শহরের কর্মভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ কর।

শহরের কর্মভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। 2018 সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসেছিল। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

অনেক ভৌগলিক যেমন কর্নেল, নেলসন, স্মিথ, হ্যারিস, অরুশো প্রমুখ ক্রিয়ার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণীবিভাগে সুপারিশ করেছেন।

            বিভিন্ন প্রকার মুখ্য কার্যাবলীর উপর নির্ভর করে শহরের কর্মভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যেমন – 

প্রশাসনিক শহর:

           জনসাধারণের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পৌর বসতিকে প্রশাসনিক শহর বলে। এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয় এবং বিচার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। 

  • জাতীয় রাজধানী – দিল্লী, লন্ডন ইত্যাদি।
  • রাজ্য রাজধানী – কলকাতা, ভুবনেশ্বর ইত্যাদি।
  • জেলা শহর – বারাসাত, আলিপুর ইত্যাদি।
  • পৌরকেন্দ্র – চন্দননগর, কল্যানী ইত্যাদি।

প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শহর:

           প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্মের ওপর নির্ভর করে অনেক শহর গড়ে ওঠে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উপকরণ নির্মাণের কারখানা যেখানে গড়ে ওঠে, সেখানে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এইসব শহরে সেনাবাহিনীর থাকার ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিমান অবতরণ ক্ষেত্র, যুদ্ধ জাহাজের জন্য পোতাশ্রয় ইত্যাদি সুবিধা থাকতে পারে। 

  • প্রতিরক্ষা শহর – পাঁচমারি।
  • গ্যারিসন শহর – ব্যারাকপুর, পুনে।
  • নৌ শহর – ভবনগর, কোচিন ইত্যাদি।
  • বিমানবাহিনী কেন্দ্র – কলাইকুন্ডা (খড়গপুর)।

শিল্প শহর:

       বড়ো, মাঝারি ও ছোটো শিল্প উদ্যোগ গুলিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পৌরবসতিকে শিল্প শহর বলে। যেমন –

  • কাগজ শিল্প কেন্দ্রিক – নৈহাটি।
  • ইস্পাত শিল্প নগরী – জামশেদপুর।
  • বিমানপোত নির্মাণ নগরী – ব্যাঙ্গালোর।

সংগ্ৰহভিত্তিক শহর:

       খনিজ দ্রব্য, বনসম্পদ, মৎস্য সম্পদ প্রভৃতি আহরণ সংক্রান্ত কাজকর্মকে ভিত্তি করে সৃষ্ট পৌরবসতিকে সংগ্রহভিত্তিক শহর বলে। যেমন –

  • খনি শহর – রাণীগঞ্জ।
  • কাষ্ঠ সংগ্ৰহ কেন্দ্র – স্যান্ডালকারু(পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ)
  • মৎস্য সংগ্রহ কেন্দ্র – শঙ্করপুর ( পশ্চিমবঙ্গ)

সাংস্কৃতিক শহর:

           শিক্ষা, চিত্রকলা ও ভাস্কর্য, সিনেমা প্রভৃতি নানান মানবসংস্কৃতির অসংখ্য কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহরকে সাংস্কৃতিক শহর বলে। যেমন – 

  • শিক্ষা শহর – শান্তিনিকেতন, অক্সফোর্ড ইত্যাদি।
  • চিত্রকলা ও ভাস্কর্যভিত্তিক শহর – প্যারিস।
  • সম্মেলন কেন্দ্র – শিকাগো, হ্যারোগেট ইত্যাদি।
  • সিনেমা শিল্পভিত্তিক শহর – হলিউড।

বাণিজ্যিক শহর:

           বিভিন্ন প্রকার বাণিজ্যিক কাজকর্মকে কেন্দ্র করে এই শহরের বিকাশ ঘটেছে। যেমন – 

  • কৃষি বিপনন কেন্দ্র – উইনিপেগ, কানসাস সিটি।
  • ব্যাঙ্ক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র – ফ্রাঙ্কফুট।
  • আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যকেন্দ্র – পোর্ট লুইস।
  • বৃহৎ বাণিজ্যিক বন্দর – মুম্বাই, সাংহাই।

ধর্মীয় শহর:

           ধর্মীয় কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহরকে ধর্মীয় শহর বলে। 

যেমন – বারাণসী, মক্কা, রোম, জেরুজালেম ইত্যাদি।

পর্যটন শহর:

         বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে জাতীয় শহর গড়ে ওঠে। এই সমস্ত শহরে আগত পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা যুক্ত হোটেল, বাজার ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। 

যেমন – দার্জিলিং, উটি, দীঘা, কুলু, মানালি ইত্যাদি।

বসতি শহর:

        এমন অনেক শহর দেখা যায়, যেসমস্ত স্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসগৃহের পরিমাণ সর্বাধিক। সড়কপথ, রেলপথ এবং বাসগৃহের সংখ্যাই এজাতীয় শহরে বেশি। 

যেমন – সল্টলেক, নিউটাউন, পাটুলি ইত্যাদি।

C.B.D:

C.B.D এর পুরো অর্থ হল Central Business District বা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অঞ্চল যা নগর কেন্দ্র (City Center) নামে অভিহিত করা হয়। এটি নগরের সেই এলাকা যেখানে রয়েছে মুখ্য বাণিজ্যিক রাস্তাঘাট ও সরাসরি বাড়িগুলি। এটি হল নগরীর ব্যবসা ও পৌর কর্ম তৎপরতার কেন্দ্রস্থল।

নগরায়ন:

অধ্যাপক Majid Hussain এর ভাষায় নগরায়ন হল নগর হবার এক প্রক্রিয়া।

       R.B.Mandal এর মতে – ” নগর এলাকার জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে নগরায়ন বলে।”

উমল্যান্ড:

অন্তঃস্থ নগরের ঠিক পার্শ্বস্থ এলাকাকে নির্দেশ করে। 1914 সালে Allise প্রথম ‘Umland’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

Read- উপযুক্ত চিত্রসহ নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র ব্যাখ্যা কর।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:43.

Leave a Comment

error: Content is protected !!