বন্যা সৃষ্টির কারণ, বন্যার ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় এবং ভারতের বন্যা প্রবণ অঞ্চল গুলির নাম এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
বন্যা:
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞানুযায়ী, কোনো স্থানে স্বাভাবিক গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় 125% এর বেশি বৃষ্টিপাত হলে, তাকে বন্যা বলা হয়। বন্যার অর্থ জল জমা নয়। অতি বর্ষণ বা অন্য কারনে নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জলমগ্ন করলে তাকে বন্যা বলে। যেমন – উত্তর ভারতের গঙ্গা নদীর অববাহিকায় প্রতিবছর বন্যা হয়।
বন্যা সৃষ্টির কারণ:
বন্যার সৃষ্টির কারণগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –
A. প্রাকৃতিক কারণ:
1. দীর্ঘস্থায়ী অতিবর্ষণ:
অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের ফলে নদীতে জলের পরিমাণ অত্যাধিক হয়। কিন্তু নদীতে জল ধারণ ক্ষমতা নির্দিষ্ট হওয়ায় নদী অববাহিকায় বন্যার সৃষ্টি হয়।
2. সংকীর্ণ ও মজে যাওয়া নদীখাত:
মজে যাওয়া নদীখাতগুলি আকস্মিক প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে অতিরিক্ত জল বহনে সক্ষম হয় না। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
3. নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা:
ভূমিকম্প ও অন্যান্য আরো প্রাকৃতিক কারণে ধস নেমে নদীতে জলের স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হলে বন্যা হতে পারে।
4. সাইক্লোন:
মুষলধারে বৃষ্টি এবং নিম্নচাপ জনিত জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী নীচু অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
5. ভূমিক্ষয়:
নদীর প্রতিনিয়ত ক্ষয়সাধন করার ফলে নদীর প্রবাহপথে নুড়ি, বালি, পাথর, পলি ইত্যাদি জমা হওয়ায় নদীর জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ও বন্যার সৃষ্টি হয়।
B. মানবীয় কারণ:
1. বাঁধ ভাঙার কারণে:
নদীর প্রবল জলরাশির চাপে বাঁধ ভেঙে গিয়ে নদীর পার্শ্ববর্তী বসতি ও কৃষি ক্ষেত্রগুলি বন্যা কবলিত হয়ে পড়তে পারে।
2. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা:
বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সারাবছরব্যাপী জলসেচের সুবিধার জন্য এবং মৎস্য চাষ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে বাঁধ দিয়ে জল ধরে রাখা হয় কিন্তু বর্ষার সময় বাঁধের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত জল নদীতে ছাড়ার জন্য বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বন্যার ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়:
- বন্যার ফলে মাঠের ফসল জলে ডুবে নষ্ট হওয়ায় মানুষ ও পশুর খাদ্যের অভাব হয়।
- বহু বন্য ও গৃহপালিত জীবজন্তু বন্যার জলে ভেসে যায় ও মারা যায়।
- মানুষের ঘরবাড়ি, সম্পদ বন্যার জলে ভেসে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
- বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
- জীবজন্তুর দেহাবশেষ পচে ও নানা বর্জ্য পদার্থ মিশে বন্যার জল চরমভাবে দূষিত হয়।
- ডায়রিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ ও ম্যালেরিয়ার মতো মহামারি দেখা দেয়।
- সমুদ্রের লবণাক্ত জল দ্বারা প্লাবিত অঞ্চলের মাটির লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
- উপকূল এলাকায় মাছ ধরার সরঞ্জাম ও নৌকা হারিয়ে যায়।
ভারতের বন্যা প্রবণ অঞ্চলগুলির নাম:
সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন এর মতে ভারতের প্রায় ১১ শতাংশ এলাকা বন্যা প্রবণ। এরমধ্যে প্রধান পাঁচটি বন্যা প্রধান এলাকা হল –
- উপ হিমালয় অঞ্চল এবং গঙ্গার সমভূমি (উত্তরপ্রদেশ, বিহারের গোমতি, ঘর্ঘরা, কোশী, যমুনা, চম্বল প্রভৃতি নদী সংলগ্ন এলাকা)।
- ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা(অসমের তেজপুর, ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটি এলাকা)।
- পাঞ্জাব সমভূমি।
- মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী বদ্বীপ সমভূমি।
- নিম্ন নর্মদা-তাপ্তি-মাহি উপত্যকা।