ভূমিকা:
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে মুম্বাই ও আমেদাবাদ ভারতের কার্পাস শিল্পের অন্যতম পীঠস্থান। 1851 খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ে সুতাকল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পায়নের শুরু হয়। পরবর্তীতে অনুকূল আঞ্চলিক পরিমন্ডল ও আর্থ সামাজিক পরিবর্তন এই অঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের একদেশীয় ভবনে সাহায্য করে। মুম্বাই ও আমেদাবাদ ছাড়াও মহারাষ্ট্রের পুনে, নাগপুর, শোলাপুর, আকোলা, জলগাঁও এবং গুজরাটের সুরাট, ভারুচ, ভাদোদরা, রাজকোট প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের একদেশীয় ভবনের কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –
1. উৎকৃষ্ট কাঁচামাল:
মহারাষ্ট্রের ডেকানট্রাপ অঞ্চলে রেগুর বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তুলা উৎপাদক অঞ্চল। এছাড়া গুজরাটেও উৎকৃষ্ট মানের তুলা উৎপাদিত হয়। ফলে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সুলভে পাওয়া যায়।
2. জলবায়ু:
আরব সাগরের তীরে অবস্থিত মুম্বাই ও গুজরাট অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির হওয়ায় সুতো কাটার পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
3. বন্দরের নৈকট্য:
মুম্বাই ভারতের বৃহত্তম প্রাচীন বন্দর, এছাড়া জওহরলাল নেহরু বন্দর, কান্দালা বন্দর এই অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে বিদেশ থেকে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নতমানের তুলা আমদানি করার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি উৎপাদিত বস্ত্র রপ্তানিরও সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও সুরাট, ওখা, পোরবন্দর প্রভৃতি বন্দর কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে সুবিধা হয়।
4. শক্তি:
মুম্বাইয়ের কার্পাস বয়ন শিল্প আমদানি করা কয়লার উপর গড়ে উঠলেও খোপেলি, ভীরা,ভিবপুরী, নীলামুলা, লোনাভলা প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আমেদাবাদ অঞ্চলের উকাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ধুবরান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শক্তি সম্পদের চাহিদা মেটাতে সমর্থ হয়।
5. পরিবহন:
পশ্চিম, মধ্য ও কোঙ্কন রেলপথ এবং 3, 4, 6, 7, 8 নং জাতীয় রাজপথ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রসারিত হওয়ায় এখানকার পরিবহন ব্যবস্থাও উন্নত। ফলে ফলে কাঁচাতুলা ও অন্যান্য সামগ্রী এবং তৈরি বস্ত্রের আমদানি-রপ্তানি সহজ হয়।
6. মূলধন বিনিয়োগ:
স্থানীয় পার্সি, ভাটিয়া ও গুজরাটি প্রভৃতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উদ্যোগে পর্যাপ্ত মূলধন বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক দক্ষতা যথাক্রমে মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের একদেশীয় ভবনে সাহায্য করেছে। এছাড়া ভারতের বড়ো বড়ো অর্থলগ্নি সংস্থার সদর দপ্তর (L.I.C, U.T.T, I.D.B.I) এখানে রয়েছে। তাই শিল্প পরিচালনায় প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব হয় না।
7. সুলভ শ্রমিক:
মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চল ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সুলভ শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও মুম্বাই অঞ্চলের কোঙ্কন, শোলাপুর, সাতারা কৃষিতে অনুন্নত হওয়ায় এবং গুজরাটের সুরাট, কল্লোল, মাহেসেনা প্রভৃতি অঞ্চলে বহু মানুষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
8. চাহিদা বা বাজার:
জনবহুল ভারতে কার্পাস বস্ত্রের ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং ভারতীয় বস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা এই শিল্পের বিকাশে সাহায্য করেছে।
9. উপযুক্ত পরিকাঠামো:
মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের শিল্প বিকাশের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এই অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে।
10. পরিশুদ্ধ জল:
আমেদাবাদ সংলগ্ন নদীর জল এবং মুম্বাই অঞ্চলের মাটির নীচের জল ও জলাশয় নির্মাণ করে ধরে রাখা বর্ষার জল শিল্পে পরিশুদ্ধ জলের যোগান দিয়ে থাকে।
ভারতের একক বৃহত্তম শিল্পটির নাম কি?
ভারতের একক বৃহত্তম শিল্পটির নাম কার্পাস বয়নশিল্প।
‘ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’ কাকে বলে?
আহমেদাবাদকে ‘ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’ বলে।
‘দক্ষিণ ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’ কাকে বলে?
তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরকে ‘দক্ষিণ ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার’ বলে।
ভারত বস্ত্র উৎপাদনে পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করেছে?
ভারত বস্ত্র উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
ভারত বস্ত্র রপ্তানিতে পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করেছে?
ভারত বস্ত্র রপ্তানিতে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
ভারতের সুতিবস্ত্র রপ্তানি হয় এমন কয়েকটি দেশের নাম লেখ।
ভারতের সুতিবস্ত্র রপ্তানি হয় এমন কয়েকটি দেশের নাম হল – শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইরান, ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:49.