মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল বলতে কী বোঝো এবং বৈশিষ্ট্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
মৌসুমী জলবায়ু:
মৌসুমী শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিন বা মালয়ালম শব্দ মনসিন থেকে। যার অর্থ ঋতু। ঋতু অনুসারে প্রবাহিত বায়ুর মাধ্যমে যে জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে মৌসুমী জলবায়ু বলে।
উভয় গোলার্ধে 10°-25° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশ সমূহের পূর্বপ্রান্তে মৌসুমী জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই জলবায়ু প্রায় 30° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
অবস্থান:
প্রধান অঞ্চল:
এশিয়া মহাদেশের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে, যেমন – ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাউস, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে।
অপ্রধান বা গৌণ অঞ্চল:
- আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলের মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার সোমালিয়া।
- উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ফ্লোরিডা উপকূল।
- অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অংশে কুইন্সল্যান্ড।
- দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল।
মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:
1. উষ্ণতা:
- মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বিরাজিত চারটি ঋতুর মধ্যে তিনটি উষ্ণ ( গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ)।
- গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায়। এই সময় গড় তাপমাত্রা 27°-32°c হয় এবং উপকূল থেকে দূরে দেশের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা বেড়ে 40°-50°c পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- প্রচন্ড উষ্ণতার জন্য গ্রীষ্মকালের দুপুরে উত্তর ভারতে গরম লু বাতাস প্রবাহিত হয়।
- শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে 10°-22°c এর মধ্যে। নিম্ন অক্ষাংশে উষ্ণতা বেশি এবং উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতা কম থাকে।
- এই জলবায়ুতে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর 2°-12°c পর্যন্ত হয়।
2. বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ:
- এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে লম্বভাবে পতিত সূর্য রশ্মির জন্য স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ হয়ে বলে স্থলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
- শীতকালে তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশির জন্য উষ্ণতা বেশ কমে যায় ফলে স্থলভাগের উপর বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে।
- শীতকালে স্থলভাগের উচ্চচাপ ক্ষেত্র থেকে শুষ্ক ও শীতল বাতাস জলভাগের নিম্নচাপ ক্ষেত্রে দিকে প্রবাহিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ সহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এই বায়ু উত্তর-পূর্ব।
3. বৃষ্টিপাত:
গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত:
গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত যথেষ্ট আর্দ্র হলেও তখন ব্যাপকভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। তবে বিকেলের দিকে স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়, একে পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী, দক্ষিণ ভারতে আম্রবৃষ্টি, উত্তর ভারতে আঁধি বলে।
বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত:
গ্রীষ্মকালের শেষে আর্দ্র মৌসুমী বায়ুর আগমনের ফলে বর্ষাকালের সূচনা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই আর্দ্র বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী নামে পরিচিত। মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 70-80% এই বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। এই অবস্থাকে মৌসুমী বিস্ফোরণ বলে।
শরৎকালীন বৃষ্টিপাত:
শরৎকালে যখন আর্দ্র মৌসুমী বায়ু স্থলভাগ থেকে প্রত্যাবর্তন করে তখন মাঝে মাঝে সমুদ্রের উপর সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উপকূল সংলগ্ন অঞ্চল সমূহে প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ঝড়ের নাম টাইফুন ও পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড়ের নাম আশ্বিনের ঝড়।
শীতকালীন বৃষ্টিপাত:
স্থলভাগের উপর দিয়ে আসা শীতল ও শুষ্ক মৌসুমী বায়ু ভারতীয় উপমহাদেশে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু নামে প্রবাহিত হয় বলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না। তবে এই সময় সুদূর ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে শীতকালে শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।