শিলামন্ডল কাকে বলে?
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন স্তরে স্তরে বিন্যস্ত।এর মধ্যে সবার ওপরে যে শিলাময় স্তরটি আছে, তাকে শিলামন্ডল বলে।
শিলা কাকে বলে?
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ ভাবে শিলা বলা হয়।শিলা বলতে শুধু কঠিন পদার্থকেই বোঝায় না, নুড়ি, পাথর,বালি, কাঁদা সবকিছুই শিলার পর্যায়ে পড়ে।
শিলা কতপ্রকার ও কী কী?
উৎপত্তি অনুসারে শিলাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা-
- আগ্নেয় শিলা
- পাললিক শিলা
- রূপান্তরিত শিলা
আগ্নেয় শিলা কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।
ভূ-অভ্যন্তরস্ত উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ গলিত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে লাভা রূপে সঞ্চিত হয়ে যে শিলা তৈরি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলা হয়। যেমন- গ্ৰ্যানাইট।
- পৃথিবীতে সর্বপ্রথম এই শিলার আবির্ভাব হয়েছিল বলে একে প্রাথমিক শিলাও বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- আগ্নেয় শিলার মধ্যে কোন স্তর নেই।
- জীবাশ্ম উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না।
- আগ্নেয় শিলা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
- দেখতে স্ফটিকাকার বা কাঁচের মত।
- আগ্রহ শিলায় বিভিন্ন ধরনের ধাতব খনিজ পদার্থ লক্ষ্য করা যায়।
পাললিক শিলা কাকে বলে?
সাগর,মহাসাগর বা হ্রদের তলদেশে দীর্ঘকাল ধরে বিপুল পরিমাণে পলি সঞ্চয় হলে নীচের পলিস্তর গুলি ধীরে ধীরে উপরের ভারী জলভাগ ও পলি রাশির চাপে এবং নীচের তাপে জমাট বেঁধে শক্ত শিলায় পরিণত হয়। পলি জমাট বেঁধে এই শিলা তৈরি হয় বলে, এর নাম পাললিক শিলা। যেমন-বেলে পাথর, চুনা পাথর, কাদা পাথর প্রভৃতি।
- স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয় বলে পাললিক শিলার অপর নাম স্তরীভূত শিলা।
বৈশিষ্ট্য:
- পাললিক শিলার স্তর গুলি স্পষ্ট বোঝা যায়।
- এই শিলার মধ্যে জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
- পাললিক শিলা কোমল বলে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- এই শিলার মধ্যে স্ফটিক থাকে না।
- সছিদ্রতা পাললিক শিলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- পাললিক শিলার মধ্যে কয়লা খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?
অনেক সময় ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ ও তাপ এর জন্য বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পাললিক শিলা আগের চেয়ে আরো কঠিন ও কেলাসিত হয়ে নতুন এক ধরনের শিলায় পরিণত হয়।এইরকম শিলার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট শিলাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন- নিস, মার্বেল,স্লেট।
বৈশিষ্ট্য:
- রূপান্তরিত শিলা অন্যান্য শিলার তুলনায় বেশি কঠিন হয়।
- এই শিলার মধ্যে কোন জীবাশ্ম থাকে না।
- রূপান্তরিত শিলা তুলনামূলকভাবে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- রূপান্তরিত শিলা থেকে অধাতব খনিজ দ্রব্য, যেমন-অভ্র ও বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান পাথর পাওয়া যায়।
জীবাশ্ম কাকে বলে?
দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ভিদ বা প্রাণী দেহ পলি স্তরের মধ্যে চাপা পড়ে ধীরে ধীরে প্রস্তরীভূত হয় এবং পাথরের মধ্যে তার ছাপ থেকে যায়। উদ্ভিদ বা প্রাণীর ছাপ যুক্ত সেই শিলাকে জীবাশ্ম বলে।
- জীবাশ্ম শুধুমাত্র পাললিক শিলায় দেখা যায়।
ম্যাগমা কাকে বলে?
ভূগর্ভের প্রচন্ড উত্তাপে ও চাপে ভূ অভ্যন্তরস্থ খনিজ গুলি গলে গিয়ে যে চটচটে আঠালো পদার্থের ন্যায় সঞ্চিত থাকে তাকে ম্যাগমা বলে।
- ম্যাগমার উষ্ণতা সাধারণত 700 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মত হয়।
লাভা কাকে বলে?
ম্যাগমা যখন ভূগর্ভ থেকে উপরে উঠে কোন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা ফাটল এর মধ্য দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে উত্তপ্ত পদার্থ রূপে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয়, তাকে লাভা বলে।
শিলাচক্র কাকে বলে?
ভূত্বকে তিন প্রকার শিলার উৎপত্তি বা সৃষ্টি চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা লাভা রূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে অথবা ভূগর্ভের মধ্যেই জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি হয়।এই আগ্নেয় শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত ও অপসারিত হয়ে সমুদ্র তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। ফলে, পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়। পুনরায় পাললিক শিলা তাপ ও চাপের ফলে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়।
তবে শুধু পাললিক শিলা নয় আগ্নেয় শিলাও অনেক সময় তাপ ও চাপের ফলে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়। আবার কখনো কখনো সুদীর্ঘ ফাটলের মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত ম্যাগমা উদ্ভেদের ফলে তার সংস্পর্শে এসে পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা গলে গিয়ে আগ্নেয় শিলায় পরিণত হয়।
এভাবে আগ্নেয় শিলা থেকে পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা, আগ্নেয় ও পাললিক শিলা থেকে রূপান্তরিত শিলা এবং পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা থেকে আগ্নেয় শিলার উৎপত্তি ঘটে। চক্রাকারে বিভিন্ন শিলার সৃষ্টি বা রূপান্তরকে বলে শিলাচক্র।