ভাঁজ কাকে বলে? ভাঁজের শ্রেণীবিভাগ কর ও বর্ণনা দাও।

ভাঁজ কাকে বলে এবং ভাঁজের শ্রেণীবিভাগ কর ও বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এখান থেকে বড়ো প্রশ্ন হিসেবেও আসতে পারে,তবে ছোটো ছোটো প্রশ্ন অর্থাৎ 2 মার্কসের প্রশ্ন হিসেবে আসে। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভাঁজ কাকে বলে


ভাঁজ এর সংজ্ঞা:

      গিরিজনি আলোড়নের প্রভাবে শিলায় পার্শ্বচাপ পড়ে নমনীয় পাললিক শিলাস্তরে সমান বা অসমানভাবে তরঙ্গের ন্যায় যে বক্রতা সৃষ্টি হয় তাকে ভাঁজ বা বলি বলে।

  ভাঁজ ছোটো-বড়ো নানা মাপের হতে পারে। শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ ও ভূপ্রকৃতি সৃষ্টি হয়।

ভাঁজের শ্রেণীবিভাগ:

বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভাঁজের যে শ্রেণীবিভাগ করা হয় তার নিম্নরূপ – 

A. ভাঁজের অক্ষ, অক্ষতল ও ভাঁজের বাহুর ভঙ্গির ভিত্তিতে:

1. প্রতিসম ভাঁজ:

             যে ভাঁজের দুপাশের বাহু দুইদিকে সমান কোণে হেলে থাকে এবং দুটি বাহু সমান দৈর্ঘ্যের হয় তাকে প্রতিসম ভাঁজ বলে। 

বৈশিষ্ট্য:

  • ভাঁজের দুইদিকে সংকোচনকারী বল সমান থাকে।
  • ভাঁজের অক্ষতল সর্বদা উল্লম্ব হয়।
Protisono vaj

2. অপ্রতিসম ভাঁজ:

         কোনো ভাঁজের দুই দিকের বাহু অসমান কোণে দুই দিকে হেলে থাকলে, তাকে অপ্রতিসম ভাঁজ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • ভাঁজের দুইদিকে সংকোচনকারী বলের পরিমাণ অসমান থাকে।
  • ভাঁজের একদিকের বাহু অন্যদিকের বাহু অপেক্ষা দীর্ঘ হয়।
  • ভাঁজের অক্ষ আড়াআড়িভাবে অসস্থান করে।
অপ্রতিসম ভাঁজ

3. আবৃত ভাঁজ:

               একপাশে সংকোচন বল অত্যধিক বেশি হলে অক্ষতল বেশি হেলে যায়। এই অবস্থায় বেশি চাপযুক্ত দিকের বাহু কম চাপযুক্ত দিকের বাহুর উপরে উঠে যায়। একে আবৃত ভাঁজ বলে। 

বৈশিষ্ট্য:

  • এই ভাঁজে দুটি বাহু একই দিকে ভিন্ন ভিন্ন কোণে হেলে থাকে।
  • একদিকের চাপ অত্যধিক বেশি হলে, ভাঁজ অক্ষ হেলে গিয়ে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করে।

4. উল্লম্ব ভাঁজ:

               অপ্রতিসম ভাঁজের একটি বাহু যদি উল্লম্বভাবে অবস্থান করে, তাহলে তাকে উল্লম্ব ভাঁজ বলে। এই ভাঁজে অক্ষতল হেলানো অবস্থায় থাকে।

উল্লম্ব ভাঁজ

5. শায়িত ভাঁজ:

        একদিকে পার্শ্বচাপ অত্যধিক বেশি হলে যে ভাঁজের অক্ষতল অনুভূমিক তলের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালভাবে (0°-10° কোণে) অবস্থান করে এবং একদিকের বাহু অন্যদিকে বাহুর উপর পুরোপুরি উঠে যায়, তখন তাকে শায়িত ভাঁজ বা রিকাবমেন্ট ভাঁজ বলে।

শায়িত ভাঁজ

6. উৎঘট্ট ভাঁজ:

