পেট্রোরসায়ন শিল্প সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পশ্চিম ভারতে অধিক সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন শিল্পের গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা:
ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের কেন্দ্রভূমি হল মহারাষ্ট্র ও গুজরাট। মহারাষ্ট্র এর মুম্বাই,থানে, ট্রম্বে, বেলাপুর এবং গুজরাটের ভদোদরা,কয়ালি,হাজিরা, জামনগর এ বেশি সংখ্যায় পেট্রোরসায়ন কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ গুলি হল-
1. খনিজ তেল উত্তোলন:
স্বাধীনতার পরেই বাসিন, আলিয়াবেত, আঙ্কেলেশ্বর, কাম্বে, কালোল প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর খনিজ তেল উৎপাদিত হচ্ছে, যা থেকে পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামাল পাওয়া যায়।
2. খনিজ তেল শোধনাগারের অবস্থান:
এই অঞ্চলে ট্রম্বে, কয়ালি, জামনগরে রয়েছে তৈল শোধনাগার।তৈল শোধনাগারের উপজাত দ্রব্য পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল।
3. বন্দরের নৈকট্য:
পশ্চিম ভারতের মুম্বাই, নভসেবা, কান্দালা প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খনিজ তেল, পলিমার ও যন্ত্রপাতির আমদানির যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি পেট্রোরসায়ন সামগ্ৰীর রপ্তানিরও সুবিধা রয়েছে।
4. বিদ্যুৎ:
পশ্চিম ভারতে উকাই, কয়না জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তারাপুর, কাটরাপাড় পারমাণবিক কেন্দ্র এবং বেশ কয়েকটি বৃহদায়তন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকায় পেট্রোরসায়ন শিল্পে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এর পর্যাপ্ত যোগান অব্যাহত রেখেছে।
Read– উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল বা ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের বিবরণ দাও
5. মূলধন বিনিয়োগ:
পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের ওপর নির্ভর করে অনেক অনুসারী শিল্পের বিকাশ ঘটে বলে এখানে শিল্পে প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগের জন্য সরকারি এবং রিলায়েন্স, মফৎলালের মতো বড়ো বড়ো শিল্প গোষ্ঠীর সাহায্য সহজেই পাওয়া যায়।
6. উন্নত প্রযুক্তি:
প্রকল্প স্থাপন ও পরিচালনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এই শিল্পাঞ্চলে বর্তমান।
7. সুলভ শ্রমিক:
এই শিল্পাঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
8. চাহিদা:
পশ্চিম ভারতে বস্ত্রশিল্প, ঔষধ সামগ্রী, প্লাস্টিক প্রভৃতি শিল্পে অত্যন্ত উন্নত ফলে পেট্রোরসায়ন শিল্পের ব্যাপক চাহিদা এখানে।
9. উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা:
পশ্চিম ভারতের উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এই শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। উন্নত রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথ থাকায় বড়ো বড়ো কন্টেনারে করে পেট্রোরসায়ন পণ্য পরিবহন করা সহজ হয়।
কোন শিল্পকে ‘আধুনিক শিল্প দানব’ বলা হয়?
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে ‘আধুনিক শিল্প দানব’ বলা হয়।
পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কী কী?
পেট্রোরসায়ন শিল্পে কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার, নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, আঠা, রং, কীটনাশক, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখ।
- উত্তর ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল হরিয়ানার পানিপথ ( পানিপথ পেট্রোরাসায়নিক প্ল্যান্ট)।
- দক্ষিণ ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্প কেন্দ্র হল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর ( ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড)।
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে ‘আধুনিক শিল্পদানব’ বলা হয় কেন?
পেট্রোরসায়ন শিল্পের শিল্পজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অনুসারী ও সাহিয্যকারী শিল্প বিকাশলাভ করে এবং আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায় এই শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম বলে একে আধুনিক শিল্প দানব বলে।
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে কেন ‘সূর্যোদয়ের শিল্প’ বা ‘উদীয়মান শিল্প’ বলে?
আধুনিক শিল্পব্যবস্থায় বৈচিত্র্য, পরিমাণ ও ব্যবহারিক দিক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের শিল্প বিকাশ লাভ করেছে। তাই পেট্রোরসায়ন শিল্পকে ‘সূর্যোদয়ের শিল্প’ বা ‘উদীয়মান শিল্প’।