ভারতে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

 ভারতে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভারতে জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের

ভূমিকা:

         বেগবতী জলস্রোতের সাহায্যে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে ডায়ানামোর সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে জলবিদ্যুৎ বলে। ভারতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেসমস্ত প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয় সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

  • অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:

      1. বন্ধুর ভূমিরূপ:

                        ভূমিরূপ বন্ধুর হলে প্রবাহিত নদী অত্যন্ত খরস্রোতা হয়ে যায়। ফলে প্রবল বেগে প্রবাহিত জলে সহজেই টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। যেমন – হিমালয়ের নদীগুলি অত্যন্ত খরস্রোতা।

      2. নিয়মিত ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত:

                         বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা নদীতে সারাবছর অনবরত জলপ্রবাহ বজায় রাখে, ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত থাকে। 

       3. বরফগলা জলের সরবরাহ:

                          পাহাড়ি অঞ্চলের নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে। ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা হয়। যেমন- হিমালয় পর্বতের নদীসমূহ।

        4. ঈষদ্- উষ্ণ পরিবেশ:

                           অতিশীতল পরিবেশে নীল জল বরফে পরিণত হলে নদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস পায়। বিপরীতভাবে, অত্যাধিক উষ্ণতায় বাষ্পীভবনের পরিমাণ বর্ধিত হয়। ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য ঈষদ্-উষ্ণ পরিবেশ আদর্শ।

         5. দুর্বল ভূতাত্ত্বিক গঠনমুক্ত অবস্থা:

                             চুত্যি, বিভঙ্গ, ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল প্রভৃতি প্রতিকূল ভূতাত্ত্বিক অবস্থা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায়।তাই সুস্থির ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বড় ধরনের বিপর্যের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

        6. কঠিন শিলার প্রাচুর্য:

                              কঠিন শিলা গঠিত নদী উপত্যকায় বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা হয়।

        7. বনভূমির অবস্থান:

                             অরণ্যাবৃত পরিবেশে নদী ক্ষয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে জলবাহিত পলি, বালি, কাঁদার পরিমাণ কম হওয়ার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। এছাড়া বনভূমির আধিক্য থাকায় বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত ও নিয়মিত হয়ে থাকে।

Read– পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা দাও।

  • অনুকূলঅর্থনৈতিক পরিবেশ:

     1. মূলধন:

                    জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রাথমিক অবস্থায় যন্ত্রপাতি কিনতে, স্থাপন করতে, বাঁধনির্মাণে প্রচুর মূলধন এর প্রয়োজন হয়।

      2. উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা:

                   জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উচ্চ কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন।

      3. চাহিদা:

                  জলবিদ্যুৎ একটি উৎপাদিত পণ্য। সুতরাং, এই পণ্য বিপণনের জন্য বাজারও প্রয়োজন। তবে জলবিদ্যুৎ বেশিদূর পর্যন্ত পরিবহন করা যায় না।তাই, উৎপাদন কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে ব্যাপক চাহিদা থাকলেই সেই অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

       4. অন্যান্য শক্তির অভাব:

                       যে সকল অঞ্চলে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এর প্রাচুর্যতা দেখা যায় সেই সব অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা অলাভজনক। কিন্তু যে সব অঞ্চলগুলিতে এই সম্পদ গুলি কম পরিমাণে থাকে সেখানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা লাভজনক। এছাড়া জলবিদ্যুতের বিকাশ ঘটলে কয়লা, খনিজ তেলের মতো চিরাচরিত শক্তির ব্যবহার কমবে।

       5. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা:

                         বহুমুখী নদী পরিকল্পনার একটি মুখ্য উদ্দেশ্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্যচাষ, বনসৃজন প্রভৃতি উদ্দেশ্য গুলির পাশাপাশি এই ব্যবস্থাপনায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনও করা হয়।

       6. অন্যান্য:

                   উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও যন্ত্রপাতি আনায়ন ও শ্রমিকের যাতায়াতের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন। প্রচুর দক্ষ ও সুলভ কারিগর প্রয়োজন।

Read– যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়াগুলি আলোচনা করো।

✓ ভারতের কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম হল-
          ভাকরা ও নাঙাল, হীরাকুঁদ, উকাই, শিবসমুদ্রম, মাইথন প্রভৃতি।

✓ পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম হল-
        ম্যাসাঞ্জোর, জলঢাকা প্রভৃতি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!