             কোন রিকাবমেন্ট ভাঁজের উপর অনুভূমিক চাপ বৃদ্ধি পেলে এই ভাঁজের মাঝখানের শিলাসমূহ ফেটে যায় এবং একটি অংশ আরেকটি অংশ থেকে সামান্য দূরে অবস্থান করে তাকে উৎঘট্ট ভাঁজ বলে।

7. সমপ্রবণ বা সমনত ভাঁজ:

               যে ভাঁজের দুটি বাহুর নতির পরিমাণ সমান ও পরস্পর সমান্তরাল ভাবে একই দিকে হেলে অবস্থান করে তাকে সমপ্রবণ বা সমনত ভাঁজ বলে।

      ভাঁজের অক্ষতল উল্লম্ব হলে তাকে ঋজু বা উল্লম্ব সমপ্রবণ ভাঁজ বলে এবং ভাঁজের অক্ষতল হেলে থাকলে তাকে তির্যক সমপ্রবণ ভাঁজ বলে।

সমপ্রবণ বা সমনত ভাঁজ

B. অবতলতা ও উত্ততলতার ভিত্তিতে:

1. ঊর্ধ্বভঙ্গ:

              যে ভাঁজের শিলাস্তর উপরের দিকে বাঁক নিয়ে উত্তলভাবে অবস্থান করে এবং ভাঁজের অক্ষতল থেকে দুটি বাহু পরস্পরের বিপরীত দিকে হেলে থাকে, তাকে ঊর্ধ্বভঙ্গ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই ভাঁজের অক্ষদুটির বিপরীত নতি লক্ষ করা যায়।
  • ঊর্ধ্বভঙ্গের ভাঁজের ভিতরের দিকে থাকে পুরোনো শিলা ও বাইরের দিকে থাকে নতুন শিলা।
  • একটি প্রধান বড়ো আকারের ঊর্ধ্বভঙ্গের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলি ছোটো ছোটো ঊর্ধ্বভঙ্গ ও অধোভঙ্গের সমাবেশ ঘটলে তাকে ঊর্ধ্বভঙ্গধারা বলে।

2. অধোভঙ্গ:

              যে ভাঁজে শিলাস্তর নীচের দিকে বাঁক নিয়ে অবতলভাবে অবস্থান করে এবং অক্ষতল থেকে ভাঁজের দুই বাহু পরস্পরের দিকে হেলে থাকে, তাকে অধোভঙ্গ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • অধোভঙ্গ বাহুদ্বয়ের নতি একই দিকে অবস্থান করে।
  • ভাঁজের ভিতরের দিকে থাকে নবীন শিলা এবং বাইরের দিকে থাকে প্রাচীন শিলা।
  • একটি প্রধান অধোভঙ্গের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলি ছোটো ছোটো অধোভঙ্গ বা ঊর্ধ্বভঙ্গ অবস্থান করলে তাকে অধোভঙ্গধারা বলে।
অধোভঙ্গ ঊর্ধ্বভঙ্গ

C. বাহুর ঢাল ও সরণের ভিত্তিতে:

1. পাখা ভাঁজ:

       কোনো ভাঁজের দুইদিকের দুটি বাহু তীব্রভাবে বেঁকে পাখার আকার ধারণ করলে তাকে পাখা ভাঁজ বলে।

পাখা ভাঁজ

2. বাক্স ভাঁজ:

              যে ভাঁজের দুটি বাহু উল্লম্ব এবং ঊর্ধ্বভঙ্গ ও অধোভঙ্গতল অনুভূমিক তাকে বাক্স ভাঁজ বলে।

বাক্স ভাঁজ

3. অবনত ভাঁজ:

               কখনো কখনো ভাঁজের অক্ষটি ভূপৃষ্ঠের সাথে সমান্তরালে অবস্থান না করে একটি নির্দিষ্ট কোণে হেলে থাকে, তাকে অবনত ভাঁজ বলে।

4. অন্যান্য ভাঁজ:

          এছাড়া তীক্ষ্ম ভাঁজ, সমরূপী ভাঁজ, আবদ্ধ ভাঁজ, ক্ষীণশীর্ষ ভাঁজ লক্ষ করা যায়।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:33.

Leave a Comment

error: Content is protected !!