ভূমিকা:
ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ওজন হ্রাস প্রাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া যায়।তাই ছোটনাগপুর অঞ্চলে অধিকাংশ লৌহ ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রধান কারখানাগুলি হল-
- ঝাড়খণ্ডের বোকারো
- পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর
- জামশেদপুর
- উড়িষ্যা রাউলকেল্লা
- ছত্রিশগড়ের ভিলাই প্রভৃতি।
এছাড়া রয়েছে অসংখ্য মাঝারি ও ছোট মাপের ইস্পাত কেন্দ্র। নিম্নে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি ব্যাখ্যা করা হলো-
- আকরিক লোহা:
পূর্ব ভারতে আকরিক লোহা উৎপাদক প্রধান অঞ্চল গুলি হল-
- ওড়িশার কেওনঝড়, ময়ূরভঞ্জ,সুন্দরগড়,কটক জেলার গুরুমহিষানি, বাদামপাহাড়।
- ঝাড়খন্ড রাজ্যে পশ্চিম সিংভূম জেলার নোয়ামুন্ডি, গুয়া,পানসিরাবুরু,চিরিয়া।
এইসব অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে শিল্পে উপযোগ্য আকরিক লোহা পাওয়া যায় এই অঞ্চলে শিল্পের কেন্দ্রীভবনের সহায়তা করেছে।
2. কয়লা:
দামোদর অববাহিকা ভারতের শ্রেষ্ঠ কয়লা উত্তোলক অঞ্চল। এখানকার কয়লা উৎপাদনে প্রধান অঞ্চল গুলি হল-
- ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, রামগড়, উত্তর ও দক্ষিণ করণপুরা।
- পশ্চিমবঙ্গের রানীগঞ্জ প্রভৃতি
কয়লা ক্ষেত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে বিটুমিনাস জাতীয় কয়লা উত্তোলন করা হয়, যা থেকে লৌহ ইস্পাত এর প্রয়োজনীয় কোক কয়লা প্রস্তুত হয়।যা লৌহ ইস্পাত শিল্পে বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।এই কারণে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবন লক্ষ্য করা যায়।বর্তমানে কয়লার গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য পূর্ব ভারতে কয়েকটি কয়লা ধৌতাগার (coal washery) স্থাপন করা হয়েছে।
3. অন্যান্য কাঁচামাল:
লৌহ ইস্পাত উৎপাদন করার জন্য আকরিক লোহা ও কয়লা ছাড়াও চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি খনিজ মৌলের প্রয়োজন হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও ওড়িশা রাজ্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ যেমন-
- চুনাপাথর ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলার গাংপুর এ পাওয়া যায়
- ডলোমাইট ওড়িশার সম্বলপুর জেলার সুলাইপাট, বেলদি ও সুন্দরগড় জেলার বীরমিত্রপুরে পাওয়া যায়
- ম্যাঙ্গানিজ উড়িষ্যার কেওনঝড় জেলার জামদা ও জোডা,সুন্দরগড় জেলার পানপোস এবং ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলায় পাওয়া যায়
এইসব কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের ব্যাপক ভাবে কেন্দ্রীভবন লক্ষ্য করা যায়।
4. জলের যোগান:
ছোটনাগপুর অঞ্চলে প্রবাহিত দামোদর, সুবর্ণরেখা, মহানদী, ব্রাহ্মণী, খরকাই প্রভৃতি নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করে যেমন-
- দামোদর নদে দুর্গাপুর ব্যারেজ,তেনুঘাট জলাধার
- সুবর্ণরেখা নদী তে চান্ডিল জলাধার
এখানে অবস্থিত শিল্প কারখানা গুলিতে প্রয়োজনীয় জলের সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়।
5. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ:
এই অঞ্চলে স্থাপিত দামোদর অববাহিকার তিলাইয়া, মাইথন,পাঞ্চেত ও মহানদীর অববাহিকার হিরাকুদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র গুলিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ জোগান দেওয়া হয়। এছাড়া এনটিপিসি ও রাজ্য সরকার দ্বারা স্থাপিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেমন – পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ঝাড়খণ্ডের পত্রাতু ও বোকারো প্রভৃতি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুতের সরবরাহ করা হয়। যার ফলে, এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের লক্ষ্য করা যায়।
6. শ্রমিকের প্রাচুর্য:
ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল এর নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গ,ঝাড়খন্ড, বিহার প্রভৃতি রাজ্য থেকে লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র গুলোতে কাজ করার জন্য প্রচুর শ্রমিক আসে।ফলে, এখানে সুলভ মূল্যে প্রচুর শ্রমিকের প্রাচুর্যতা দেখা যায় এবং বেশ কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কেন্দ্র থাকায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রমিক এর অভাব নেই।
7. পরিবহন ও বন্দর এর সুবিধা:
ছোটনাগপুর অঞ্চলের লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র গুলি-
- দক্ষিণ-পূর্ব রেল পথ ও পূর্ব রেলপথ
- সড়কপথে NH2, NH16 এবং অন্যান্য রাজ্যসড়কের সাহায্যে এবং
- কলকাতা, বিশাখাপত্তনম ,পারাদ্বীপ বন্দর এর সঙ্গে
ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত হলে খনি অঞ্চল থেকে কাঁচামাল আমদানির যেমন সুবিধা হয় তেমনি ইস্পাত অন্যান্য অংশে রপ্তানির সুবিধা হয় এই কারণেই এ অঞ্চলে শিল্পের কেন্দ্রীভবনের লেখা যায়।
8. বাজার ও চাহিদা:
পূর্ব ভারতের লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রের বাজার দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে, যেমন – কলকাতা,কল্যাণী,আসানসোল-দুর্গাপুর, রাঁচি-হাতিয়া শিল্পাঞ্চল, হাওড়া-হুগলি শিল্পাঞ্চল,বিলাসপুর ইত্যাদি এখানে বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের কেন্দ্র হওয়ায় ইস্পাতের চাহিদা খুব বেশি।