মধ্য ও নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলির বর্ণনা দাও।

 মধ্য ও নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলির বর্ণনা দাও। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের সাহায্য করবে।এই প্রশ্নটি বড়ো প্রশ্ন হিসেবেও আসতে পারে আবার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হিসেবেও আসতে পারে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

          পার্বত্য অংশ ছেড়ে নদী সমভূমিতে প্রবেশ করা মাত্র ভূমির ঢাল কমে যায় বলে নদীর বেগও কমে যায়।নদী বাহিত পদার্থ সমূহ সঞ্চয় হতে থাকে। ফলে নদী উপত্যকা ক্রমশ অগভীর হয় নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে পার্শ্বক্ষয় চলতে থাকে। মধ্য ও নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. পলল শঙ্কু বা পললব্যজনী বা পললপাখা:

                            পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী সমভূমিতে প্রবেশ করা মাত্র গতিপথের ঢাল হঠাৎ করে কমে যায় বলে নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাকর, প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে শঙ্কুর আকারে সঞ্চিত হয়, এটি পলল শঙ্কু নামে পরিচিত।

          পলল শঙ্কুর ওপর দিয়ে নদী বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলে পলল শঙ্কু অর্ধ গোলাকার আকৃতিতে ভাগ হয়ে পড়ে। হাত পাখার মত দেখতে প্রায় গোলাকার এই  ভূমিরূপকে পলল ব্যাজনী বা পলল পাখা বল।

যেমন – হিমালয়, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে প্রায় সকল নদীতেই পলল ব্যাজনী গড়ে উঠেছে।

পলল শঙ্কু বা পললব্যজনী বা পললপাখা

2. নদীচর ও নদী বদ্বীপ:

                       নদীর বহন ক্ষমতা কমে গেলে নদীবাহিত পদার্থ গুলি নদীর গর্ভে ক্রমাগত সঞ্চয় করে চর বা চড়ার সৃষ্টি করে। চর বা চড়া অংশে সঞ্চয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে বৃদ্ধি পেলে তা ক্রমশ দ্বীপে পরিণত হয়, একে নদী দ্বীপ বলে।

    যেমন – ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর মাজুলি ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ। আমাজন নদীর ইলহা-দ্য-মারাজো পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ। 

নদীচর ও নদী বদ্বীপ

Read– আফ্রিকা মহাদেশ সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন।

3. আঁকাবাঁকা গতিপথ বা মিয়েন্ডার:

                           সমভূমিতে নদী প্রবাহ পথে বাঁধা পেলে তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। বাঁকের যে অংশে জলস্রোত আঘাত করে ক্ষয় করে, তার বিপরীত অংশে সঞ্চয় করে। এই সঞ্চয়কে বিন্দুবার বলে। এইভাবে ক্রমশ ক্ষয় ও সঞ্চয়ের ফলে অসংখ্য নদী বাঁকের সৃষ্টি হয়, একে মিয়েন্ডার বলে।

   যেমন – গঙ্গা অববাহিকার প্রায় সব নদীতেই মিয়েন্ডার  দেখা যায়। 

4. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ:

                  নদী খুব এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হলে এবং পার্শ্ব ফল চলতে থাকলে একসময় বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হয়ে যায়। অবশেষে ঐ সংকীর্ণ স্থানটি মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নদী সোজা পথে প্রবাহিত হয়। পরিত্যক্ত বা অবশিষ্ট নদী বাঁকটি হ্রদের আকারে অবস্থান করে। এই ধরনের হ্রদ ঘোড়ার ক্ষুরের মতো দেখতে হয় বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

   যেমন – গঙ্গা নদীর নিম্ন অববাহিকায় অসংখ্য অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে।

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ

Read– ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন।

5. স্বাভাবিক বাঁধ ও প্লাবনভূমি:

                         নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ একদম কমে যায় ফলে নদীগর্ভ পলিতে ভরে যায় এবং ক্রমশ অগভীর হতে থাকে। দীর্ঘকাল পলি সঞ্চয়ের ফলে নদীগর্ভ ভরাট হয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় উঁচু হয়। নদীর দুই তীরে পলি সঞ্চয়ের ফলে বাঁধের আকারে, দীর্ঘ যে ভূমির সৃষ্টি করে তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি বলে।

   যেমন – মিসিসিপি, পো, হোয়াং-হো নদীতে স্বাভাবিক বাঁধের উচ্চতা ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

∆ স্বাভাবিক বাঁধ নদী নিম্ন অববাহিকাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে। তবে নদীতে জলপ্রবাহ অত্যাধিক বাড়লে নদীর জল স্বাভাবিক বাঁধকে অতিক্রম করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্লাবিত করে। প্লাবনের ফলে উপত্যকা অংশে পলি থিতিয়ে এক আস্তরণ পড়ে যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে প্লাবনভূমি বলে।

  যেমন – গঙ্গা, সিন্ধু প্রভৃতি নদীর নিম্ন অববাহিকায় প্লাবন সমভূমি গড়ে উঠেছে।

স্বাভাবিক বাঁধ ও প্লাবনভূমি

6. বদ্বীপ:

            নদী প্রবাহের শেষ অবস্থায় নদী যখন সাগর বা হ্রদে মিলিত হয়। তখন মোহনায় দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি সঞ্চিত হয়ে মাত্রাহীন ‘ব’ দ্বীপ বা গ্ৰীক অক্ষর ‘∆’ ডেল্টার মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে বদ্বীপ বলে। 

  যেমন –  গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। 

বদ্বীপ

Leave a Comment

error: Content is protected !!