স্কেল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী।

স্কেল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

মানচিত্র স্কেল কাকে বলে?

মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব এবং ভূপৃষ্ঠে অনুরূপ দুটি স্থানের প্রকৃত দূরত্বের অনুপাতকে মানচিত্র স্কেল বলে।

মানচিত্র স্কেলকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?

উপস্থাপনা বা প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী স্কেলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – বিবৃতিমূলক স্কেল, ভগ্নাংশসূচক স্কেল ও লৈখিক স্কেল।

বিবৃতিমূলক স্কেল কাকে বলে?

মানচিত্র স্কেলকে যখন কথায় বা ভাষায় প্রকাশ করা হয় তখন তাকে বিবৃতিমূলক স্কেল বলে। বিবৃতিমূলক স্কেলে মানচিত্র দূরত্ব প্রধানত সেন্টিমিটার ইঞ্চি ও ভূমিভাগের দূরত্ব কিলোমিটার মাইল ফার্লং ও গজ ইত্যাদি দৈর্ঘ্যের এককে লেখা হয়।

সুবিধা:

  • এই স্কেল কথায় লেখার কারণে আঁকার জটিলতা এড়ানো যায়।
  • এটি সহজ ও সরল তাই মানচিত্র পাঠে অনভিক্ষ ব্যক্তিরাও বুঝতে পারে।
  • অংক করা বা হিসেব করার ঝামেলা থাকে না।

অসুবিধা:

  • মানচিত্রে যে ভাষায় স্কেল লেখা থাকে সেই ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাভাষী ব্যক্তিত্ব স্কেল পাঠ বা পরিমাপ করতে পারে না।
  • মূল মানচিত্রকে বড় বা ছোট করলে তখন ঐ নতুন মানচিত্রের জন্য পুনরায় স্কেলের হিসাব করতে হয়।
  • এই স্কেলের একক পরিবর্তনের সময় হিসেব করার ঝামেলা বা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন – CGS পদ্ধতি থেকে FPS পদ্ধতিতে পরিবর্তনের অসুবিধা হয়।

ভগ্নাংশসূচক স্কেল কাকে বলে?

মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমিভাগ এর দূরত্বকে যখন ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে ভগ্নাংশসূচক স্কেল বলে। এই স্কেলে সংখ্যাসূচক অনুপাতে প্রকাশ করা হয়। অনুপাত চিহ্নের বাঁদিকের সংখ্যা লবকে (মানচিত্র দূরত্ব) ও ডানদিকের সংখ্যা হরকে (ভূমি দূরত্ব) নির্দেশ করে।

সুবিধা:

  • RF (Representative Fraction) স্কেল একক বিহীন স্কেল হওয়ায় এটির ব্যবহার সর্বজনীন।
  • এই স্কেলের ব্যবহারিক গুরুত্ব বেশি।
  • RF স্কেলকে বিবৃতিমূলক বা রৈখিক স্কেলে রূপান্তর করা সবচেয়ে সহজ।

অসুবিধা:

  • মানচিত্রকে ছোটো বা বড় করা হলে পুনরায় স্কেলের হিসাব করতে হয় তখন জটিলতা দেখা দেয়।
  • অনবিজ্ঞ মানচিত্র পাঠকদের ক্ষেত্রে এই স্কেলের মানচিত্র পাঠ ও পরিমাপ করা অসুবিধাজনক।

লৈখিক স্কেল কাকে বলে?

মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব এবং ভূপৃষ্ঠে ওই দুটি স্থানের দূরত্বের অনুপাতকে যখন লাইন কেটে অর্থাৎ চিত্র এঁকে দেখানো হয় তখন তাকে লৈখিক স্কেল বলে।

সুবিধা:

  • লাইন টেনে স্কেল দেখানো হয় বলে সহজে বোঝা যায়।
  • তাছাড়া মানচিত্র কে ছোটো বা বড় করলে স্কেলটিও আনুপাতিক হারে কমে বা বাড়ে অর্থাৎ স্কেল নির্ভুলই থাকে।

অসুবিধা:

  • গণনা করে স্কেল আঁকা হয় বললে যথেষ্ট সময় লাগে।
  • এই স্কেল বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন – রৈখিক স্কেল, কর্ণীয় স্কেল, তুলনামূলক স্কেল, ভার্নিয়ার স্কেল প্রভৃতি। এত রকম বিভাগের মধ্যে পার্থক্য করতে যথেষ্ট অসুবিধা হয়।

রৈখিক স্কেল কাকে বলে?

