রাসায়নিক আবহবিকার:
যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাস (যেমন – অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প) ও বিভিন্ন অম্লের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর বিয়োজিত হয়ে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে।
প্রকারভেদ:
রাসায়নিক আবহবিকার মূলত পাঁচটি প্রধান প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। যথা –
1. অঙ্গারযোজন বা কার্বোনেশন:
বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের সঙ্গে জলের রাসায়নিক সংযোগে সৃষ্ট কার্বনিক অ্যাসিড শিলা খনিজের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে শিলার পরিবর্তন ঘটালে তাকে কার্বনেশন বা অঙ্গারযোজন বলে।
বৃষ্টির জল বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড এর সাথে মিশে সৃষ্টি হয় মৃদু কার্বনিক অ্যাসিড।
বিশুদ্ধ জলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু কার্বনিক অ্যাসিডে সহজেই দ্রবীভূত হয়। এই কার্বনিক অ্যাসিডের সঙ্গে চুনাপাথর বা ক্যালশিয়াম কার্বনেট বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট তৈরি করে।
চুনাপাথর গঠিত কার্স্ট অঞ্চলে ভূমিরূপের বিবর্তন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ঘটে।
2. জারণ বা অক্সিডেশন:
জল বা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে শিলার খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন সংযুক্ত হলে তাকে জারণ বা অক্সিডেশন বলে।
ভূপৃষ্ঠের যেসকল শিলার মধ্যে লোহা আছে সেখানে এই প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল। লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে শিলার মধ্যে অবস্থান করে তখন তা ভীষণ কঠিন, কিন্তু অক্সিডেশন প্রক্রিয়ায় যখন ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়, তা সহজেই ভেঙে যায় এবং শিলায় মরচে পড়ে।
ম্যাগনেটাইট এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লিমোনাইটে এবং ফেরাস সালফাইড, ফেরাস সালফেটে পরিণত হয়।
3. জলযোজন বা হাইড্রেশন:
শিলা খনিজের সাথে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জল যুক্ত হয়ে শিলায় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটলে তাকে জলযোজন বা হাইড্রেশন বলে।
এই প্রক্রিয়ায় কোনো কোনো শিলাখনিজ অধিক জল শোষণ করে আয়তনে প্রসারিত হয়। তার ফলে খনিজের গ্ৰন্থিবন্ধনসহ ভেতরের অন্যান্য বাঁধন আলগা হয়ে পড়ে এবং গৌণ খনিজ গুলি নমনীয় হয়ে নতুন খনিজ উৎপন্ন হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ক্যালশিয়াম সালফেট ভঙ্গুর জিপসামে পরিণত হয়। হেমাটাইট ভঙ্গুর লিমোনাইটে পরিণত হয়।
4. আর্দ্রবিশ্লেষণ বা হাইড্রোলিসিস:
শিলামধ্যস্থ খনিজ ও জলের অণুর একসঙ্গে বিয়োজন ও বিক্রিয়াকে আর্দ্রবিশ্লেষণ বা হাইড্রোলিসিস বলে।
এই প্রক্রিয়ায় জল হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সিল আয়নে ভেঙে গিয়ে শিলাস্থিত খনিজের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া ও আয়ন বিনিময় করে আবহবিকার ঘটায়।
এই প্রক্রিয়ায় ফেল্ডসপার অ্যালুমিনো সিলিসিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইডে পরিণত হয়।
5. দ্রবণ বা সলিউশন:
রাসায়নিক আবহবিকারের একটি অন্যতম প্রক্রিয়া হল দ্রবণ বা সলিউশন। বেশ কিছু নরম শিলাখনিজ, যেমন – জিপসাম, সৈন্ধব লবণ প্রভৃতি জলের সংস্পর্শে এসে সহজেই দ্রবীভূত হয়ে যায়, একে দ্রবণ বলে।
✓ কোন জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার অধিক ঘটে?
নিরক্ষীয় ও আর্দ্র মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার অধিক ঘটে।
✓ নিরক্ষীয় অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবি-কারের প্রভাব বেশি দেখা যায় কেন?
- অধিক উষ্ণতা ও অধিক বৃষ্টিপাত হল রাসায়নিক আবহবিকারের প্রধান দুটি শর্ত। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই দুটি শর্তই সারাবছর পরিলক্ষিত হয়।
- এখানে সারাবছরই গড় উষ্ণতা প্রায় 27°C এবং গড় বৃষ্টিপাত 200 সেমির অধিক হয়ে থাকে।
- এছাড়া, এখানে ঘন চিরহরিৎ অরণ্য থাকায় তার পাতা পচে প্রচুর পরিমাণে হিউমিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়।
এই তিনটি কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি দেখা যায়।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:37.