পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের বা পার্বত্য অঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের বা মধ্যবঙ্গের নদনদীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের বা পার্বত্য অঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের বা মধ্যবঙ্গের নদনদীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

উত্তরাঞ্চল বা পার্বত্য অঞ্চলের নদনদীসমূহ:

এই পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে অনেকগুলি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এখানকার নদীগুলি হিমালয়ের বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জল থাকে এবং অত্যন্ত খরস্রোতা হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উপযোগী। এখানকার বিভিন্ন নদ নদীর মধ্যে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। নীচে এই নদীগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

1. তিস্তা:

দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সর্বপ্রধান নদী তিস্তা। সিকিমের জেমু হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে সিকিম ও পরে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলাকে দুভাগ করে দক্ষিণে জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

বর্ষাকালে এই নদীতে ভয়ানক বন্যা হয় বলে একে ত্রাসের নদী বলে।

উপনদী:

বড়ো রঙ্গিত, রিয়াং, রংপো, দিল্লি ইত্যাদি নদীগুলি হল তিস্তার উপনদী।

2. তোর্সা:

চীনের অন্তর্গত তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা থেকে উৎপন্ন হয়ে তোর্সা ভুটানে আমুচু নামে প্রবাহিত হয়েছে। এটি উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা অতিক্রম করে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। কালজানি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই নদী বাংলাদেশে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

উপনদী:

তোর্সার দুটি উপনদী হল – কালজানি ও হলং।

3. মহানন্দা:

দার্জিলিং হিমালয়ের মহলধিরাম পর্বতের পাগলাঝোড়া প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে দক্ষিণে ও তারপর দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বিহারের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহের পর এটি পশ্চিমবঙ্গের মালদায় প্রবেশ করেছে এবং শেষে বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে মিলিত হয়েছে।

উপনদী:

মহানন্দার প্রধান উপনদী হল – বালাসন ও মেচি।

4. জলঢাকা:

সিকিম ভুটান সীমান্তবর্তী পার্বত্য অঞ্চলের বিদাং হ্রদ থেকে জলঢাকা নদী উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে।

উপনদী:

জলঢাকর উপনদীগুলি হল – নকশাখোলা, মুজনাই, ডায়না, দুদুয়া, বিরুখোলা, বিন্দুখোলা প্রভৃতি।

নদীগুলির বৈশিষ্ট্য:

  1. এই অঞ্চলের নদীগুলির বেশিরভাগই হিমবাহ বা প্রস্রবণ থেকে সৃষ্ট।
  2. নদীগুলি মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব বাহিনী।
  3. নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট এবং নিত্যবহ।
  4. নদী গুলি অত্যন্ত খরস্রোতা বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
  5. নদীগুলির খাত খুব গভীর এবং ‘V’ আকৃতির ন্যায়।
  6. নদী গুলির বেশিরভাগই বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপনদী।
  7. নদীগুলি বন্যাপ্রবণ।
  8. এখানকার নদীগুলি কোনোটাই সরাসরি সমুদ্রে মেশেনি বলে নদীগুলিতে জোয়ার ভাটা হয় না।

মধ্যাঞ্চলের বা মধ্যবঙ্গের নদীসমূহ:

১. গঙ্গা নদী (520 কিমি):

গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদী পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী। যদিও পশ্চিমবঙ্গের খুব সামান্য অংশ দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার মিঠিপুর গ্রাম থেকে গঙ্গা দুটি শাখায় ভাগ হয়ে একটি শাখা পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে এবং অন্য শাখাটি ভাগেরথী- হুগলি নাম নিয়ে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

2. ভাগীরথী-হুগলী:

পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গার বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চলের প্রধান নদী ভাগীরথী হুগলি। গঙ্গার এই শাখা নদীটি নদীয়ার স্বরূপগঞ্জ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত হুগলি নদী নামে পরিচিত এবং বাকি অংশ ভাগিরথী-হুগলি নামে পরিচিত।

এই অঞ্চলের অন্যান্য নদীগুলিকে a. ভাগীরথী-হুগলি নদীর ডান তীরের উপনদী এবং b. ভাগীরথী হুগলি নদীর বামদিকের উপনদী এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

a. ভাগীরথী-হুগলি নদীর ডানতীরের উপনদী:

ভাগীরথী-হুগলি নদীর ডান তীরের বা পশ্চিম তীরের উপনদী গুলি হল – দামোদর, রূপনারায়ণ, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দারকেশ্বর, হলদি, কংসাবতী, ব্রাহ্মণী, শিলাবতী। কংসাবতী ও কেলেঘাই নদীর মিলিত প্রবাহ হলদি নামে এবং শিলাবতী ও দারকেশ্বর নদীর মিলিত প্রবাহ রূপনারায়ণ নদ নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য:

  1. বর্ষার জলে পুষ্ট।
  2. গ্রীষ্মকালে নদীতে প্রায় জল থাকে না বা শুকিয়ে যায়।
  3. বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলপ্রবাহ প্রায়ই বন্যা ঘটায়।

b. ভাগীরথী-হুগলি নদীর বামতীরের উপনদী:

ভাগীরথী-হুগলি নদীর বামতীরের বা পূর্বতীরের প্রধান উপনদী গুলি হল – জলঙ্গি ও চূর্ণী। এছাড়া কিছু শাখা নদী, যেমন – পদ্মার শাখা নদী মাথাভাঙ্গা ও মাথাভাঙ্গার শাখা নদী কালিন্দী, ইছামতি এবং ভাগীরথীর শাখা নদী বিদ্যাধরী এখানে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া মাতলা, পিয়ালী নদীর কিছু অংশ এখানে প্রবাহিত।

বৈশিষ্ট্য:

  1. প্রধানত লবণাক্ত জলে পুষ্ট।
  2. পলিজমে অধিকাংশ নদীই মৃতপ্রায় বা মজে গেছে।
  3. নদী উপত্যকার গভীরতা কম বলে বর্ষাকালে বন্যা হয়।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্ন

জলকে নীল সোনা বা Blue Gold বলা হয় কেন?

জল ছাড়া জীবন সম্ভব নয়। জীবনযাত্রার যথাযথ মান বজায় রাখার জন্য জল অপরিহার্য। একজন মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলি পুর্ণ করার জন্য দিনে প্রায় ৫০ লিটার জলের প্রয়োজন। আর এই জল নামক অমূল্য পদার্থটি দিনে দিনে ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে, সে কথা এখন সব দেশেরই আলোচ্য বিষয়। শুধু তৃষ্ণা নয় সভ্যতার অগ্রগতির প্রতিটি ধাপেই জল অপরিহার্য। আর এইসব কারণে জলকে নীল সোনা বলা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!