার্থ, প্রধানত সিলিকন(Si) ও অ্যালুমিনিয়াম(Al) দিয়ে তৈরি যে স্তরটি আছে তাকে সিয়াল বলা হয়। এটি ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত শুরু হয় এবং এই আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৬ থেকে ২.৯ গ্রাম/ঘনসেমি।

সিমা:

      মহাসাগরের নীচে প্রধানত সিলিকন(Si) ও ম্যাগনেসিয়াম(Mg) দিয়ে তৈরি যে তুলনামূলক ভারী স্তরটি অবস্থান করে তাকে সিমা বলে। এটি পাঁচ থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরো হয় এবং এর আপেক্ষিক ঘনত্ব ২.৯ থেকে ৩.৩৩ গ্রাম/ঘনসেমি।

শিয়াল ও সিমা স্তরের মাঝে কোন বিযুক্তি রেখা অবস্থিত?

সিয়াল ও সিমা স্তরের মাঝে কনরাড বিযুক্তি রেখা অবস্থিত।

 গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।

ভূ-অভ্যন্তরে কেন্দ্র মন্ডল ও ভূত্বকের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় 2900 কিলোমিটার পর্যন্ত নিকেল(Ni), লোহা(Fe), ক্রোমিয়াম(Cr), সিলিকন(Si) ও ম্যাগনেসিয়াম(Mg) দ্বারা গঠিত একই ঘনত্বযুক্ত স্তর হল গুরুমন্ডল বা ম্যান্টাল।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি অভ্যন্তরে প্রায় 2900 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • এই স্তরের উষ্ণতা ২০০০° সেলসিয়াস থেকে ৩০০০° সেলসিয়াস পদার্থের ঘনত্ব 3.4 থেকে 5.6 গ্রাম/ঘনসেমি।
  •  এই স্তরের প্রধান উপাদান লোহা(Fe), নিকেল(Ni), ক্রোমিয়াম(Cr), ম্যাগনেসিয়াম(Mg) ও সিলিকন(Si)।
  • ঊর্ধ্ব গুরুমন্ডলের সীমান্তে মোহোরাভিসিক বিযুক্তিরেখা আছে।

গুরুমন্ডলকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?

গুরুমন্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ক্রোফেসিমা ও 
  • নিফেসিমা।

ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমা বলতে কী বোঝো?

ক্রোফেসিমা:

পৃথিবীর গুরুমন্ডলে 30 থেকে 700 কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে ক্রোমিয়াম(Cr), লোহা(Fe), সিলিকন(Si) ও ম্যাগনেসিয়ামের(Mg) প্রাধান্য দেখা যায় এটি হলো প্রফেসিমা স্তর।

নিফেসিমা:

গুরুমন্ডলের 700 থেকে 2900 কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে নিকেল(Ni), লোহা(Fe), সিলিকন(Si) ও ম্যাগনেসিয়াম(Mg) এর আধিক্যের জন্য এই স্তর হল নিফেসিমা।

ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের মাঝে কোন বিযুক্তি রেখা অবস্থিত?

ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের মাঝে মোহোরাভিসিক বিযুক্তি রেখা অবস্থিত।

ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমার মাঝে কোন বিযুক্তি রেখা অবস্থিত?

প্রফেসিমা ও নিফেসিমার মাঝে রেপিত্তি বিযুক্তি রেখা অবস্থিত।

কেন্দ্রমন্ডল কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।

পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে, ভূত্বক ও গুরুমন্ডলের পরবর্তী এবং কেন্দ্রের চারিদিকে বেষ্ঠনকারী লোহা(Fe) ও নিকেল(Ni) প্রভৃতি ভারী পদার্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে যে শেষ স্তরটি গঠিত হয়েছে তাকে কেন্দ্রমন্ডল বলে।

বৈশিষ্ট্য:

কেন্দ্রমন্ডলটি ভূ-অভ্যন্তরে প্রায় 3500 কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর।
এই স্তরটি অত্যন্ত ভারী নিকেল(Ni) ও লোহা(Fe) দিয়ে তৈরি বলে একে নিফে বলে।
এর গড় তাপমাত্রা 5000° সেলসিয়াস।
এই স্তরের গড় ঘনত্ব প্রায় 9.1 থেকে 13.1 গ্রাম/ ঘনসেমি।

কেন্দ্রমণ্ডলকে কয়টি বিভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি? 

কেন্দ্রমণ্ডল কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

  • অন্তকেন্দ্রমন্ডল ও 
  • বহিঃকেন্দ্রমন্ডল।

অন্তকেন্দ্র মন্ডল ও বহিঃকেন্দ্র মন্ডল কাকে বলে?

অন্তকেন্দ্রমন্ডল:

              এই স্তর পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রের চারিদিকে রয়েছে। এই স্তরের গভীরতা 5100 কিলোমিটার থেকে প্রায় ৬৩৭০ কিলোমিটার। এই স্তরের চাপ, তাপ ও ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। অত্যাধিক চাপের ফলে পদার্থ গুলো এখানে কঠিন অবস্থায় আছে।

বহিঃকেন্দ্রমন্ডল:

            অন্তকেন্দ্রমণ্ডলের চারিদিকে রয়েছে বহিঃকেন্দ্র মন্ডল। এই স্তর ২৯০০ কিলোমিটার থেকে ৫১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর। এর চাপ,তাপ ও ঘনত্ব অন্তকেন্দ্রমন্ডল এর তুলনায় কম। এই স্তর অর্ধকঠিন অবস্থায় পৃথিবীর অক্ষের চারিদিকে আবর্তন করে চলেছে। এই স্তরে সান্দ্র অবস্থায় থাকা লোহা ও নিকেল প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে ঘুরতে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করেছে যেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর চৌম্বকত্ব।

গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডলের মাঝে কোন বিযুক্তি রেখা অবস্থিত?

গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডলের মাঝে গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা অবস্থিত।

কেন্দ্রমন্ডল এর ভেতরে অন্তকেন্দ্রমন্ডল ও বহিঃকেন্দ্র মন্ডল কোন বিযুক্তি রেখা দ্বারা সংযুক্ত?

 কেন্দ্রমন্ডল এর ভেতরে অন্তরকেন্দ্রমন্ডল ও বহিঃকেন্দ্রমন্ডল লেহম্যান বিযুক্তি রেখা দ্বারা সংযুক্ত।

Leave a Comment

error: Content is protected !!