আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের ব্যাখ্যা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
Read- সামুদ্রিক মৎস্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

ভূমিকা:
আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এই মহাসাগরের আকৃতি অনেকটা ‘S’ অক্ষরের মত অক্ষরের মতো। এই মহাসাগরের উত্তরে রয়েছে সুমেরু মহাসাগ র ও দক্ষিণে রয়েছে কুমির মহাসাগর। এই মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হল –
1. উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত:
নিরক্ষরেখার উত্তরে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে এই স্রোতের সৃষ্টি হয়। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পেয়ে এই স্রোতটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। যথা –
a. একটি শাখা ক্যারিবিয়ান সাগরের মধ্যে দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে।
b. অন্য শাখাটি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়।
2. দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত:
পৃথিবীর আবর্তন গতি ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষরেখার দক্ষিনে এই স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। যথা –
a. একটি শাখা উত্তর ও উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মেশে।
b. অপর শাখা ব্রাজিল উপকূল দিয়ে দক্ষিণে ব্রাজিল স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
3. ব্রাজিল স্রোত:
বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার সেন্ট ব্লক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। দক্ষিণ শাখাটি ব্রাজিল উপকূলের পাশ দিয়ে ব্রাজিল স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় এবং কুমেরু স্রোতের সাথে মিলিত হয়।
4. কুমেরু স্রোত:
পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে কুমেরু মহাসাগরকে ঘিরে শীতল কুমেরু স্রোত পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এই শ্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে গেছে।
5. ফকল্যান্ড স্রোত:
কুমেরু স্রোতের প্রথম শাখাটি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে ফকল্যান্ড স্রোত নামে ক্রমশ উত্তর দিকে এগিয়ে যায়।
এই স্রোত আন্টার্কটিক মহাসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে হিমশৈল দক্ষিণ আমেরিকা উপকূলের দিকে বয়ে নিয়ে যায়, ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে।
6. বেঙ্গুয়েলা স্রোত:
শীতল কুমেরু স্রোতের দ্বিতীয় শাখাটি আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ থাকে।
7. উপসাগরীয় স্রোত:
নিরক্ষরেখার উত্তরে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত শাখা ক্যারিবিয়ান সাগর অতিক্রম করে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে এবং ফ্লোরিডা প্রণালীর মধ্য দিয়ে উত্তর আটলান্টিকের মধ্যভাগে পৌঁছায় এবং উপসাগরীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
উত্তর আটলান্টিকের মধ্যভাগে পশ্চিমা বায়ু ও পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে এই স্রোত তিনটি শাখায় ভাগ হয়। যথা –
a. উত্তর আটলান্টিক স্রোত:
এটি উপসাগরীয় স্রোতের প্রধান শাখা। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম ইউরোপের পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নরওয়ের উত্তরে গিয়ে শেষ হয়।
b. ক্যানারি স্রোত:
এই শাখাটি দক্ষিণের পোর্তুগাল উপকূল দিয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়।
c. ইরমিঙ্গার স্রোত:
এই শাখাটি গ্ৰীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়।
প্রভাব:
1. উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের উপকূলের বন্দরগুলি বরফ মুক্ত থাকে।
2. উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয়।।
3. আটলান্টিক মহাসাগরে ক্যানারি স্রোতের প্রভাবে শৈবাল সাগরের সৃষ্টি হয়েছে।
8. শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত:
সুমেরু মহাসাগর থেকে দুটি শীতল স্রোত গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিনে বাহিত হয় এবং ল্যাব্রাডর দ্বীপের নিকট মিলিত হয়ে ল্যাব্রাডর স্রোতের সৃষ্টি করেছে। এই স্রোত আমেরিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়।
বৈশিষ্ট্য:
1. নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের নিকট উষ্ণ উপসাগরীয় ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত পাশাপাশি প্রবাহিত হয় এবং একটি সুস্পষ্ট সীমারেখার সৃষ্টি হয়, একে হিমপ্রাচীর বলে।
2. দুই বিপরীতধর্মী স্রোতের প্রভাবে এখানে প্রায়শই কুয়াশা ও ঝড় হয়।
3. ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে আসা হিমশৈল এখানে গলে যায় বলে হিমশৈল বাহিত নুড়ি, কাদা ইত্যাদি সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করেছে। যেমন – গ্র্যান্ড ব্যাংক।
4. এই স্রোত শীতল ও ভারী হওয়ায় ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে উপসাগরীয় স্রোতের নীচে ডুবে যায়।
Read- টীকা লেখ – 1. সামাজিক বনসৃজন ও 2. কৃষি বনসৃজন
This post was updated on 2023-02-22 17:57:02.