সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ গুলি লেখ।

 সমুদ্র জলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি এই লেখাটি তে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।এই প্রশ্নটি একাদশ শ্রেণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।প্রশ্নটি কখনও ৫ মার্কসে আবার কখনো ৩ অথবা ২ মার্কসেরও দেয়। সুতরাং প্রশ্নটি পড়ে পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদেরও সাহায্য করো।

ভূমিকা:

স্থলভাগের সর্বত্র যেমন উষ্ণতা সমান হয় না তেমনি সমুদ্র জলের উষ্ণতাও সর্বত্র সমান নয়। সাধারণত নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত জলের উষ্ণতার ব্যাপক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। উষ্ণতার তারতম্যের কারণ গুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. অক্ষাংশ:

               নিম্ন অক্ষাংশ থেকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে সূর্যরশ্মির পতন কোণ ক্রমশ কমতে থাকে, ফলে সমুদ্র জলের উষ্ণতাও হ্রাস পেতে থাকে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পতিত হয়। ফলে সমুদ্র জলের উষ্ণতাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে সূর্যরশ্মি কম পড়ে। ফলে সমুদ্র জলের উষ্ণতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সুতরাং, সমুদ্র জলের উষ্ণতার তারতম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অক্ষাংশ।

2. সমুদ্রস্রোত:

                 সমুদ্রস্রোত দুই প্রকারের। যথা-উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত।এই দুই প্রকারের স্রোত সমুদ্র জলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটায়। 

নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্র স্রোত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে প্রবেশ করে সেখানকার জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। যেমন- উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত মধ্য আটলান্টিকের জলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে হিমমন্ডল থেকে আগত শীতল সমুদ্রস্রোত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সমুদ্রের জলের উষ্ণতা কমিয়ে দেয়। যেমন- শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলের উষ্ণতা কমে যায়।

3. মগ্ন শৈলশিরা:

                    মগ্ন শৈলশিরার অবস্থান অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্র জলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটায়।মগ্ন শৈলশিরা‌ সমুদ্র জলের অবাধ সঞ্চালনে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে শৈলশিরার দুপাশের জলে উষ্ণতার উল্লম্ব বন্টনে তারতম্য ঘটায়।

আফ্রিকার উত্তরে জিব্রাল্টার প্রণালীতে একটি মগ্ন শৈলশিরা থাকায় আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনায় ভূমধ্যসাগরের জলের উষ্ণতা বেশি হয়।

Read– নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে মৎস্য ক্ষেত্র গুলির বিকাশ লাভ বা উন্নতির কারণ শেখ।

4. বায়ুপ্রবাহ:

                 সমুদ্রস্রোত যেমন জলকে অন্যত্র সঞ্চালিত করে, তেমনি বাতাস প্রবাহিত হলে তার ঘর্ষণে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশি অন্যত্র তাড়িত হয়।তখন ওই স্থান পূরণের জন্য সমুদ্রের নীচ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল জল ওপরে উঠে আসে এবং সৌরকিরণে তা উষ্ণ হয়। এছাড়া স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা বা গরম বায়ু সমুদ্রের ওপরে এলে সমুদ্রজলের তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে।

5. হিমশৈলের অবস্থান:

                    হিমশৈলের অবস্থান সমুদ্র জলের উষ্ণতা কমিয়ে দেয়। যেমন- গ্ৰীনল্যান্ড ও দক্ষিণ মহাসাগর (কুমেরু) থেকে ভেসে আসা হিমশৈলের প্রভাবে আটলান্টিক,প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর এর উষ্ণতা হ্রাস পায়।

6. সমুদ্রজলের ঘনত্ব:

                        সমুদ্র জলের ঘনত্ব এর তারতম্যের ফলে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে।যে অঞ্চলে সমুদ্র জলের ঘনত্ব বেশি সেখানে উষ্ণতা কম হয়। কারণ সমুদ্র জলের তাপ শোষণ করা ও সংরক্ষণ করার ক্ষমতা বেশি হয়। অপরপক্ষে কম ঘনত্ব যুক্ত সমুদ্র জল দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যায়।

7. সমুদ্র জলের লবনতা:

                      সমুদ্র জলের লবনতা অধিক হলে জলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। ফলে জলের উষ্ণতা স্বভাবতই বেশি হয়।অপরপক্ষে যেসব অঞ্চলে সমুদ্র জলের লবনতা কম থাকে সেই অঞ্চলে সমুদ্র জলের উষ্ণতাও অপেক্ষাকৃত কম থাকে।

8. সমুদ্রে গভীরতার পার্থক্য:

               ‌‌        সমুদ্র তলদেশের গভীরতার পার্থক্যের সাথে সাথে সমুদ্রের জলের উষ্ণতার পার্থক্য ঘটে। সাধারণত সমুদ্র জলের গভীরতা বৃদ্ধির ফলে জলের উষ্ণতা কমতে থাকে। কিন্তু 3600 মিটার গভীরতা সমুদ্র জলের উষ্ণতা সর্বত্র সমান (1 ডিগ্রী সেলসিয়াস)।

9. ভূমিভাগের প্রভাব:

                        স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত সমুদ্র জলের উষ্ণতা উন্মুক্ত সমুদ্রের থেকে বেশি হয়। যেমন- স্থলবেষ্টিত ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগরের উষ্ণতা বেশি, যথাক্রমে 37.8 ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং 34.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু উন্মুক্ত মেক্সিকো উপসাগরের উষ্ণতা কম।

10. অ্যালবেডো:

                 অ্যালবেডোর তারতম্যের জন্যও সমুদ্রজলের উষ্ণতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। মেরু অঞ্চলে অ্যালবেডোর পরিমাণ বেশি হওয়ায় সমুদ্র জলের উষ্ণতা কম।কিন্তু ক্রান্তীয় বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে অ্যালবেডো কম হওয়ায় সমুদ্র জলের উষ্ণতা অনেক বেশি।

11. অন্যান্য কারণ:

                     এছাড়া সমুদ্র জলের বিস্তৃতি প্রভাব, স্থানীয় আবহিক অবস্থা সমূহ প্রভৃতি কারণে উষ্ণতার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!