ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ কাকে বলে?

যে সমস্ত উদ্ভিদ মানুষের প্রচেষ্টা ছাড়ায় প্রকৃতিতে আপনাআপনি জন্মায় এবং বড়ো হয়, তাদের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে।

✓ ভারতে প্রায় 5000 রকমের গাছ দেখা যায়। 

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

        ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে বৈশিষ্ট্য অনুসারে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – 

1. ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য:

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই অরণ্যের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 200 সেন্টিমিটারের বেশি এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 25° থেকে 35° সেলসিয়াস।
  2. সারা বছর গাছের পাতা সবুজ থাকে।
  3. গাছের গুঁড়িগুলি মোটা হয়।
  4. এই অরণ্যের কাঠগুলি শক্ত ও ভারী প্রকৃতির হয়।
  5. গাছের দৈর্ঘ্য খুব বেশি হয়।

প্রধান গাছ:

        রবার, রোজউড, গর্জন, মেহগনি, এবনি, চাপলাস, বাঁশ প্রভৃতি।

অবস্থান:

      আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহ, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল।

2. ক্রান্তীয় পাতাঝরা অরণ্য:

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই অরণ্যের গড় বৃষ্টিপাত 100 থেকে 200 সেন্টিমিটার এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 25° থেকে 30° সেলসিয়াস।
  2. শুষ্ক ঋতুতে গাছের পাতা ঝরে যায়।
  3. চিরসবুজ গাছের থেকে দৈর্ঘ্যে সামান্য কম।

প্রধান গাছ:

        শাল, সেগুন, চন্দন, বাঁশ, আম, জাম, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, শিমূল, মহুয়া।

অবস্থান:

         সমগ্ৰ গাঙ্গেয় সমভূমি, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল।

3. কাঁটাঝোপ ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ:

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই অরণ্যের গড় বৃষ্টিপাত 25 থেকে 50 সেন্টিমিটার আর চরমভাবাপন্ন জলবায়ু। গ্ৰীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা 35° থেকে 40° সেলসিয়াস।
  2. অত্যধিক বাষ্পীভবনের জন্য গাছ মাটি থেকে জল কম পায়। 
  3. প্রস্বেদন কমাতে পাতাগুলো খুব ছোটো হয়, কখনো কখনো কাঁটায় পরিণত হয়।

প্রধান গাছ:

       ফণীমনসা, অ্যাকেসিয়া, বাবুল, খেজুর প্রভৃতি।

অবস্থান:

      রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এর উত্তর পশ্চিম অংশে।

4. উপকূলীয় ম্যানগ্ৰোভ বা লবণাম্বু অরণ্য:

বৈশিষ্ট্য:

  1. উপকূল অঞ্চলে জোয়ারের জল মাটিকে লবণাক্ত করে।
  2. বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 25° থেকে 35° সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 50 সেন্টিমিটার এর বেশি। 
  3. শ্বাসমূল ও ঠেসমূল দেখা যায়। 
  4. উদ্ভিদের জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম দেখা যায়।

 প্রধান গাছ:

সুন্দরী, গরান, হেতাল, হোগলা, গোলপাতা প্রভৃতি।

অবস্থান:

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, ওড়িশার চিল্কা উপহ্রদ, অন্ধ্রপ্রদেশের কোলেরু ও পুলিকট উপহ্রদ, গুজরাটের কচ্ছ ও খাম্বায় উপসাগরের তীরবর্তী এলাকা।

5. পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য:

বৈশিষ্ট্য:

  1. 1500 মিটারের বেশি উঁচু অঞ্চলে এই অরণ্য দেখা যায়।
  2. এই অরণ্যের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 15° সেলসিয়াস এর কম। তুষারপাত বা বৃষ্টিপাত 50 থেকে 100 সেন্টিমিটার হয়।
  3. পাতাগুলো সূঁচালো হওয়ায় বরফ জমে থাকতে পারে না।
  4. গাছগুলি দেখতে মোচার মতো হয়।
  5. সোজাভাবে অনেকদূর পর্যন্ত উঠে যায়।
  6. এই গাছগুলির কান্ড নরম প্রকৃতির হয়।

প্রধান গাছ:

পাইন, ফার, বার্চ, সিডার, দেবদারু, ওক, পপলার, উইলো।

অবস্থান:

হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, দার্জিলিং, অরুণাচল প্রদেশ, নীলগিরি ও আন্নামালাই পর্বতের উঁচু অংশ।

অরণ্যের উপকারীতা লেখ।

  • অরণ্য বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • অরণ্য বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষন করে ও বাতাসে অক্সিজেন এর যোগান দেয়।
  • অরণ্য পরিবেশে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। 
  • গাছের শিকড় মাটির গভীরে গিয়ে মাটিকে আকড়ে ধরে রাখে, যা মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে করে।
  • অরণ্য বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • অরণ্য বহু প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।
  • অরণ্য থেকে প্রাপ্ত কাঠ সরবরাহ করে কাঠশিল্প ও কাগজশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • অরণ্য থেকে মধু, মোম, গঁদ, রজন, আঠা পাওয়া যায়। এই সব আহরণ করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।

বিশ্ব অরণ্য দিবস কবে?

21 শে মার্চ বিশ্ব অরণ্য দিবস পালন করা হয়।

অরণ্য সংরক্ষণ বলতে কী বোঝায়? অরণ্য সংরক্ষণের উপায়গুলি কী কী?

অরণ্য সংরক্ষণ বলতে বিচার বিবেচনা করে এবং পরিমিত ও সংযত ভাবে অরণ্যকে ব্যবহার করা বোঝায়, যাতে ভবিষ্যতে অরণ্য সম্পদের উৎপাদন অব্যাহত থাকে।

অরণ্য সংরক্ষণের উপায় বা পদ্ধতি:

      অরণ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকার কর্মসূচী গ্ৰহণ করা হয়েছে। যেমন –

1. বনসৃজন:

      পতিত জমি ও অলাভজনক কৃষিজমিতে নতুন গাছ লাগিয়ে বনভূমি গড়ে তোলা প্রয়োজন।

2. অপরিণত গাছ কাটা রোধ:

      ছোটো বা অপরিণত গাছ কাটলে বনভূমি দ্রুত ধ্বংস হয় তাই বিচার বিবেচনা করে পরিণত বৃক্ষ কাটা উচিত।

3. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ:

           বনভূমিতে অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ করলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই ইউরোপ ও আমেরিকার মত আইন করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পশুচারণ নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

4. বন সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন:

       নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা, অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ রোধ করতে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা উচিত।

5. দাবানল প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

        দাবানলের ফলে আগুন লেগে যাতে বনভূমি ধ্বংস না হয় সেজন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

6. অন্যান্য ব্যবস্থা:

           এছাড়া বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত অরণ্যের সৃষ্টির মাধ্যমে বন সংরক্ষণ করতে হবে।







This post was updated on 2023-02-22 17:57:55.

Leave a Comment

error: Content is protected !!