বায়ুদূষণ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন

বায়ুদূষণ সম্পর্কে এই লেখাটিতে সম্ভাব্য  প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হল।আশা করছি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। নিজেরা পড়ো এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

 বায়ুদূষণ কাকে বলে?

প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস ও ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মিশ্রণের ফলে বায়ু যখন মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে, তখন তাকে বায়ুদূষণ বলে।

বায়ুদূষণের কারণ লেখ।

বায়ুদূষণ এর কারণ গুলি নীচে আলোচনা করা হল-

  • বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বসবাসের জন্য, চাষের জন্য গাছপালা কেটে বন পরিষ্কার করছে। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
  • সারা পৃথিবী জুড়ে কলকারখানা,শিল্প কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বনের গুঁড়ো, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এর মতো বিভিন্ন বিষাক্ত ক্ষতিকারক গ্যাস প্রতিনিয়ত বাতাসে মিশছে।
  • চাষের জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতি রং গুঁড়ো, বিভিন্ন আবর্জনা, খড়কুটো পোড়ানো ছাই বাতাসকে দূষিত করছে।
  • বর্তমানে মানুষ বেশি আরামপ্রিয় হওয়ার ফলে গাড়ির সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এছাড়া বাস,লরি, জাহাজ, এরোপ্লেন সবেতেই ডিজেল, পেট্রোল প্রভৃতি জ্বালানি ব্যবহার করা হয়।এর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড,সিসা এর মতো ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মিশছে।

ঘরের বায়ু দূষণ কিভাবে হয়?

ঘরের বায়ু কিভাবে দূষিত হয় নিম্নে আলোচনা করা হল-
  • রান্নার জন্য কাঠ,ঘুটে,কয়লা, গ্যাস থেকে প্রচুর ধোঁয়া, কার্বন কণা, বেশ কিছু ক্ষতিকারক গ্যাস ঘরের বাতাসে মিশে দূষণ ঘটায়।
  • ঘরের আবর্জনা,জঞ্জাল পঁচে গেলে তার দুর্গন্ধ থেকে বাতাস দূষিত হয়। মশা তাড়ানোর ধুপ, ঘর পরিষ্কার করা বিভিন্ন রকম জীবননাশক রাসায়নিক দ্রব্য, দুর্গন্ধ দূর করার সুগন্ধি দ্রব্য থেকেও ঘরের বাতাস দূষিত হয়।
  •  সিগারেটের ধোঁয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে সবথেকে বেশি ক্ষতিকর। ধূমপান থেকে ঘরের বাতাসে সবথেকে বেশি দূষণ ছড়ায়। এর থেকে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসের সমস্যা হয়।
  • ঘরের দেয়ালে যে রং করা হয় তার থেকেও দূষণ ছড়ায়। রং এর গন্ধে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়।

বায়ুদূষণের প্রতিকারের উপায় লেখ।

বায়ুদূষণ এর প্রতিকার সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল-
  • গাছ অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপন করতে হবে যাতে বায়ুদূষণ কম হয়।
  • বিভিন্ন শিল্প কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কলকারখানা প্রভৃতি জায়গায় বায়ু পরিশোধক যন্ত্র স্থাপন করে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস পরিশোধিত করতে হবে।
  • জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন-কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতির দহনের ফলে বায়ু দূষণ হয়। তাই এগুলি ব্যবহারের পরিবর্তে বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তি, যেমন- সৌরশক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি, বায়ুশক্তি প্রভৃতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  • জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ এর পরিবর্তে জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
  • বায়ুদূষণের কারণ,প্রতিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
  • পেট্রোল, ডিজেল চালিত যানবাহনের পরিবর্তে ইলেকট্রিক যানবাহন, যেমন- ট্রেন,ট্রাম,মেট্রো, সাইকেল প্রভৃতি ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব।

বায়ুদূষণের ফলাফল লেখ।

বায়ুদূষণ এর ফলাফল নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. ওজোন স্তর ধ্বংস:

                      ফ্রিজ,AC, সুগন্ধি স্প্রে,রং থেকে  ক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্যাস (CFC) নির্গত হয়।যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক গ্যাস এবং এটি ওজোন স্তরকে প্রতিনিয়ত ক্ষয় করে চলেছে।

এছাড়া সুপারসনিক জেট বিমান, পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে নির্গত নাইট্রোজেন এর অক্সাইড ওজোন স্তরকে ক্ষতি করছে।এর ফলে ওজোন স্তর পাতলা হওয়ায় ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।

2. অ্যাসিড বৃষ্টি:

                 যানবাহন, কলকারখানার ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড,কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইড গ্যাস বৃষ্টির জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যাসিড তৈরি করে। এর ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি হয় এবং গাছপালার ক্ষতি হয়,মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়,স্মৃতিসৌধ, মার্বেল পাথরের তৈরি মূর্তি প্রকৃতির ক্ষতি হয়। পুকুর, নদীতে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়।

3. গ্রীন হাউজ গ্যাস:

                   সূর্য থেকে আসা আলোক শক্তি পৃথিবীতে হালকা তরঙ্গ রূপে প্রবেশ করে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প,কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস গুলি দ্বারা কিছুটা শোষিত হয় এবং কিছুটা পুনর্বিকিরিত হয়। ফলে ভারী আলোক তরঙ্গ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলেই আটকে পড়ে এবং বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। একে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।

Earth Hour কাকে বলে?

31শে মার্চ, 2007 অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের মানুষ রাত সাড়ে 8 টা থেকে সাড়ে 9 টা পর্যন্ত শহরের সমস্ত আলো নিভিয়ে রেখেছিল।’বিশ্ব উষ্ণায়ন’ কমাতে বর্তমানে প্রায় 85 টা দেশের 1000 টা শহরের মানুষ ঐ দিনটায় 1 ঘন্টা র জন্য আলো বন্ধ করে রাখে

Earth Day কাকে বলে?

পৃথিবীর পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতি বছর 22 শেষ এপ্রিল ধরিত্রী দিবস বা Earth Day পালন করা হয়।

কয়েকটি বিষাক্ত গ্যাস এর নাম লেখ।

কয়েকটি বিষাক্ত গ্যাস এর নাম হলো-
কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড,সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।

কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখ।

কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থের নাম হল-
 সিসা,ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!