হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।

পার্বত্য অঞ্চলে সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ:

1. গ্ৰাবরেখা:

        হিমবাহের ক্ষয়জাত দ্রব্যগুলি, যেমন – নুড়ি, পাথর, কাঁকর প্রভৃতি হিমবাহের সাথে বাহিত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়। এরূপ সঞ্চয়কে গ্ৰাবরেখা বলে। 

  উদাহরণ – সিকিমের লাচুং -এ এই প্রকার গ্ৰাবরেখা দেখা যায়।

  অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গ্ৰাবরেখা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যথা – 

a) পার্শ্ব গ্ৰাবরেখা:

               হিমবাহের প্রবাহপথের দুইপাশে যে গ্ৰাবরেখা অবস্থান করে, তাকে পার্শ্ব গ্ৰাবরেখা বলে।

b) মধ্য গ্ৰাবরেখা:

         দুটি হিমবাহের পাশাপাশি মিলনের ফলে। মধ্যবর্তী সীমারেখায় বা মিলন অঞ্চলে যে গ্ৰাবরেখা অবস্থান করে, তাকে মধ্য গ্ৰাবরেখা বলে।

c) প্রান্ত গ্ৰাবরেখা:

         হিমবাহ যেখানে শেষ হয় অর্থাৎ গলে যায়, সেখানে যে গ্ৰাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে প্রান্ত গ্ৰাবরেখা বলে।

d) ভূমি গ্ৰাবরেখা:

        হিমবাহের নিম্নাংশে বা তলদেশে গ্ৰাবরেখা অবস্থান করলে তাকে ভূমি গ্ৰাবরেখা বলে।

ভূমি গ্ৰাবরেখা

e) অবিন্যস্ত গ্ৰাবরেখা:

            বিক্ষিপ্ত অবস্থায় গ্ৰাবরেখা সঞ্চিত হলে তাকে অবিন্যস্ত গ্ৰাবরেখা বলে।

f) বলয়ধর্মী গ্ৰাবরেখা:

            বলয় আকারে সঞ্চিত গ্ৰাবরেখাকে বলয়ধর্মী গ্ৰাবরেখা বলে।

g) রোজেন গ্ৰাবরেখা:

           গ্ৰাবরেখা একে অপরের ওপর সঞ্চিত হলে তাকে রোজেন গ্ৰাবরেখা বলে।

h) স্তরীভূত গ্ৰাবরেখা:

               সমুদ্র তলদেশে গ্ৰাবরেখা সঞ্চিত হলে তাকে স্তরীভূত গ্ৰাবরেখা বলে।

2. কেম:

         হিমবাহের শেষ প্রান্তে বা প্রান্ত গ্ৰাবরেখায় যখন বরফ গলে যায়। তখন হিমবাহের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, কাঁকর, কাঁদা স্তূপ আকারে জমে যে ত্রিকোণাকার ব-দ্বীপের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, একে কেম বলা হয়। কেম ধাপে ধাপে গঠিত হলে তাকে কেম সোপান বলে। 

কেম

পর্বতের পাদদেশে গঠিত ভূমিরূপ:

1. আগামুক:

হিমবাহের সঙ্গে নানান আকৃতির শিলা যখন বহুদূর থেকে বাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশ অঞ্চলে সঞ্চিত হয়, তাকে আগামুক বলে। 

বৈশিষ্ট্য:

  • এই শিলার সাথে স্থানীয় শিলার বৈশিষ্ট্যের কোনো মিল থাকে না।
  • আগামুক বৃহৎ আয়তন প্রস্তর খন্ড সমন্বিত।

2. এসকার:

           হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলা খন্ড , নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাঁদা প্রভৃতি জলস্রোতের দ্বারা পরিবাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশে নিম্নভূমিতে জমে যে আঁকা বাঁকা শৈলশিরার মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে এসকার বলে।

      উদাহরণ – ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকারটি বিখ্যাত

বৈশিষ্ট্য:

  • এসকারগুলি লম্বা, সরু ও খাড়া ঢাল যুক্ত।
  • উচ্চতা ও প্রস্থ 3-10 মিটার হয়।
  • এসকরগুলির দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি হয়।

3. বোল্ডার ক্লে:

হিমবাহ গলে যাওয়ার পর তার নীচে হিমবাহ বাহিত বালি, কাঁদা ও পাথর একসঙ্গে সঞ্চিত হলে তাকে বোল্ডার ক্লে বলে।

4. ড্রামলিন:

         হিমবাহ অধ্যুষিত নিম্নভূমিতে যেখানে বোল্ডার ক্লে সঞ্চিত হয়, সেখানে নুড়ি, প্রস্তর প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির টিলার মতো গঠিত হয়। এটি দেখতে অনেকটা উল্টানো নৌকা বা চামচের মতো দেখতে হয়। এই ধরনের ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে। 

    উদাহরণ – উত্তর আমেরিকার উইসকনসিন রাজ্যে একসঙ্গে 10 হাজার ড্রামলিন দেখা যায়।

ড্রামলিন

বৈশিষ্ট্য:

  • ড্রামলিনের উচ্চতা 5-50 মিটার হয়।
  • একটি ড্রামলিন 1 থেকে 2 কিমি দীর্ঘ ও 400-600 মিটার প্রশস্ত হয়।
  • ড্রামলিনের সংঘবদ্ধ এবং নিয়মিত অবস্থান দেখে ডিমের ঝুড়িতে ডিম সাজানো রয়েছে বলে মনে হয়। তাই একে ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ বলে।

5. বহিঃবিধৌত সমভূমি:

              হিমবাহের প্রান্তদেশে বরফ যেখানে গলে যায় সেখানে হিমবাহ দ্বারা সঞ্চিত স্তূপাকার পদার্থগুলি জলপ্রবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে আকার অনুযায়ী বহুদূর বিস্তৃত হয়। হিমবাহের প্রান্তদেশে প্রস্তর খন্ড, বালুকা, নুড়ি প্রভৃতি বহুদূর বিস্তৃত হয়ে সমভূমি গঠিত হয়। একে বহিঃবিধৌত সমভূমি বলে।

     বহিঃবিধৌত সমভূমির মধ্যস্থিত বিশাল আকৃতির বরফ খন্ড গলে গিয়ে যেসব গহ্বরের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে কেটল বলে। পরবর্তীকালে ঐসব গহ্বরে হিমবাহ গলা জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয় তাকে কেটল হ্রদ বলে।

6. নব:

        হিমবাহ বাহিত নুড়ি, শিলা খন্ড প্রভৃতি জলপ্রবাহের সাথে বাহিত হয়ে বহিঃবিধৌত জলাভূমির ওপর টিলার আকারে অবস্থান করলে সেই টিলা গুলিকে নব বলে।

This post was updated on 2023-02-22 17:57:24.

Leave a Comment

error: Content is protected !!