হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের একদেশী ভবনের কারণগুলি লেখ।

হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের এক দেশী ভবনের কারণগুলি লেখ।

 ভূমিকা:

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম পাটকল স্থাপিত হয় 1859 সালে কলকাতার কাছে রিষড়ায়। এরপর থেকে রাজ্যে এই শিল্পের ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে।দেশে চালু পাটকলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মোট 59 টি পাটকল আছে।এই পাটকলগুলো গড়ে উঠেছে হুগলি নদীর উভয় তীরে- উত্তরে কল্যাণী-বাঁশবেড়িয়া থেকে দক্ষিনে বজবজ- উলুবেড়িয়ার মধ্যে,যাকে হুগলি শিল্পাঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়। এত স্বল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাটশিল্পের এরকম ঘন সন্নিবেশকে বলা হয় পাট শিল্পের একদেশী ভবন। হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের এক দেশী ভবনের কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. ঐতিহাসিক কারণ:

  • 1911 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত কলকাতা ছিল সমগ্র ভারতের রাজধানী।
  • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্য কেন্দ্র কলকাতাতেই স্থাপন করে। শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে সারা বিশ্বে কলকাতার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি।
  • 1851 খ্রিস্টাব্দে রানীগঞ্জ কয়লা খনি অবস্থিত হওয়ায় কলকাতা শিল্প গড়ে তোলার আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।
  • তাই কলকাতা কে কেন্দ্র করে হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্প বিকাশ সে তাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করে।

2. কাঁচামালের প্রাচুর্যতা:

                           পশ্চিমবঙ্গ পাট উৎপাদনে ভারতে প্রথম রাজ্য। হুগলি,উত্তর 24 পরগনা, নদিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপন্ন হয়।এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী অসম ও বাংলাদেশের মৃত্তিকা ও জলবায়ু পাট চাষের সহায়ক হওয়ায় প্রচুর পাট উৎপন্ন হয়। ফলে,পাটকলগুলোর প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব হয় না।

3. জলবায়ু:

                 আদ্র জলবায়ুতে পাটের সুতলি ও দড়ি ভালো পাক খায় ফলে,বয়নে সুবিধা হয়। হুগলি তীরবর্তী অঞ্চলে জলবায়ু আদ্র ও উষ্ণ হওয়ায় পাট তন্তু বয়নে ও শুকাতে সুবিধা পাওয়া যায়।

4. শক্তি সম্পদ:

                  এই পাটকলগুলোর প্রয়োজনীয় শক্তি সম্পদ অর্থাৎ কয়লা নিকটবর্তী রাণীগঞ্জ ও ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া কয়লাক্ষেত্র থেকে আমদানি করা হয়। এই কয়লা ক্ষেত্রগুলি 150 থেকে 200 কিলোমিটার মধ্যে অবস্থিত।

5. বিদ্যুৎ:

                এখানকার পাটকলগুলোর জন্য দামোদর অববাহিকার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র,ব্যান্ডেল, সাঁওতালডিহি, দুর্গাপুর,কোলাঘাট,বক্রেশ্বর থেকে তাপবিদ্যুৎ সহজেই পাওয়া যায়।যা এই অঞ্চলে পাট শিল্পের একদেশীভবন ঘটেছে।

6. হুগলি নদী:

                  পাটকল গুলিতে জলের চাহিদা মেটাতে, স্টিমার এবং নৌকায় করে মাঠ থেকে মিলে বা কলে কাঁচা পাট নিয়ে আসতে হুগলি নদী অনেক সাহায্য করে।

7. উন্নত পরিবহন:

                          জি.টি.রোড,কলকাতা-মুম্বাই রোড,NH34, NH35,NH41 দেশের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ স্থাপন করে পাট শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করেছে।

8. মূলধন: 

                প্রথম দিকে ব্রিটিশ শিল্পপতিরা এবং পরবর্তীতে ভারতীয় শিল্পপতি, বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা ও ব্যাংক এই শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান অব্যাহত রেখেছে। ফলে এখানে পাটকল গড়ে উঠতে কোন সমস্যা হয়নি।

9. শ্রমিক:

                 কলকাতা ও তার উপকণ্ঠ থেকে এবং বিহার, ঝাড়খন্ড,ওড়িশা থেকে প্রচুর দক্ষ ও সুলভ শ্রমিক এই শিল্পের উন্নতিতে সহায়ক।

10. চাহিদা:

                 স্থানীয় ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এবং বিদেশে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা থাকায় এখানে পাট শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

11. কলকাতা বন্দরের সুবিধা:

                           কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি এবং বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্পের উন্নতির অন্যতম কারণ।

12. পরিকাঠামোগত সুবিধা:

                        শিল্প গড়ে ওঠার অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত পরিষেবাগুলি এই অঞ্চলে উন্নত হওয়ায় এখানে পাট শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে।

               উপরিউক্ত উপরিউক্ত এইসব সুবিধার জন্য হুগলি শিল্পাঞ্চল এর মধ্যে এত বেশি পরিমাণে পাটকল গড়ে উঠেছে।

  • বর্তমানে এই অঞ্চলের যেসব স্থানে পাটকল আছে সেগুলির মধ্যে। রিষড়া, হাওড়া,বালি, বজবজ, উলুবেড়িয়া, নৈহাটি,শ্রীরামপুর,হালিশহর,বাঁশবেড়িয়া, জগদ্দল,শ্যামনগর,বিড়লাপুর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

Leave a Comment

error: Content is protected !!