যখন কোন স্কেলকে সরল রেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে রৈখিক স্কেল বলে। রৈখিক স্কেলকে দুই ভাবে আঁকা যায়। যথা – সরলরৈখিক ও তুলনামূলক রৈখিক পদ্ধতিতে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই স্কিলকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – মুখ্য ভাগ ও গৌণ ভাগ।
  • পরিমিত সরলরেখাকে যখন কতগুলি সুনির্দিষ্ট সমান অংশে ভাগ করা হয় তখন ওই এক একটি অংশকে মুখ্য ভাগ বলে।
  • একটি মুখ্য ভাগকে পুনরায় কতগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হলে তাদের গৌণ ভাগ বলে।
  • মুখ্য ভাগগুলির বাঁদিকের সবশেষ ভাগটিকে গৌণ ভাগে ভাগ করা হয়।

সুবিধা:

রৈখিক স্কেলের মূল মানচিত্র কে ছোটো বা বড় করার সময় মানচিত্রে অঙ্কিত স্কেলটির দৈর্ঘ্য আনুপাতিক হারে ছোটো বা বড় হয়ে যায়।

অসুবিধা:

রৈখিক স্কেলের একমাত্র অসুবিধা হল কোনো মানচিত্রকে বড় বা ছোটো করলে RF বা বিবৃতিমূলক স্কেলে যে পরিবর্তন ঘটে তাকে পুনরায় নতুন করে হিসাব করতে হয়।

তুলনামূলক স্কেল কাকে বলে?

দুটি ভিন্ন এককের মধ্যে তুলনা করতে যে স্কেল আঁকা হয়, তার নাম তুলনামূলক স্কেল। তুলনামূলক সেরো আবার কয়েক প্রকার হয়।

কর্ণীয় বা ডায়াগোনাল স্কেল কাকে বলে?

মানচিত্র ও ভূমিভাগের দূরত্বের অনুপাতকে একাধিক কর্ণের মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার নাম ডায়াগনাল স্কেল। এখানে কর্ণ বলতে একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা বোঝায় যেটি চতুর্ভুজের দুই বিপরীত কোণকে যুক্ত করে।

ভার্নিয়ার স্কেল কাকে বলে?

মূল স্কেলের পাশে থাকা একটি ক্ষুদ্র স্কেলের সাহায্যে যখন অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মানেরও পরিমাপ করা যায়, তখন তার নাম ভার্নিয়ার স্কেল। এখানে ক্ষুদ্র স্কেলটি সুবিধা মত সরানো যায়।

স্কেলের ব্যবহার ও গুরুত্ব লেখো।

  1. ভূগোলক তথা মানচিত্র অভিক্ষেপ অঙ্কনে স্কেল ব্যবহৃত হয়।
  2. দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল ও আয়তন পরিমাপে স্কেলের প্রয়োজন অপরিসীম।
  3. রাশিতথ্যতে বিভিন্ন মানচিত্র (স্তম্ভ চিত্র, পাইচিত্র, রেখা লেখচিত্র ইত্যাদি) কঙ্কন এর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে স্কেলের বিশেষ প্রয়োজন
  4. আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান পরিমাপে স্কেলের গুরুত্ব অধিক।
  5. জরিপ কার্য সম্পাদনে এই স্কেলের ব্যবহার করা হয়।
  6. স্কেল ব্যতি রেখে কোনো নকশা মানচিত্র আখ্যা পায় না।
  7. মানচিত্র নিয়ে ভ্রমণরত ব্যক্তি তার গন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে সে বিষয়ে আগত হবে স্কেলের মাধ্যমে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!