ভূমিকা:
অনেক ভৌগলিক যেমন কর্নেল, নেলসন, স্মিথ, হ্যারিস, অরুশো প্রমুখ ক্রিয়ার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণীবিভাগে সুপারিশ করেছেন।
বিভিন্ন প্রকার মুখ্য কার্যাবলীর উপর নির্ভর করে শহরের কর্মভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যেমন –
প্রশাসনিক শহর:
জনসাধারণের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পৌর বসতিকে প্রশাসনিক শহর বলে। এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয় এবং বিচার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
- জাতীয় রাজধানী – দিল্লী, লন্ডন ইত্যাদি।
- রাজ্য রাজধানী – কলকাতা, ভুবনেশ্বর ইত্যাদি।
- জেলা শহর – বারাসাত, আলিপুর ইত্যাদি।
- পৌরকেন্দ্র – চন্দননগর, কল্যানী ইত্যাদি।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শহর:
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্মের ওপর নির্ভর করে অনেক শহর গড়ে ওঠে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উপকরণ নির্মাণের কারখানা যেখানে গড়ে ওঠে, সেখানে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এইসব শহরে সেনাবাহিনীর থাকার ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিমান অবতরণ ক্ষেত্র, যুদ্ধ জাহাজের জন্য পোতাশ্রয় ইত্যাদি সুবিধা থাকতে পারে।
- প্রতিরক্ষা শহর – পাঁচমারি।
- গ্যারিসন শহর – ব্যারাকপুর, পুনে।
- নৌ শহর – ভবনগর, কোচিন ইত্যাদি।
- বিমানবাহিনী কেন্দ্র – কলাইকুন্ডা (খড়গপুর)।
শিল্প শহর:
বড়ো, মাঝারি ও ছোটো শিল্প উদ্যোগ গুলিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পৌরবসতিকে শিল্প শহর বলে। যেমন –
- কাগজ শিল্প কেন্দ্রিক – নৈহাটি।
- ইস্পাত শিল্প নগরী – জামশেদপুর।
- বিমানপোত নির্মাণ নগরী – ব্যাঙ্গালোর।
সংগ্ৰহভিত্তিক শহর:
খনিজ দ্রব্য, বনসম্পদ, মৎস্য সম্পদ প্রভৃতি আহরণ সংক্রান্ত কাজকর্মকে ভিত্তি করে সৃষ্ট পৌরবসতিকে সংগ্রহভিত্তিক শহর বলে। যেমন –
- খনি শহর – রাণীগঞ্জ।
- কাষ্ঠ সংগ্ৰহ কেন্দ্র – স্যান্ডালকারু(পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ)
- মৎস্য সংগ্রহ কেন্দ্র – শঙ্করপুর ( পশ্চিমবঙ্গ)
সাংস্কৃতিক শহর:
শিক্ষা, চিত্রকলা ও ভাস্কর্য, সিনেমা প্রভৃতি নানান মানবসংস্কৃতির অসংখ্য কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহরকে সাংস্কৃতিক শহর বলে। যেমন –
- শিক্ষা শহর – শান্তিনিকেতন, অক্সফোর্ড ইত্যাদি।
- চিত্রকলা ও ভাস্কর্যভিত্তিক শহর – প্যারিস।
- সম্মেলন কেন্দ্র – শিকাগো, হ্যারোগেট ইত্যাদি।
- সিনেমা শিল্পভিত্তিক শহর – হলিউড।
বাণিজ্যিক শহর:
বিভিন্ন প্রকার বাণিজ্যিক কাজকর্মকে কেন্দ্র করে এই শহরের বিকাশ ঘটেছে। যেমন –
- কৃষি বিপনন কেন্দ্র – উইনিপেগ, কানসাস সিটি।
- ব্যাঙ্ক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র – ফ্রাঙ্কফুট।
- আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যকেন্দ্র – পোর্ট লুইস।
- বৃহৎ বাণিজ্যিক বন্দর – মুম্বাই, সাংহাই।
ধর্মীয় শহর:
ধর্মীয় কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহরকে ধর্মীয় শহর বলে।
যেমন – বারাণসী, মক্কা, রোম, জেরুজালেম ইত্যাদি।
পর্যটন শহর:
বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে জাতীয় শহর গড়ে ওঠে। এই সমস্ত শহরে আগত পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা যুক্ত হোটেল, বাজার ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।
যেমন – দার্জিলিং, উটি, দীঘা, কুলু, মানালি ইত্যাদি।
বসতি শহর:
এমন অনেক শহর দেখা যায়, যেসমস্ত স্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসগৃহের পরিমাণ সর্বাধিক। সড়কপথ, রেলপথ এবং বাসগৃহের সংখ্যাই এজাতীয় শহরে বেশি।
যেমন – সল্টলেক, নিউটাউন, পাটুলি ইত্যাদি।
✓ C.B.D:
C.B.D এর পুরো অর্থ হল Central Business District বা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অঞ্চল যা নগর কেন্দ্র (City Center) নামে অভিহিত করা হয়। এটি নগরের সেই এলাকা যেখানে রয়েছে মুখ্য বাণিজ্যিক রাস্তাঘাট ও সরাসরি বাড়িগুলি। এটি হল নগরীর ব্যবসা ও পৌর কর্ম তৎপরতার কেন্দ্রস্থল।
✓ নগরায়ন:
অধ্যাপক Majid Hussain এর ভাষায় নগরায়ন হল নগর হবার এক প্রক্রিয়া।
R.B.Mandal এর মতে – ” নগর এলাকার জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে নগরায়ন বলে।”
✓ উমল্যান্ড:
অন্তঃস্থ নগরের ঠিক পার্শ্বস্থ এলাকাকে নির্দেশ করে। 1914 সালে Allise প্রথম ‘Umland’ শব্দটি ব্যবহার করেন।
Read- উপযুক্ত চিত্রসহ নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র ব্যাখ্যা কর।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:43.